হঠাৎ করে ফেইসবুক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিতে হতবাক হয়েছি। নিশ্চয়ই আমার মতো অনেকের ভেতরে এই একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এক যুবকের কাণ্ডকে। মাহবুব আলম রডিন নামের যুবকটি ফেইসবুকে জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসমেত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম এবং ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার চালাচ্ছিল। অবশ্য র্যাব যুবকটিকে আটক করেছে এবং সে স্বীকার করেছে, নেহাত ফান করার জন্যই সে এ কাজ করেছিল এবং এ জন্য সে অনুতপ্ত।
আমি হতবাক হয়েছি এই কারণে যে, একটি যুবকের অপকর্মের অপরাধে হুট করে ফেইসবুকই বন্ধ করে দিতে হলো? শাস্তি দেওয়া হলো দেশের প্রায় ৯ লাখ ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে! অদ্ভুত তুঘলকি কারবার! র্যাবের কোনো কোনো লোক তো ডাকাতি করেছিল বলে কাগজে খবর বেরিয়েছে মাঝে মাঝে এবং তাদের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে সে সময়। এই তো সেদিন সাতক্ষীরায় র্যাবের কতিপয় সদস্য এক রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ীর বাসায় অস্ত্র রেখে তাঁকে ধরতে গিয়েছিল; কিন্তু গ্রামবাসীর বাধার মুখে পারেনি। এ কারণে কি পুরো র্যাবকে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে? মোবাইল ফোনে হুমকি তো মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় এবং পানও কেউ কেউ। তার জন্য কি মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে? ইন্টারনেটেও তো অনেক সময় অনেক কিছুই আসতে পারে, যা কারো কারো জন্য বিব্রতকর। তার জন্য কি ইন্টারনেট সার্ভিস তুলে দিতে হবে?
কথা হচ্ছিল লেখক, বিজ্ঞানী স্নেহভাজন জাফর ইকবালের সঙ্গে। তিনিও কথা বললেন এই একইভাবে। বললেন কারা করাচ্ছে এসব? কারা বারবার এ ধরনের অদ্ভুত অদ্ভুত সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি করে চাপিয়ে দিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে? ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। তাদের বিক্ষুব্ধ করানোর কাজটি ভেতর থেকে করছে কারা? ওরা তো জানে ফেইসবুক বন্ধ করে দিলেও বিকল্প পথ থেকেই যায়। বরং উচিত ছিল এ ধরনের অপকর্ম রোধ করার জন্য নতুন প্রজন্মের মেধা এবং প্রযুক্তিবিদ্যাকে ব্যবহার করা।
সরকারের এবং সরকারি দলের কেউ কেউ যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন যে, এ ধরনের বিকৃত প্রচারণায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একটি অসহ্য শব্দ এই ভাবমূর্তি! যে দল যখনই ক্ষমতায় যায় তখনই তারা অতিমাত্রা ভাবমূর্তি-সচেতন হয়ে ওঠে এবং ভাবমূর্তি নামক বায়বীয় ধারণাটি সংরক্ষণের জন্য কোমর বেঁধে চড়াও হয় প্রতিপক্ষের ওপর। আর এক শ্রেণীর জোগানদাতা সব সময় থাকে, যারা সব সময় এর ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী-সরকারবিরোধী গন্ধ শুঁকতে থাকে। এই তো তিন দিন আগে পাকিস্তানে ফেইসবুক বন্ধ করা হলো ধর্মীয় কারণে। আর তার পরপরই বাংলাদেশে ভিন্ন অজুহাতে। আশ্চর্যজনকভাবে এবং অতি সূক্ষ্ম কৌশলে সেই কাজটিই করা হচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মকে বিরক্ত করবে। কারো কারো যুক্তি, 'যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো স্পর্শকাতর বিষয় বাধাগ্রস্ত করতে ফেইসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে।' যাঁরা এই যুক্তি উপস্থাপন করেন তাঁরা বোধহয় জানেনই না যে, ফেইসবুক ব্যবহারকারী নতুন প্রজন্মের শতকরা ৯৫ ভাগই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তাঁরা বোধহয় এও জানেন না যে, দীর্ঘদিন পর এবার এই প্রথমবারের মতো বিশাল তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে উচ্চকিত হয়েছিল। দুঃখ হয় এই ভেবে যে, যাঁরা এ ধরনের তড়িঘড়ি ঘটনাটি ঘটালেন তাঁরা হয় নতুন প্রজন্মকে বোঝেন না, না হয় প্রযুক্তি বোঝেন না কিংবা তাঁরা এমন ধরনের কাজই করেন যাতে উল্লসিত হয়ে আমিনী সাহেব বলতে পারেন, 'সরকার একটি ভালো কাজ করেছে। আমি খুশি।'
এ ঘটনা গোটা পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কোটি কোটি মানুষের কাছে কী বার্তা পাঠাল? কোন বাংলাদেশকে দেখল পৃথিবী? এসব করলে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



