somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদার শাসন উত্তম হবে, গ্যারান্টি কোথায়? ঃপীর হাবিবুর রহমান

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অসহিষ্ণু, অস্থির, অশান্ত, রাজনীতিপীড়িত, মূল্যবোধহীন সমাজে রাজনীতি নিয়ে লেখা মানেই হয় কোথাও তালি, কোথাও গালি খাওয়া। দুই নয়নেই যারা দেখেন, দলকানারা তাদের সুবিধাবাদী বলেন। নির্মোহ সত্য সইবার মতো গায়ের চামড়া কারও নেই। ফুসকা পড়ে যেখানে, সেখানে। রাজনীতিতে আদর্শহীন পথ চলবেন, গণমুখী চরিত্র হারাবেন, সেটি বলা যাবে না। বলতে গেলেই আক্রোশে ফেটে পড়বেন। মঞ্চে, মাইক্রোফোনে যা বলেন, হৃদয় দিয়ে তা বিশ্বাস করেন না। যা বিশ্বাস করেন, তা বলেন না। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে গেলেই কলজে পুড়ে যায় তাদের। পুড়ে পুড়ে তামা হয় তাদের মুখায়ব। তাদের চেহারা দেখে আন্ধা, উন্মাদগণ আরও বেশি জোরে আর্তনাদ করে ওঠেন। গাল দেন, অশ্লীল, গুয়েবলসিয়ো মিথ্যাচারের পথ নেন।

তথ্যপ্রযুক্তির এই বিপ্লবের যুগে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা প্রবর্তন করে মুক্তচিন্তার মানুষের হাত বেঁধে দিয়েছেন। বাতিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশার চাদরে মুড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যাদের জন্য এই আইন প্রবর্তন করেছেন বলে তারা জিগির করছেন তাদের ঠেকাতে পারছেন না। দেশের ভিতরে বাইরে থেকে তারা মানসিক বিকৃতির পথে চরিত্র হনন ও মিথ্যাচারের ধারা অব্যাহত রেখেছেন নাম-পরিচয়হীন নিউজপোর্টাল খুলে।

এক কথা লিখতে গেলে আরেক কথা এসে যায়। এই লেখা শুরুর আগ মুহূর্তে সাংবাদিক সুভাষ চন্দ্র বাদলের ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তে গিয়ে মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। দীর্ঘদিন দেখা নেই বিনয়ী, হাসিমুখের, পেশাদার সংবাদকর্মী প্রদীপ সিংহ রায়ের। ইংরেজি জানা, পরিশ্রমী এই রিপোর্টার দীর্ঘদিন প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন। একজন পেশাদার রিপোর্টার হিসেবে শেষ পর্যন্ত বাসসের চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন। সেই চাকরিটি চলে যাওয়ায় দুই মাসের বাড়িভাড়া বকেয়া পড়েছিল। জীবনের পড়ন্তবেলায় ঢাকায় টিকতে না পেরে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। সরকারের এত রাজনৈতিক নিয়োগ, সেখানে তার ভাগ্যের সিঁকে ছিঁড়েনি। এত বড় বড় করপোরেট হাউস কোথাও তার জায়গা হয়নি। অথচ চোখের সামনে তিনি দেখে গেলেন, রাতারাতি তার সঙ্গে পায়ে পায়ে হাঁটা কত সহকর্মী, অগ্রজ, অনুজ অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

মাঝেমধ্যে আমারও ইচ্ছে করে, এই অমানবিক হৃদয়হীন মৃত নগরী ছেড়ে আমার জল-জোছনার হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জ চলে যাই। জীবিকার টানে পড়ে থাকা এই নগরীতে আমারও দম বন্ধ হয়ে আসে। কবিগুরুর ‘সত্য সে যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম আমি। কারণ সত্য করে না বঞ্চনা’ হৃদয়ের তন্ত্রীতে লালন করলেও মাঝেমধ্যে বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, ‘অমর কাব্য লিখিও বন্ধু, তোমরা যারা আছো সুখে, দেখিয়া-শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই মুখে যাহা আসে তাহাই কহি। ’

