ছবিঃ memphisflyer.com
এমন সময়ে এই মুভির কথা কেন সামনে এল সেটা বুঝি বলে দিতে হবে না । পোস্টের এই শিরোনামটা খুবই পরিচিত হয়ে গেছে সবার কাছে আশা করি । কারণ খুব অল্প সময় আগেই, All The President's Men মুভি শিরোনামের একেবারে কাছাকাছি শিরোনামের একটা খবর আমাদের দেশের মানুষের ভেতরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । সত্যিই বলতে কি যদি সংবাদটা না বের হত তাহলে আমি নিজেও এই মুভিটা দেখতাম কিনা আমার সন্দেহ আছে । যাই হোক মুভি দেখে শেষ করার পর মুভিটা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বার্তা লেখার ইচ্ছে জাগলো মনে । আজকের পোস্ট এই মুভি নিয়েই ।
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন (All The President's Men) কাহিনী শুরুর আগে আপনাদের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কথা বলতে চাই । আশা করি কম বেশি সবাই এই ঘটনার কথা জানেন । মূলত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুভিটি বানানো হয়েছে । ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনার সুত্রপাত ১৯৭২ সালের ১৭ই মাসে । ঐ দিনে বিরোধী দলের হেড কোয়াটারে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে প্রশাসনে ৫ কর্ম কর্তা যাদের ভেতরে একজন সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ছিলেন । তৎকালীন নিক্সন প্রশাসন ব্যাপারটি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন । প্রেসিডেন্ট নিক্সন বারবার এই ঘটনার সাথে নিজের সংশ্লিষ্ঠতা অস্বীকার করে আসেন । তখনকার প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব ঊডওয়ার্ড এবং কার্ল বার্নস্টাইন অনুসন্ধান করে বের করেন যে এই যে চুরির ঘটনা ঘটেছিলো এবং বিরোধী দলের হেড কোয়াটারের বাগ বসাতে গিয়েছিলো এদের সবার সাথেই প্রেসিডেন্ট নিক্সনের হাত রয়েছে । এরা আসলে তারই লোক । প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পুনরায় নির্বাচিত করার জন্যই তারা আসলে ঐ হেড কোয়াটারে চুরি করতে ঢুকিয়েছিলো এবং সেখানে আড়ি পাতার যন্ত্র বসাতে গিয়েছিলো । এফবিআই প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সংশ্লিষ্ঠতা খুঁজে পায়। ১৯৭৩ সালের জুলাইয়ে সিনেট ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি তদন্ত কমিটি রাষ্ট্রপতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ তথ্য উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, রাষ্ট্রপতি নিক্সনের অফিসে একটি টেপরেকর্ডার ছিল যা দিয়ে তিনি অনেক কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিলেন। এই রেকর্ড থেকে জানা গিয়েছিল রাষ্ট্রপতি নিজে এসব কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত রাষ্ট্রপতিকে এসকল টেপ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন ও নিক্সন তা মেনে নেন। এরপর ১৯৪৭ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করেন ।
