বিকালের আলো তখন সমুদ্রের ধোঁয়া আর রক্তের উপর পড়ছিল, এক অদ্ভুত স্তব্ধতা নেমে এসেছিল। লেভিয়াথানের স্টার্ন এখনও ধুঁকছে, ধোঁয়া উঠছে ডেকের ছিন্ন অংশ থেকে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফোম-ক্যানন ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু প্ল্যাটফর্মের একটি অংশ পুরোপুরি ধসে পড়েছে। হেলিকপ্টারগুলো ছুটে চলেছে, আহত নাবিকদের স্ট্রেচারে তুলে নিচ্ছে। অনেকের শরীর রক্তাক্ত, কেউ অচেতন, কেউ বা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিন্তু আরও অনেককে আর তোলা যাচ্ছে না—তারা সাগরের নিচে, ধ্বংসস্তূপের নীচে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
ডেস্ট্রয়ার শামিরের ডেকে নেমে এসেছে নিঃশব্দ কান্না। শারীরিকভাবে বেঁচে থাকা নাবিকরাও চুপ করে বসে আছে, তাদের চোখ ফাঁকা। আগুনে পোড়া সঙ্গীর ছিন্ন ইউনিফর্ম, রক্তে ভেজা ডেক—সবকিছু যেন এক বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন। একটি ফোল্ডিং স্ট্রেচারে রাখা হয়েছে ক্যাপ্টেন গুরিয়নের মৃতদেহ। তার চোখ বন্ধ, কিন্তু মুখে একটি স্থির শোকের ছাপ। পাশেই শামিরের কমিউনিকেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট জোহান কাঁদছে—একজন সৈনিকের মতো নয়, একজন বন্ধুর মতো।
নাবিকদের পরিবারে শোকের ঢেউ নেমে আসে। এক বৃদ্ধা যিনি তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন, কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ও শুধু বলেছিল, ‘মা, দুই সপ্তাহ পর ফিরবো।’ আমার বাচ্চাটা ফিরলো না…” আরেকটি দৃশ্যে এক কিশোরী বসে আছে ছবি হাতে—ছবির পাশে লেখা "Dad, come home safe." কিন্তু সেই বাড়ি আর আসেনি কেউ। কেউ কেউ চোখে জল নিয়ে দরজা খুলে দৌড়ে যাচ্ছে হাইফা নৌ ঘাঁটির দিকে, বিশ্বাস করতে পারছে না সংবাদটি সত্য।
CNN-এর স্ক্রলে ভেসে উঠল—"ইসরায়েলি নেভির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ!" আল জাজিরা রিপোর্ট করল—"লোহিত সাগরে হামলা: গোয়েন্দা ব্যর্থতা নাকি চতুর কৌশল?" BBC-র হেডলাইন বলল—"ঘাতক হামলার পর ইসরায়েলের তিন দিনের জাতীয় শোক।" Sky News-এর স্ক্রলে দেখা গেল—"লোহিত সাগরে হামলায় বিশ্বজুড়ে শোক, বহু নিহত ও নিখোঁজ।"
CNN-এর নিউজরুমে সকাল সাতটার লাইভ সেশনে অ্যাঙ্কর রেবেকা স্টেইন খবর পড়ছিলেন, হঠাৎই থেমে গেলেন। তার চোখে জল, গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না—"...আমি দুঃখিত। ওই নাবিকদের একজন আমার কাজিন ছিল। আমি... আমি পাঁচ মিনিট আগেই জানলাম।" তিনি আর কথা বলতে পারলেন না। ক্যামেরা ধীরে ধীরে জুম আউট করল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি ঘোষণা দিল—সারা দেশে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে। তেল আবিব, হাইফা, জেরুজালেমে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত। স্কুলে, সিনাগগে, রাস্তায়—সবাই শুধু একটাই কথা বলছিল: "এটা যুদ্ধ নয়, এটা একটা কাপুরুষের মত হামলা।"
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া আসতে লাগল একের পর এক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্ট্যানলি হ্যারিসন বললেন, "আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি। এটা শুধু একটা হামলা নয়—একটা ট্র্যাজেডি। আমরা সাহায্য করব, আর আমরা জবাব দেব।" ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বললেন, "সমুদ্রের নিচে এতটা ঠাণ্ডা মাথার নৃশংসতা বিনা জবাবে যেতে দেওয়া যাবে না।" ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বললেন, "নাবিকদের ওপর এই হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক চ্যালেঞ্জ।" জার্মান চ্যান্সেলর বললেন, "নৌ নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা শোকস্তব্ধ।"
রাত যত গভীর হচ্ছিল, লেভিয়াথান ও শামিরের আহত ও নিহতদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছিল। ইসরায়েলের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল পরিবারগুলোর কান্না, শেষ ফোনালাপের রেকর্ডিং, ফোটোতে আটকে থাকা হাসিমুখ—যারা আজ আর নেই। হাইফার নৌ ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে শামিরের এক নাবিক তার হাতে চেপে ধরেছিল এক সহকর্মীর ছিঁড়ে যাওয়া নেমপ্লেট। সে কাঁদছিল না। তার চোখে শুধু একটাই প্রতিজ্ঞা—"আর কখনো নয়... never again."
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




