somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত এক দেশ "নাউরু" যেখানে রাজধানী ও রাজনীতি নাই

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাউরু প্রজাতন্ত্র, ইংরেজি Republic of Nauru রিপাবলিক অভ ন্যাউরু)। নিরক্ষরেখার ২৬ মাইল দক্ষিণে ডিম্বাকৃতির ছোট দ্বীপ। এর আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র ১০ ভাগের ১ ভাগ। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘে সদস্য পদ রয়েছে নাউরুর। এই সদস্যপদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করছে দেশটি। উঁচনিচু এবড়ো-খেবড়ো। চার দিকে বালুময় সমুদ্র সৈকত। নাউরুর জলবায়ু উষ্ণ ও অতিমাত্রায় আর্দ্র। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ওঠানামা করে। এর ধরন একেক বছর একেক রকম। দিনের বেলায় তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। রাতে তা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি হয়। সমুদ্রের পানির উচ্চতা ওঠানামার কারণে দ্বীপবাসীর জীবন ও স্থাপনা সব সময় শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে মাইক্রোনেশিয়ান আর পলিনেশিয়ানরা নাউরুতে বসবাস করা শুরু করে। তারা ১২টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। যার চিহ্ন নাউরুর পতাকায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাউরুর পতাকা ১২টি তারকাখচিত। তবে বর্তমানে নাউরুর পতাকায় একটি তারার ছবি রয়েছে। নাউরুর ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় সর্বপ্রথম ১৭৯৮ সালে দেশটিতে পা রাখেন এক ব্রিটিশ ক্যাপটেন। তিনি ছিলেন একজন তিমি শিকারিও। তার নাম ‘জন ফেয়ার্ন’। ১৯৩০ এর দশকে ইউরোপীয়রা নাউরুতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র অথচ ইউরোপের বাঘা বাঘা দেশগুলো এটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। ১৯০০ সালে নাউরুতে আবিষ্কৃত হয় ফসফেটের খনি। এরপরই জার্মানরা নাউরুতে উপনিবেশ স্থাপন করে। জার্মানদের আধিপত্যের কারণে নাউরুর স্থানীয় অধিবাসীরা লাভের অংশ পেত না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জার্মানরা এককভাবে এর দ্বারা লাভবান হয়েছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন নাউরুর খনি থেকে প্রাপ্ত ফসফেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধেরও অনেক পরে ১৯৭০ সালে নাউরুর স্থানীয় অধিবাসীদের দখলে আসলে ফসফেট সম্পদ। কিন্তু জার্মান ও ব্রিটিশরা তত দিনে সব চুষে খেয়ে নিয়েছিল। যা ছিল তা দিয়েই নাউরুর অধিবাসীরা তাদের জীবনমান কিছুটা উন্নত করেন। তবে তারা ছিল খুবই ভোগবিলাসী। ব্রিটিশরা নিজেদের স্বার্থেই নাউরুর লোকদের ভোগবিলাসী করে গড়ে তোলে। ব্রিটিশদের চতুরতার কারণে নাউরুর স্থানীয় লোকেরা অর্জিত অর্থ নিজেরা ভোগবিলাস করেই শেষ করে ফেলতো। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে তারা কোনো অর্থ ব্যয় করে নি। একসময় ফসফেট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় তখন নাউরুর অর্থনীতি আবার ভেঙে পড়ে। সেই সাথে অপরিকল্পিতভাবে ফসফেট উত্তোলণের কারণে দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়। দুই-ই মিলিয়ে নাউরুতে দেখা দেয় অস্থিরতা। এই অস্থিরতাই দেশটির উন্নয়নের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই বিশ্বযুদ্ধেই নাউরুর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এই ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে।