করপোরেট চাকরি করব না এমন চিন্তাধারা থেকে অনুজপ্রতিম সৈয়দ সারওয়ার প্রিন্সকে সঙ্গে নিয়ে দেড় বছর আগে পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজ ঘিরে অনলাইন সাংবাদিকতার দুয়ার খুলেছিলাম। করপোরেট সাংবাদিকতা যত কঠিন, করপোরেট সহযোগিতা ছাড়া স্বাধীনভাবে টিকে থাকাও আরও কত কঠিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এই অনলাইনের শুরু থেকে মানসিক সমর্থন, সহযোগিতা অনেকেই দিয়েছেন। উপদেষ্টা হিসেবে বন্ধুবরেষু সেলিম চৌধুরী, এ বি এম জাকিরুল হক টিটন, রোকেয়া প্রাচী ও শাকুর মজিদের নাম নিতেই হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক আমাদের অতি আপনজন খুজিস্তা নূর ই নাহরীন মুন্নি শেষ পর্যন্ত এই নিউজপোর্টালকে টিকিয়ে রাখতে মেধা, শ্রমসহ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, কৃতজ্ঞচিত্তে তা বলতেই হয়। একজন আত্মবিশ্বাসী, আত্মমর্যাদাশীল, সাহসী নারী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজ নিয়ে তিনি মডার্ন সিকিউরিটিজ হাউসই প্রতিষ্ঠা করেননি, ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। টেলিভিশন টকশো, উপস্থাপনা থেকে আলোচনায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে পুঁজিবাজার শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার জন্য দৃঢ়চিত্তে কথা বলছেন। প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য রেখে খোলামনে দুহাতে নিয়মিত লিখছেন। পড়াশোনা জানা এই বিদুষী রমণী পাশে না দাঁড়ালে পূর্বপশ্চিমনিউজ পোর্টাল টিকিয়ে রাখা কঠিন হতো। তার প্রতি অনেকের মতো আমার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিঃশর্ত।

যাই হোক, ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে রাজনীতির প্রসঙ্গই নিয়ে আসতে চাই। পূর্বপশ্চিমের সম্পাদক হিসেবে মুন্নি একটি কলাম লিখেছিলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সেই বিভীষিকাময় অপশাসন নয়, শেখ হাসিনার উন্নয়নের শাসন চাই। ’ এই লেখায় একদিকে বিএনপি-জামায়াত জামানার অন্ধকার চিত্র যেমন উঠে এসেছে, তেমনি শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রাপথ তুলে এনেছেন। কিন্তু যারা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে, সাফল্যকে ধূসর করে দিচ্ছেন, শাসনকালকে বিতর্কিত করছেন, তাদের আর দলে বা সংসদে দেখতে চান না এই আকুতিও ছিল। এতে একটি রাজনৈতিক শক্তির অন্ধ সমর্থকরা আক্রোশে ফেটে পড়লেন। নির্মোহ চিত্তে হৃদয়, মন খুলে নানা মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তায় কিংবা বিভিন্ন এলাকায় চায়ের আড্ডায় যখন রাজনীতি নিয়ে তুফান ওঠে; তখন একপক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে যেরকম মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন, বিরোধী দলের ওপর দমন নির্যাতন, মামলা এবং গুম-খুন ও শাসকদলের উন্নাসিকতার চেহারা তুলে ধরেন; তেমনি আরেকপক্ষ বলতে ভুলেন না বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে কীভাবে পূর্ণিমা ধর্ষিত হয়েছিল, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছিল, কীভাবে কর্মীরা নিহত হয়েছিল, পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছিল, কেমন করে বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্যারালাল হাওয়া ভবনের উন্মত্ত রূপ দেখেছিল বাংলাদেশ, কেমন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, নাটোরের মমতাজ হোসেনসহ দলের প্রভাবশালী এমপি নেতা-কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, কেমন করে বাগমারা রীতিমতো স্বাধীন করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বাংলা ভাইদের মধ্যযুগীয় শাসন কায়েম হয়েছিল, কেমন করে একই সময়ে ৬৩ জেলায় পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রকাশ্য দিবালোকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একুশের গ্রেনেড হামলা ছিল বিশ্বাস, আস্থা, সহনশীলতা ও সৌজন্যের রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকে দেওয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিছু দিন আগে রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শন ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করতে গিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সব প্রতিষ্ঠানকে দলবাজির ঊর্ধ্বে রাখার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার চমৎকারিত্ব থাকলেও বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষের কাছে নেই। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার দিন তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে এক কাপড়ে ঘর ছাড়তে হবে। অর্থাৎ বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসার ছোবলে সুদে আসলে সব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার উদার নীতির সেই দর্শন এখানেই তিরোহিত হয়ে যায়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একদিন ক্ষমতায় না থাকলে দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। এ কথাগুলো প্রতিহিংসার রাজনীতির ধারাবাহিকতার চিত্র তুলে আনে আতঙ্কগ্রস্ত নাগরিক মনে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন হয়েছে, তেমনি দুর্নীতির মহোৎসবও হয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে ব্যাকিং খাত যেভাবে লুটেরাদের অভয়ারণ্য হয়েছে, যেভাবে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে; তার কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যার এত সাফল্যের পরও মানুষ হৃদয়নিঃসৃতভাবে সেই হারে প্রশংসা করছে না।

সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন সব মহলের প্রত্যাশা, সংবিধান, আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা যেমন মানুষের চাওয়া, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দান মানুষের আশা; তেমনি ভয় আর আতঙ্কেরও শেষ নেই। শেষ নেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার চেয়ে খালেদা জিয়ার শাসন উত্তম হবে এ গ্যারান্টি কেউ পাচ্ছেন না। একপক্ষ ক্ষমতা থেকে বিদায় মানে, আরেকপক্ষের আগমন। সেই পক্ষের আগমন মানে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়া। ক্ষমতার নেশা, রক্তের নেশা, অর্থবিত্তের নেশা। আমাদের গোটা রাজনীতি ও সমাজ নেশাখোরদের আগ্রাসনে পতিত। কেউ রাজনৈতিক ক্ষমতার নেশায়, কেউ প্রশাসনিক ক্ষমতার নেশায়, কেউবা সামাজিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নেশায়, আবার কেউবা অর্থবিত্ত, অগাধ সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্যের নেশায় চুর হয়ে আছেন। সুযোগ কেউ হাতছাড়া হতে দিতে চান না, কেউবা একবার হাতে পেলেই হয়।

মাঝখানে জনগণ এক সরকারের বিদায়ে আরেক সরকারের সুশাসন পাবেন এ নিশ্চয়তা নিজের মনকে দিতে পারছেন না, মানুষকে দেওয়া দূরে থাক। আদর্শিক রাজনীতির পথহারা বাংলাদেশ এক দ্বিধাদ্বন্দ্ব, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘরে-বাইরে তো বটেই, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই সাফল্য হাতের মুঠোয় পুরে পথ হাঁটছেন। বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে এ মেয়াদেই পদ্মা সেতুর মতো উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করছেন। সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছেন, সমুদ্র বিজয় করেছেন, দেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে এনে এখন মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার লড়াই করছেন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ যেমন চলছে, তেমনি তার উজ্জ্বলতা বর্ণহীন ধূসর করে দিচ্ছে দলের দখলদারিত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ মাঠ নেতাদের কামড়া-কামড়ি। গত ৯ বছরে বিএনপি-জামায়াত জামানার দুঃশাসন, দুর্নীতি, হাওয়া ভবন বিতর্ক, নতুন ভোটারদের কাছে আলোচনায় নেই। সেখানে বিতর্ক উঠে এসেছে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকিং খাত ও বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা।

যে আওয়ামী লীগ আজীবন গণতন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লড়াই করেছে, ৯ বছরে সেটি কতটা রক্ষা করেছে, সেই বিতর্কও চলছে। যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের গৌরব ও অহংকার, যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পাশাপাশি ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে, সেখানে আজকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যেন অনেকটাই দিশাহারা ও বিভ্রান্ত।

একদিকে দলে আশ্রয় নেওয়া হাইব্রিড মানে সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানীদের তাড়াতে বলছে, আরেকদিকে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-বিএনপির আগমনকে রুখতে বলছে; কিন্তু এক চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ওয়াদুদের হাত ধরে মামলার আসামিসহ ৮০০ জামায়াত নেতা-কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের দুর্বলতাটা কোন জায়গায়, এ প্রশ্ন উঠছে।

চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত দলীয় এমপি নদভীর স্ত্রী, জামায়াত নেতার কন্যা রিজিয়াকে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে। যতদূর জানি, নদভী মনোনয়ন পাওয়ার পরও বিতর্ক উঠেছিল। আরও জানি, নদভীর নির্বাচনী জনসংযোগের অনেকটাই করে দেন তার স্ত্রী রিজিয়া। তার সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যিনি দলে ঠাঁই নেওয়া সুবিধাবাদী হাইব্রিড ও কাউয়াদের ব্যাপারে বরাবর সরব তিনি এ বিতর্কের মুখে বলেছেন, নদভী চার বছর ধরে দলের এমপি। আজ কেন তার স্ত্রীকে নিয়ে প্রশ্ন? স্বামীর সঙ্গে তার স্ত্রী আওয়ামী লীগের কাজ করছেন। এখানে দুর্মুখেরা প্রশ্ন করতেই পারে, যে জামায়াতকে নিয়ে এত নিন্দা, এত ঘৃণা, সেই জামায়াত নেতার কন্যা রিজিয়া আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নদভীর স্ত্রী হয়ে থাকলেই অসুবিধা কী? তাকে কেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দিতে হবে?

