আজ দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবী হীরা, মণি, মুক্তার ১৯তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশে ২০০১ সালের ৩০ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা.পারভীন ফাতেমার তত্ত্বাবধানে ফিরোজা বেগম নামের এক প্রসূতি এ জন্ম দেন এদেশের প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবীর। প্রসঙ্গত, বিশ্বে প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জন্ম হয় ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে, ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই। ওল্ডহ্যাম অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট জেনারেল হাসপাতালে ডা. এডওয়ার্ডস ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাট্রিক স্পেটোর তত্ত্বাবধানে জন্ম নেয় ২ দশমিক ৬১ কেজি ওজনের একটি কন্যাশিশু। তার নাম রাখা হয় লুইস ব্রাউন, সে এখন দু’সন্তানের মা। বাংলাদেশে ফিরোজা বেগম নামের ওই প্রসূতি এক সাথে জন্ম দেন তিন কন্যাশিশু। রূপকথার চরিত্রের মতো ওই তিন কন্যার নাম রাখা হয় হীরা, মণি ও মুক্তা। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৮টি বছর। আজ তারা ১৯ বছরে পা দিয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশে টেস্টটিউব বেবির সংখ্যাও বেড়েছে। তবে টেস্টটিউব বেবির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও বদলায়নি। তাই বারবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়না। তাদের বাবার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিনতি করে জানান, মেয়েদের ভালো রাখার জন্যই মিডিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে। কারোর সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হয় না। ইতিমধ্যে টেস্টটিউব বেবি হওয়ায় তিনটি স্কুলও পরিবর্তন করতে হয়েছে তাদের। ২০০১ সালের আগে বাংলাদেশে টেস্টটিউব সম্পর্কে সবাই অজ্ঞ ছিল। তখন পারভীন ফাতেমার উদ্যোগ আর চেষ্টায় হীরা, মণি ও মুক্তার জন্ম হবার পর থেকেই মানুষ সচেতন হয়েছে। আজ দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবী হীরা, মণি, মুক্তার ১৯তম জন্মবার্ষিকী। ২০০১সালে আজকের দিনে তাদের জন্ম হয়। হীরা, মণি, মুক্তার জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।
(স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পারভীন ফাতেমা এবং তার স্বামী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেইন)
'ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ শব্দটি অনেকের কাছে অপরিচিত ঠেকলেও ‘টেস্টটিউব বেবী’- এখন আর আমাদের দেশে অপরিচিত কোন শব্দ নয়। যে পদ্ধতিতে টেস্ট টিউব বেবীর জন্ম হয় তার নাম ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন,অর্থ কাচের মধ্যে। সংক্ষেপে আইভিএফ। ‘ইন-ভিট্রো’ শব্দটি লাতিন ভাষা থেকে নেয়া। এর অর্থ কাঁচের মধ্যে। অর্থাৎ, সোজা বাংলায় ‘ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ বলতে বোঝায় দেহের বাইরে নিষিক্তকরণ। মূল প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে ভ্রণ টেস্টটিউবে বেড়ে ওঠে না, বাড়ে মায়ের জরায়ুতেই আর দশটি বাচ্চার মতোই। এ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণটুকুই শুধু স্বাভাবিক পদ্ধতিতে না হয়ে দেহের বাইরে হয়। স্ত্রীর ডিম্বপাত বা ওভুলেশনের সময় ডিম্বাণু যখন পরিপক্ক হয়, তখন তা ডিম্বাশয় থেকে বের করে আনা হয় ল্যাপারোস্কপি নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে। যে সব নারীর ডিম্ব উৎপাদনে সমস্যা, তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে ডিম্ব উৎপাদনে সহায়তা করে এমন কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ল্যাপারোস্কপি ছাড়াও যোনিপথে ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমেও ডিম্বাণু সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহের পর ডিম্ব রাখা হয় টেস্ট টিউব অথবা বিশেষ ধরণের একটি পাত্রে যার নাম পেট্রিডিশ। এদিকে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে ডিম্বাণুসহ সেই ডিশ বা টিউবে শুক্রাণু রাখা হয়। এ সময় একটি ডিম্বাণুর বিপরীতে থাকে প্রায় পঁচাত্তর হাজার শুক্রাণু। এরপর ডিশ বা টিউবটি কয়েক ঘন্টা রাখা হয় ইনকিউবিটরে। ইনকিউবেটরের পরিবেশ রাখা হয় জরায়ুর অনুরূপ। এখানে উপযুক্ত শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে মানব ভ্রুনের সৃষ্টি হয়। মাতৃগর্ভে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিষেকের ফলে যেসব ভ্রণ বেড়ে ওঠে, তেমন করেই বেড়ে ওঠে টেস্টটিউব বেবীও। বাচ্চার প্রসবও স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে অথবা দরকার হতে পারে সিজারিয়ান অপারেশনের। জন্ম নেয়া শিশুরা অস্বাভাবিক কিছু নয়, তারাও অন্যান্য শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। কিছু গবেষণায় অবশ্য বলা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুদের চেয়ে টেস্টটিউব শিশুদের বিকলাঙ্গতা ও বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। অনেক ক্ষেত্রেই এ প্রক্রিয়ায় একসাথে একাধিক অর্থাৎ দুই-তিন বা চারজন শিশু জন্ম নেবার কথা শোনা যায়। এর কারণ হচ্ছে, সাধারণত এ পদ্ধতিতে জরায়ুতে একাধিক ভ্রণ রাখা হয়। একটি ভ্রণ কোনভাবে বেড়ে উঠতে ব্যর্থ হতেও পারে এ আশংকাতেই এটি করা হয়। একাধিক ভ্রণ একই সাথে বেড়ে উঠলে তখন জন্ম হয় একাধিক শিশুর। বেসরকারী ইনফার্টিলিটি সেন্টারগুলোতে বছরে কয়েক শ টেস্টটিউব বেবী জন্ম নিলেও সরকারের কোন আয়োজন নেই। তবে টেস্টটিউব বেবীর বাবা-মা বলছেন, গর্ভধারণের আগে ঝুট-ঝামেলা থাকলেও বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর এইসব শিশু অন্য শিশুদের মতই, স্কুলেও তারা ভাল ফল করছে। টেস্ট টিউব বেবী হীরা, মণি, মুক্তার ১৯তম জন্মবার্ষিকী। দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবী হীরা, মণি, মুক্তার জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২