ভাষা দিবস ও শহীদ মিনার নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক উপাত্ত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৯৫২ সালের তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনকে মূলত ভারতের প্রচারণায় একটি সমাজতান্ত্রিক (কম্যুনিস্ট) ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করেছিলো পাকিস্তান সরকার। তার প্রমাণ মিলে ঢাকার মার্কিন দুতাবাস থেকে পাঠানো জরুরী তারবার্তায়। আমি কিছু প্রামান্য ইমেজ ফাইল তুলে দিচ্ছি যাতে এই স্বাক্ষ্য মেলে।
১ম তারবার্তা (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) (ছবি ২ ও ৩)
এটি ঢাকার তাৎক্ষণিক অবস্থার একটা প্রামাণ্য দলিল হতে পারে। ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে ঘোষণার প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ ও তাতে পুলিশের গুলি চালানোর কথা বলা হয়েছে এখানে। মৃতের সংখ্যা ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ জন বলে অনুমান করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কম্যুনিস্ট ও আওয়ামী লীগের হাতে বলে সন্দেহ। একই দিন প্রাদেশিক সংসদে নুরুল আমিনের প্রস্তাবে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার একটি প্রস্তাবনা আনা হয়েছে বলে উল্লেখ।
২য় তারবার্তা (২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) (ছবি ৪)
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সম্বলিত এই বার্তায় ২৭ জানুয়ারি '৫২ ঢাকায় খাজা নাজিমউদ্দিনের ভাষণে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে বলে পুনোরুক্তি গোটা পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩য় তারবার্তা (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) (ছবি ৫)
এই বার্তায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের নির্মিত শহীদ মিনার সরকারী তৎপরতায় ধ্বংস করার উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রাবাসে তল্লাশী চালিয়ে ২৭ জন কম্যুনিস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি বন্দীদের মুক্তিসহ ছাত্রদের ৯ দফা দাবির উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
দ্বিতীয় দফা শহীদ মিনার ধ্বংস (১৯৭১) (ছবি ১)
২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর গুড়িয়ে দেয়া হয় শহীদ মিনার। সেখানে বানানো হয় মসজিদ। কিন্তু অকুতোভয় এক মুক্তিযোদ্ধা বিধ্বস্ত মিনারের দুটো ইট এনে তাতে ফুলের মালা দিয়ে নীচে লিখে দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
এ বিষয়ে জামাতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে ১২ মে ও ১৬ জুলাইয়ে প্রচারিত সংবাদের উল্লেখ: (ছবি ৬)
১২ মের সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশের ইতি হোক শিরোনামে লেখা হয় :
হিন্দুস্তানী সংস্কৃতি মুসলমান সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করেছে। যার ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় শ্লোগানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আল্লাহু আকবর ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ বাক্যগুলি বাদ পড়ে এগুলোর জায়গা নিয়েছিলো জয় বাংলা। মুসলমানী ভাবধারার জাতীয় সঙ্গীতের স্থান দখল করেছিলো মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু কবির রচিত গান।...
শহীদ দিবসের ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী মুসলমান ছাত্রদের জন্য দোয়া কালাম পড়ে মাগফেরাত কামনার পরিবর্তে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে হিন্দুয়ানী কায়দা, নগ্নপদে চলা, প্রভাতফেরী, শহীদ মিনারের পাদদেশে আঁল্পনা আকা ও চন্ডীদেবীর মূর্তি স্থাপন ও যুবক-যুবতীদের মিলে নাচগান করা মূলত ঐসকল পত্রপত্রিকা ও সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলির বদৌলতেই এখানে করা সম্ভব হয়েছে।
১৬ জুলাই 'ইতিহাস কথা বলে' সম্পাদকীয়তে তারা লেখে : আইউব খানের গভর্নর আজম খান ছাত্রদের খুশী করার জন্য যে শহীদ মিনার তৈরি করলেন তাকে পুজা মন্ডপ বলা যেতে পারে কিন্তু মিনার কিছুতেই না। যাহোক সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত মিনারটি ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনে দেশবাসী খুশী হয়েছে।
ছবি ৭ : খাজা নাজিমউদ্দিন ও জিন্নাহ
৪২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।