somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ-০২

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ধারাবাহিকতার জন্য পড়ুন “মৃত্যুর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ-০১ ")

পরিচিত কাউকে নিজের সামনে মরতে দেখি ২০০৭ এর প্রথম সূর্য উঠবার একটু আগে। সে রাতে আমার দাদি মারা যান। মৃত্যুর সাথে এটাই ছিল আমার প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর আমার জীবন সম্পূর্ন অন্যরকম গতিতে চলছে। ব্লগে প্রথম শুরু করেছিলাম, দাদির জীবনের কিছু ঘটনা যা আমি জানি। এরপর শুরু করেছিলাম, সূর্যালোকে তার শেষ দিন তথা মৃত্যুর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের কথা। প্রায় একমাস পর অবার লেখা শুরু করলাম।


-----------------------------------------------------

.... .... .... বাবার ফোন বাজতে থাকে। কিন্তু ডাক্তার আর ফোন ধরে না। প্রায় রাত ৩:৫০ মিনিটে ডাক্তার আমাকে ডেকে জানায় দাদি মারা গেছেন। আমি প্রথমেই বাবা ও ছোট চাচাকে জানালাম। বাবা অদ্ভুত রকম শান্ত হয়ে পড়ে। একটু আগেই যে লোকটি মায়ের খারাপ অবস্থার কথা শুনে কম্পিত হচ্ছিল, মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার অস্বাভাবিক শান্ত রুপ মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। ছোট চাচা পাগলের মত প্রলাপ শুরু করে।
তাদের বাইরে রেখে আমি গেলাম আইসিইউএর ভেতরে। টিউব লাইটের সাদা আলোতে দেখলাম, খাটের উপর দাদির মৃত দেহ পড়ে আছে। তার হাত ছুইলাম আমি। কিছুক্ষণ আগেও আমি জানতাম এই হাত একজন জীবিত মানুষের। আইসিইউতে ঢুকাবার আগে এম্বুলেন্সে এই হাতই ধরে রেখেহিলাম। কি দেশের বাড়ি, কি ঢাকার বাড়ি, যখনই আমাদের বিদায় দিত এই হাত নড়ত আমাদের লক্ষ্য করে। দেখা করতে গেলে এই হাতই আগে ধরতাম। প্রাণ চঞ্চল ছিল তার হাত। এ হাতে কত প্রেসারই না মেপেছি আমি। সেদিনও যদি মাপতে পারতাম, রিডিং কত আসত কে জানে? হাত বুলালাম দাদির মুখে। মুখটা কেমন যেন বিকৃতভাবে বাকানো ছিল। মুখে ছিল ঐ যন্ত্রটার নল। শরীরটা ছিল একদম ঠান্ডা। চামড়ায় টান দিলাম, বুঝতে চেষ্টা করলাম কোন পরিবর্তন আছে কিনা। কোন পার্থক্য বুঝলাম না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম, কেন জানি না এমনি এমনি।
ততক্ষণে বাইরে ডাক্তার দাদির ডেথ সার্টিফিকেট লেখা শেষ করে ফেলেছেন। বাবা শান্ত, চাচার প্রলাপে ডাক্তারের জন্য ধিক্কার বের হচ্ছে। ডাক্তার সাহেব কোন প্রতিউত্তর করছেন না। চাচাকে বাইরে নিয়ে এলাম। আমি জানতাম, দাদি বাঁচবে না। তার অবস্থা আসলেই খুব খারাপ ছিল। অহেতুক ডাক্তারকে গালাগালি করাটা আমার কাছে যুক্তিহীন বলে মনে হল। মুখ থেকে ডাক্তারের পক্ষের কিছু যুক্তি বের হতে যাচ্ছিল, তবে সাথে সাথে নিজেকে থামিয়ে দিলাম। আজ অনুধাবন করলাম “জীবনে কিছু কিছু সময়ে যুক্তি