কর্মীনির্ভর দল আওয়ামী লীগ মহিলা আওয়ামী লীগে ঠাঁই দিতে কি আর কাউকে পায়নি? আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কট্টর বিরোধী এককালের আওয়ামী লীগ ও মুজিববিদ্বেষী জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিকে যদি বুকে টানতে পারে, পথের বন্ধু করতে পারে, সংসদ ও সরকারে ঠাঁই দিতে পারে; তাহলে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত যার বুকের ভিতরে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু জিকির, যিনি ’৭৫-এর পর পিতৃহত্যার বদলা নিতে প্রতিরোধ যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাকে বুকে টানতে পারে না? একটি আসনের জন্য যদি জামায়াত নেতার কন্যাকে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঠাঁই দিতে হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে কাটানো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭০ হাজার ভোট পাওয়া টাঙ্গাইলের মুরাদ সিদ্দিকীকে দলের প্রার্থী করতে পারে না?

ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুঃসময়ের সাথী মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে ফিরিয়ে নিতে পারে না? সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের ক্ষমা করে দলে জায়গা দিতে পারে না? এ বিষয়গুলো বুঝতে পারি না। মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষের বাইরে থাকা আদর্শিক দল সিপিবি-বাসদকে মহাজোটে এনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে আবারও গণজাগরণ ঘটানোর ডাক দিতে পারে না? তৃণমূলে আওয়ামী লীগের মধ্যে নেতৃত্বের লড়াই বিভিন্ন স্থানে যে বিভক্তি এনেছে, সেটি মীমাংসা কেন করতে পারে না?

বগুড়ায় মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ধর্ষক তুফান সরকার ক্ষমতাসীন দলের জন্য সারা দেশে ঝড় তুলেছে। সারা দেশে রাতারাতি ক্ষমতার ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে মাফিয়া হয়ে ওঠা অসৎ শক্তিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সাদা মনের মানুষদের, দলের আদর্শিক কর্মীদের তুলে আনা যায় না? আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, তুফান আওয়ামী লীগের কেউ নয়। গঠনতান্ত্রিকভাবে এটি গ্রহণযোগ্য হলেও রাজনৈতিকভাবে খোলা চোখে মানুষ মনে করে শ্রমিক লীগ আওয়ামী লীগের। এ তুফান সরকার কেমন করে বগুড়া শ্রমিক লীগের নেতা হয়? তার ভাই মতিন সরকার কেমন করে যুবলীগের নেতা হয়? দেশে সুশাসন থাকলে কেমন করে তারা মাদক সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সারা দেশে এ ধরনের বিতর্কিতরা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ধূসর করে দেয়? বঙ্গবন্ধুকন্যার এ্যারাবিয়ান ব্ল্যাক হর্সের মতো ছুটে চলাকে থামিয়ে দেয়?

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতির জনকের খুনিদের ও একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। তার সামনে স্বপ্ন আর একটি। সেটি হচ্ছে— বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্থাৎ একটি আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ার লড়াই করছেন তিনি। আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, লুটেরা সিন্ডিকেট নিয়ে সেটি অর্জন করা যাবে না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে তা উপলব্ধি করতে হবে। বিএনপি নেতৃত্বকেও বুঝতে হবে, যারা দুই চোখে দেখেন তাদের মনে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, শেখ হাসিনার শাসনের চেয়ে খালেদা জিয়ার শাসন উত্তম হবে, সেই বিশ্বাস ও গ্যারান্টি কোথায়? এখনো জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ হয়নি। এখনো হাওয়া ভবনের কুশীলবরা দেশে-বিদেশে বসে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আর যাই হোক শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, গ্রেনেডের নেশায় আসক্তদের দমন করতে পেরেছেন।

নির্বাচনের অনেক বাকি। তিনি যদি যৌন বিকারগ্রস্ত ধর্ষক, লোভ-লালসার, ক্ষমতার উন্নাসিতকার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, তার প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা অন্য উচ্চতায় যাবে।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×