ব্লগার অভিজিৎকে যারা হত্যা করেছে তাদের কয়েকজনের শাস্তি হয়েছে। ব্লগার অভিজিৎ খুন হওয়ার আগে আমি তার লেখা কখনো পড়িনি। এরপর পড়েছিলাম তার কিছু লিখা। পড়ে বুঝতে পারলাম তার লিখা গুলো কোনো ব্যক্তি বিশেষের উদ্দ্যেশে করে লেখা ছিল না। একটা আইডলজির বিপক্ষে ছিল। সেই আইডলজির পক্ষের কিছু লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল। এই ধরনের যুক্তিতর্ক দিয়ে যারা লেখালেখি করে এরা প্রায় সবাই নিরস্ত্র থাকে, নিরস্ত্র লোকজনদের পরিকল্পনা করে হত্যা করা খুবই সহজ কাজ। এই পর্যন্ত যত ব্লগারদের হত্যা করা হয়েছে তাদের কাছে একটাই অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে সেটা হলো কলম কিংবা ল্যাপটপ! এই অস্ত্রটি সম্ভবত পৃথিবীর সকল অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, কিন্তু নিজের প্রাণ বাঁচানোর মত শক্তিশালী নয়।
যাইহোক যারা এই খুনের সাথে জড়িত তাদেরকে খুনি বলার লোকের সংখ্যা খুবই কম। এই ব্লগেও তাদের খুনি না বলার পক্ষে অনেকেই আছে! তাদের নিয়ে গর্ব করে পোস্ট দেওয়ার লোক দেখেছি অনেক। তাদের হাঁসিমাখা মুখের ছবি নিয়ে প্রশংসা করে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে অসংখ্য ফেইসবুকার, ইউটিউবার! খুনিদের হত্যাকাণ্ডের জাস্টিফাই করার জন্য অনেকগুলো যুক্তি দাঁড় করিয়েছে তাদের আইডলজির লোকজন! অথচ খুনের পর যে লোকগুলো বলেছে এরা সত্যিকারের ধার্মিক নয়, এরা বিপথগামী তারাই এখন তাদের বীর বলে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে শুকরিয়া আদায় করে যাচ্ছে! এই হিপক্রেসিটা আমাকে খুব বেশি কষ্ট দেয়না, তারা যখন বলেছিল এরা সঠিক ধার্মিক নয়, এরা বিপথগামী তখনও তাদের কথা আমার বিশ্বাস হয়নি কারন তাদের আইডলজি অনুযায়ী অবশ্যই তারা বিপথগামী নয়, তারা অবশ্যই তাদের অবস্থান থেকে সঠিক কাজটি করেছে।
আমার খুব কাছের কয়েকটি ছোটভাই গত দুইদিন এই নিয়ে ফেইসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছে। তারা এই খুনিদের ফাঁসি নিয়ে অসন্তুষ্ট এবং তাদের জন্য দোয়া কামনা করেছে। দন্ডপ্রাপ্ত খুনিদের তারাও বীর ও জান্নাতবাসী বলে আখ্যায়িত করেছে। একজনতো দেখলাম দুনিয়াতেই নাকি সে জান্নাতবাসী দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে এর জন্য তার গর্ববোধ হচ্ছে! আমি খুব অবাক হয়ে তাদের অবস্থান দেখলাম আর মর্মাহত হকাল। খুবই মেধাবী স্টুডেন্ট এবং জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত তারা। একসময় তাদের সামাজিক কাজকর্মে আগ্রহী দেখতাম এখন আর তারা এতে আগ্রহী নয়। তাদের এই অবস্থা আমাকে খুবই পীড়া দেয়। আশাকরি তাদের বোধদয় হবে খুব শিগ্রহী।
জাতির জেনারেশনের বিশাল একটি অংশের আজ এমন অবস্থা। আগামীতে এর ফল আরো কঠিনভাবে প্রকাশ পাবে তখন আর তেমন কিছু করার থাকবে না। আরেকটি আরব বসন্তের অপেক্ষায় জাতি!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪১