ওয়াল্ট হুইটম্যান ১৮১৯ সালের ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যের লং আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮১৯ সালের ৩১ মে, লং আইল্যান্ডের টাউন অফ হান্টিংটনের অন্তঃপাতী ওয়েস্ট হিলসে ওয়াল্ট হুইটম্যান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ও মাতার নাম ছিল ওয়াল্টার ও লুসিয়া ভন ভেলসর হুইটম্যান। তারা কোয়াকার চিন্তাধারার অনুগামী ছিলেন।ওয়াল্টের বাবা ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। হুইটম্যান ছিলেন তার পিতামাতার নয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। নামকরণের অব্যবহিত পরেই, পিতার নামের সঙ্গে তার নামের পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য তার ডাকনাম "ওয়াল্ট" রাখা হয়। ওয়াল্টার হুইটম্যান সিনিয়র তার সাত পুত্রের মধ্যে তিন জনের নামকরণ করেন মার্কিন নেতা অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, জর্জ ওয়াশিংটন ও টমাস জেফারসনের নামানুসারে। তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল জেস এবং এক পুত্র নামকরণের পূর্বেই মাত্র ছয় মাস বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তার ষষ্ঠ তথা কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল এডওয়ার্ড। ১৮২৩ সালে চার বছর বয়সে হুইটম্যান পরিবারের সঙ্গে লং আইল্যান্ড ছেড়ে ব্রুকলিনে চলে আসেন। এখানে আর্থিক কারণে তাদের বারংবার বাসস্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছিল। হুইটম্যান তার স্মৃতিচারণাতেও খারাপ আর্থিক অবস্থার দরুন এক অশান্ত ও বিষন্ন ছেলেবেলার ছবি এঁকেছেন। এগারো বছর বয়সে হুইটম্যান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি পরিবারের সাহায্যার্থে কাজকর্মের চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি দুইজন আইনজীবীর অফিস বয় হিসেবে কাজ করেন। এরপর প্যাট্রিয়ট নামে স্যামুয়েল ই. ক্লিমেন্টস সম্পাদিত লং আইল্যান্ডের সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে শিক্ষানবিশি ও ‘পেইন্টার’স ডেভিল’-এর কাজ করেন। এখানেই হুইটম্যান প্রিন্টিং প্রেসের কাজ ও টাইপসেটিং শিক্ষা করেন। কোনো কোনো সংখ্যার পৃষ্ঠা ভরানোর জন্য এই সময় তিনি কিছু "sentimental bits"-ও রচনা করে থাকবেন। ক্লিমেন্টস ও তার দুই বন্ধু এই সময় এলিয়াস হিকসের কবর খুঁড়ে তার মাথাটির প্লাস্টার মল্ড তৈরি করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর কিছুকাল পরেই ক্লিমেন্টস প্যাট্রিয়ট পত্রিকার কাজ ছেড়ে দেন, সম্ভবত এই বিতর্কের জেরেই। ১৮৩৫ সালের মে মাসে ষোলো বছর করেন। অবশ্য জীবনের পরবর্তী পর্বে পৌঁছে তিনি ঠিক কোথায় এই কাজ করতেন, তা স্মরণ করতে পারেননি। তিনি অন্য কাজের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সেই অঞ্চলের মুদ্রণ ও প্রকাশন অঞ্চলটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার অন্য কাজ পাওয়া কঠিন বয়সে তিনি লং-আইল্যান্ড স্টার ও ব্রুকলিন পরিত্যাগ করেন। চলে আসেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এখানে তিনি কম্পোসিটরের কাজ শুরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১৮৩৭-এর আতঙ্কের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা। ১৮৩৬ সালের মে মাসে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে যোগ দেন। এঁরা সেই সময় লং আইল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেডে বসবাস করছিলেন। ১৮৩৮ সালের বসন্ত পর্যন্ত হুইটম্যান এখানে ওখানে স্কুল শিক্ষকতার কাজও করেন। তবে শিক্ষকতার কাজে তিনি বিশেষ তৃপ্তি পাননি। কয়েকবার শিক্ষকতার প্রচেষ্টার পর, হুইটম্যান ফিরে যান নিউ ইয়র্কের হান্টিংটনে। এখানে তিনি নিজের সংবাদপত্র লং আইল্যান্ডার প্রকাশ করেন।
কর্মজীবনের প্রথম ভাগে হুইটম্যান ১৮৪২ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন ইভান্স নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। ১৮৫৫-তে নিজের অর্থে লেখক ও প্রকাশকের নামবিহীন লিভস অব গ্রাস নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই কাব্যের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য এক আমেরিকান মহাকাব্য রচনা। হুইটম্যান সারা জীবন এই গ্রন্থের সংশোধন ও সংযোজন করেছেন। তার এই কাব্যগ্রন্থের ১০টি সংস্করণ বের হয়েছে। তার এই বইটি আমেরিকার কাব্য ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও পঠিত কাব্যগ্রন্থ। ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াল্ট হুইটম্যান ব্যক্তিজীবনে চিরকুমার একজন চেতনামরমি সাধক ছিলেন। রাজনীতি-সচেতন হুইটম্যান উইলমট প্রোভিসোর সমর্থক ছিলেন এবং একসময় দাসপ্রথা বিলোপের ডাক দিয়েছিলেন হুইটম্যান। তার কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন একজন মরমিবাদী আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। এ চিন্তায় হুইটম্যান একজন সত্যিকার মরমিবাদী। ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ নিউজার্সির ক্যামডেনে তার মৃত্যু হয়। মানবতাবাদী এই কবির আজ ২০১তম জন্মবার্ষিকী। মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভ্চ্ছো।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