১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশটির দখল নেয় যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ২য় বিশ্বযুদ্ধে এসে জাপান এককভাবে দেশটির দখল নেয়। জাপান নাউরুকে বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯ শতকে জার্মানরা এই দেশটিতে উপনিবেশ স্থাপন করে। ‘নাউরু’র একদিকে রয়েছে চীন এবং অন্যদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু দ্বীপ। আশেপাশের অন্য দেশ বলতে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড। এই দেশগুলোর দূরত্ব ‘নাউরু’ থেকে অনেকখানি। তবে তাদের সরাসরি প্রভাব রয়েছে এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। নাউরুর বাজেট নির্ধারণ করা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে এবং নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। এথেকেই বোঝা যায় বর্তমানে নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। নিজেদের কোনো সামরিক বাহিনীও নেই। নিরাপত্তার বিষয়গুলো অস্ট্রেলিয়াই দেখে। ৮ বর্গমাইল এই দ্বীপটিতে ১৩ হাজার মানুষের বসবাস। এদের প্রধান ধর্ম খ্রিষ্ট হলেও এরা দুটি জাতিতে বিভক্ত। একটি হলো ‘মাইক্রোনেশিয়া’ ও অপরটি ‘পলিনেশিয়া’। জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ নাউরুয়ান। ২৬ শতাংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্যান্য দ্বীপের। চাইনিজ ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত রয়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ করে। ইংরেজি ভাষার প্রচালন রয়েছে ব্যাপকভাবে। সরকারি ভাষা নাউরুয়ান। নাউরুর মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে মোটাসোটা। ৯০ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত মোটা। দেশটিতে ডায়াবেটিসের হারও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। মানুষের জীবনাচরণে এখন সম্পূর্ণ পশ্চিমাদের অনুকরণ পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষাদীক্ষায় অনুন্নত রয়ে গেছে। ফসফেট খনির দেশ ‘নাউরু’ এখন পুরোপুরি বিদেশী সাহায্য নির্ভর একটি দেশ। যার বেশিরভাগই যোগান দেয় অস্ট্রেলিয়া। এর বিনিময়ে তারা নাউরুকে ব্যবহার করে ডাম্পিং জোন হিসেবে। এক চুক্তির মাধ্যমে নাউরু অস্ট্রেলিয়া গমনেচ্ছু অনুন্নত বিশ্বের সব নাগরিককে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে। সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো থেকে অসংখ্য মানুষ অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া এসব মানুষকে সীমান্ত থেকে ধরে নাউরুতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।


নাউরুতে ঘোষিত কোর রাজধানী নেই। আর রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি তার বিন্দুমাত্র লেশ দেশটিতে নেই। তবে হ্যা ওখানেও নির্বাচন হয় এবং সরকার গঠন করা হয়। ১৩ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে প্রভাবশালী মানুষগুলো একে অন্যের পরিচিত। সরকার গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে আত্মীয়তা। নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। এ কারণে রাজনৈতিক দল গঠন ও বিকাশ হয়নি। তবে একেবারে কোনো ধরনের রাজনৈতিক দল ‘নাউরু’তে নেই সে কথাও বলা যাবে না, আবার আছে তাও বলা যাবে না। কেননা গঠন ও কার্যক্রম প্রচলিত রাজনৈতিক দলের মতো নয়। তাই এগুলোকে সেই অর্থে রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। ‘নাউরু’তে স্থানীয়ভাবে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এগুলো হলো - ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, নাউরু ফার্স্ট ও সেন্টার পার্টি। রাজধানী কিংবা রাজনীতি না থাকলেও দেশটির নিজস্ব একটি শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব একটি সংসদ। এই সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৮টি। প্রতি তিন বছর পর পর এই সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাভুটির মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের মধ্যে একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। রাজনৈতিক দল না থাকায় যে ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা, তা হয় না। এর প্রধান কারণ গোষ্ঠী আর আত্মীয়তা রাজনৈতিক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। ১৪টি বিভাগে ভাগ করে শাসনকাজ পরিচালনা করা হয়। বিচার আর প্রশাসনিক ইউনিটগুলো মূলত বিভাগীয় কেন্দ্রগুলোতে বিন্যস্ত করে দেয়া হয়েছে। দেশটিতে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক রাজনৈতক দল। এখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে দেশে ১৭টি সরকারের পতন হয়। নাউরুতে ৩১ জানুয়ারীতে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×