প্রদর্শন সত্যিই অযৌক্তিক”। এইতো ঠিক দুইদিন আগে সেই ধানমন্ডি লেকের পাড়ে এক বন্ধু হঠাৎ জানতে পারল যাকে সে ভালবাসে, সে মেয়ে অন্য একজনকে ভালবাসে। তাকে এ কথা আগে হাজার বার বুঝিয়েছিলাম, “মেয়েটা তোকে ভালবাসে না, কিন্তু প্রেমিক হৃদয় বোঝে কি যুক্তির গান”। সেদিন যখন বন্ধুটি আমাকে মেয়েটির প্রেমিকার কথা জানাল, (জানি না হয়তো নিজ যুক্তি সঠিক ছিল এই আনন্দে কিনা) আমি তাকে আবারো নানা যুক্তি দিলাম এবং বুঝালাম তার কি কি ভুল ছিল। সে খুব বিরক্ত হয়েছিল আমার উপর, আমিও খুব রেগেছিলাম ওর উপর। ভেবেছিলাম, “ছাগলটার ছ্যাকা খেয়েও শিক্ষা হল না, ঐ মেয়ের পক্ষেই যুক্তি দিয়ে আমার অকাট্য যুক্তিকে খন্ডানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে”। চাচার সামনে দাঁড়িয়ে, মূহুর্তের মাঝে নিজের সেদিনকার ভুলের জন্যে অনুতপ্ত হলাম। পরবর্তীতে অবশ্য বন্ধুর কাছে সবকিছু তুলে ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম।
এমনই এক কাজ করেছিলাম এই একই চাচার সাথে, পনের বছর আগে দাদা মারা যাবার পরে। দাদা সৌদি আরবে হজ্জ করতে গিয়ে মারা যান। চাচা তখন দেশের বাড়িতে ছিলেন। আমার ছোট মামা চাচাকে বাড়ি থেকে ঢাকাতে নিয়ে এলেন। চাচা তখনও জানে না দাদার মৃত্যুর খবর। আমাকে বলা হয়েছিল, চাচা লম্বা যাত্রা করে এসেছেন, দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে যেন তাকে দাদার মৃত্যুর খবর না দেওয়া হয়। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। আমি ভাবলাম যে কারনে চাচাকে এত কিছু করে ঢাকায় আনা হল, সেটা বলতে এত দেরি কেন? চাচা আমাকে জিজ্ঞাসা করার, সাথে সাথে আমি ফিল্মি কায়দায় বলে উঠলাম, “দাদাভাই আর নেই”। এরপর চাচার আর দুইদিন খাওয়া হয় নি। এখনও মনে আছে, চাচার প্রশ্নের মাঝে কোন আশঙ্খা ছিল না, দাদার মৃত্যু বা কোন খারাপ খবরের।
যাইহোক, দাদির ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেল। আমারা একটা এম্বুলেন্স ভাড়া করলাম। কথা হল ঢাকা থেকে সরাসরি ডেড বডি নিয়ে দেশের বাড়ি যাবে। আমর বডি নিয়ে আসলাম, এলিফেন্ট রোডের বাসায়। সেখানে গোসল করানো নিয়ে, মহা নাটক হল। সে সব ব্যাপারে আর যাব না। গোসল শেষে বডি, কফিনে ভরা হল। দেওয়া হল চায়ের পাতা, ঢেকে দেওয়া হল উপরের তক্তা দিয়ে। নিয়ে গেলাম কাটাবন মসজিদে জানাজার জন্যে। ঘটে গেল একের পর এক স্বাভাবিক ঘটনা, কেউ মারা গেলে যা হয়। তবে স্বাভাবিকতার মাঝে ছিল, একট বিশেষ ব্যাপার। ২০০৭ এর পহেলা জানুয়ারি ছিল কোরবানির ঈদ। কথা হল সবাই বাড়ি চলে গেলে, গরুর কি হবে?





(পরবর্তি ও শেষ পোস্ট পড়ুন - মৃত্যুর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ-০৩ )
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪০
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×