মূলত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুভিটি বানানো হয়েছে । মুভির শুরুতে দেখানো হয় ওয়াটার গেটের হেড কোয়াটারে কয়েকজন স্যুট টাই পরা লোক ঢুকে চুরি করার জন্য । কিন্তু ধরা পড়ে যায় । এই ব্যাপারে সংবাদ করার জন্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব ঊডওয়ার্ড জানতে পারে পাঁচজনের সবাই কোন না কোন ভাবে সিআইএর সাথে জড়িত। এমন কি একজনের সাথে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার যোগাযোগ রয়েছে । ববের মনে সন্দেহ হয় । সে নিজ থেকে তদন্ত শুরু করে । তার সাথে যুক্ত হয় সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন । দুইজন মিলে খোজ খবর শুরু করে । চুরির সাথে কাদের কাদের সম্পর্ক রয়েছে, কিভাবে কোথায় টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে সব । কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা মোটেও সহজ কিছু না । পদে পদে তাদের বাঁধা আসতে থাকে । শুরুতে তাদের সম্পাদক মশাই এই তনন্তের পক্ষে ছিলেন না । তার মনে তারা হয়তো অভিযোগ করতে পারবে কিন্তু শক্ত প্রমান চাই । নয়তো অফিস সেগুলো অস্বীকার করবে এবং তাদের কিছু করার থাকবে না । বব আর কার্ল এরপর একে একে সব তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে । আরও গভীর ভাবে তদন্ত শুরু করে । কিন্তু আবারও সেই পদে পদে বাঁধা। কেউ মুখ খুলতে রাজি না । নথিপত্র গায়েব হয়ে যায় এমন তাদের জীবনের উপর হুমকি এসে পড়ে । কিন্তু বব আর কার্ল কথার মারপ্যাঁচে সাক্ষীদের মুখ থেকে অনেক কথা বের করে আনে ।
এক পর্যায়ে বব তার গোপন সোর্সের সাথে যোগাযোগ করে । কিন্তু সেই গোপন সোর্সও সরাসরি কোন কথা বলতে নারাজ । তবে আকারে ইণ্গিতে ঠিকই সব তথ্য কিংবা তথ্যের ইংগিত দিতে থাকে । বব আর কার্ল সেই অনুযায়ী পথে এগিয়ে যায় । অন্য সব পত্রিকা যখন এই ব্যাপারে চুপ তখন প্রথম ওয়াশিংটন পোস্ট এই ব্যাপারে প্রমান সহ খবর প্রকাশ করে । এবং এর ফলে নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় । যুক্তরাষ্টের ইতিহাসে নিক্সনই এমন একজন প্রেসিডেন্ট যে কিনা মেয়াদের আগে পদত্যাগ করেছে এবং সেটা হয়েছে এই দুই সাংবাদিকের কল্যানে ।
এই মুভি দেখা পর আমি বসে বসে ভাবছিলাম যে কী ভয়ংকর আর দুঃসাহসীক কাজ করে ফেলেছে এরা । যদিও মুভি তবুও মুভিটা সত্য ঘটনাকে নিয়ে বানানো এবং মোটামুটি সঠিক ভাবে সত্য ঘটনাটাকে চিত্রায়িত করা হয়েছে । এমন কিছু কি আমাদের দেশের সাংবাদিকদের কাছ থেকে আশা করা যায়? ভাবা যায় ?
এই মুভিটা মুক্তি পেয়েছে ১৯৭৬ সালে । আজ থেকে ৪৫ বছর আগে । সেই সময়কার টেকনলজির মান কেমন হতে পারে সেটা তো বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না । এতো পুরানো মুভি আমি খুব একটা দেখি না । আমার দেখতে ভালও লাগে না । কিন্তু এই মুভিটা শুরুর পর থেকে এক টানে দেখা শেষ করেছি । স্ক্রিনে মনে হচ্ছিলো যে সত্যিই সত্যিই সেই সমটাকে দেখানো হয়েছে । ওয়াশিংটনের অফিসটাকে একেবারে আমার জীবন্ত মনে হয়েছে । পত্রিকা অফিস গুলো যেমন হয় ঠি তেমন । আমার বারবারই মনে হচ্ছিলো যেন আমি সেই ১৯৭৬ সালেই
মুভিটি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা এবং সেরা চিত্রনাট্য সহ মোট চারটি অস্কার পুরস্কার জিতে নেয় । এই ফিল্মটি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সর্বকালের সেরা ১০০ সিনেমার তালিকায় ৭৭ নম্বরে অবস্থিত ।
দেখতে চাইলে মুভিটা দেখে ফেলতে পারেন । আপনার ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডারের মুভি সার্ভারে পাওয়া যাবে আশা করি মুভিটা । এছাড়া টরেন্টেও পাবেন ।
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া
রিভিউ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৪১