somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পহেলা বৈশাখের স্মৃতি

১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় পহেলা বৈশাখ বলতে আমার কেবল মনে আছে আমাদের পাশের গ্রামে হওয়া মেলাটা ! বৈশাখের স্মৃতি এটাই ছিল সব থেকে চমৎকার । স্কুলে পড়ি । ক্লাস ওয়ান, টু কিংবা থ্রিতে । আমার ভাসা ভাসা মনে আছে যে কারো সাথে প্রথমবারের মত মেলাতে গিয়ে হাজির হয়েছি । এতো মানুষ চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি । কত কিছু বিক্রি হচ্ছে । মাটির জিনিস পত্র থেকে শুরু করে লোহার দা ছুড়ি, বটি । কত রকমের খাওয়ার জিনিস- বাতসা, জিলাপী, শরবত, নানান জাতের ফল । বেলুন পিস্তল সহ কত ধরনের খেলনা । মানুষ খাচ্ছে কিনছে গল্প করছে । আমার যতদুর মনে পড়ে আমি সেবার কিনেছিলাম একটা ছুড়ি আর বাতসা । জিলাপীও কিনেছিলাম ! আমার পকেটে একটা বিশ টাকার নোট ছিল, এটাও মনে আছে । সেই টাকা দিয়েই কেনা কাটা হয়েছিল । এই ঐ মেলাতে যাওয়ার এই স্মৃতি ভাসা এখনও ভেসে ওঠে মনের চোখে !

এরপর প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখ এলেই হাইদারপুরের সেই মেলাতে গিয়ে হাজির হতাম । প্রথম প্রথম কারো না কারো সাথে যাওয়া লাগতো । আমাদের বাসা থেকে মেলায় যাওয়ার ভাড়া ছিল দুই টাকা । পরে হাই স্কুলে উঠলে আর কারো সাথে যাওয়া লাগতো না । তখন যেতাম একা একাই । এমন ভাবেই আামর প্রতিটা পহেলা বৈশাখ কেটেছে । পুরো স্কুল আর কলেজ জীবনে আমার কোন দিন মনে হয় নি যে পহেলা বৈশাখের মেলায় যাওয়া ইসলাম বিরোধী কাজ । সত্যিই আমাদের সাধারন গ্রামের মানুষদেরও কোন দিন এই কথা মনে হয় নি । আমি কোন শুনিও নি !
এতো ধার্মিক মানুষ আমি পেলাম এই অনলাইন আর ফেসবুকে এসে । ঢাকায় আসার পরে !

যাই হোক অনেক দিন আমাদের পাশের গ্রামে মেলা হলেও আমাদের গ্রামের লোকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে আবার থেকে একটা মেলা আমাদের গ্রামেও অনুষ্ঠিত হবে ! তবে ঠিক ঠিক পহেলা বৈশাখের দিন না । পহেলা বৈশাখ পার করে ঠিক পরের প্রথম শুক্রবারে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে । তখন আমি কোন ক্লাসে পড়ি? সম্ভবত ক্লাস টেন কিংবা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার ! আমাদের গ্রামেও তখন থেকে মেলা শুরু হল । তারপর থেকে অবশ্য পাশের গ্রামের মেলায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । আমরা আমাদের গ্রামের মেলাতেই যেতাম । এখানেও ঠিক একই জিনিস পত্র পাওয়া যেত । জাফরপুরের মোড়ে এই মেলা হত প্রতিবার ! করোনার আগ পর্যন্ত এই মেলা হয়েছে নিয়মিত । জানি না এইবারও এই মেলা হয়েছে কিনা ! আজকে শুক্রবার মেলা হওয়ার কথা । তবে রমজান উপলক্ষ্যে নাও হতে পারে এবার ।

পহেলা বৈশাখের আরেকটা স্মৃতি হচ্ছে হালখাতা । এইদিনে দেখতাম আশের সব দোকানে হালখাতাওয়ালা ছোট বড় ব্যানার টাঙ্গানো । মানুষজন দোকানে কিংবা ব্যবসা কেন্দ্রে যাচ্ছে হিসাব পত্র মেটাচ্ছে তারপর ব্যবসায়ী মিষ্টি, বুরিন্দা কিংবা জিপালীর প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছে । আমি নিজে আমার বাবার সাথে কিংবা বাবার পক্ষে বড় বাজারের বেশ কয়েকটা আড়তে গিয়ে বকেয়া মিটিয়ে আসতাম তখন সেই আড়তদার মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিত আমার হাতে । ব্যবসার পাশাপাশি আমাদের একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল । সেখানেও একবার এই হালখাতার আয়োজন করা হয়েছিলো ।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে আরেকটা মজার স্মৃতি মনে আছে খুব । গ্রামের মানুষের মাঝে নানান ধরনের বিশ্বাস কাজ করে । যেমন পরীক্ষার সকালে ডিম খেতে নেই । খেলে পরীক্ষাতে ডিম পাবে । তেমনি ভাবে পহেলা বৈশাখের দিন কারো সাথে ঝগড়া করতে নেই, মারি মারি করতে নেই । তাহলে পুরো বছর কাটবে ঝগড়া করেই । তখন সম্ভবত এইচ কি নাইনে পড়ি । আমাদের ইংরেজি স্যার ছিল গিয়্যাস স্যার । আমরা তার কাছে ইংরেজি পড়তাম । স্যার বললেন যে পহেলা বৈশাখে কোন ছুটি নেই । স্যার পড়াবেন । আমরা অনুযোগ করে বললাম যে স্যার সারা বছর তো পড়ে পড়েই কাটাবো তাহলে! স্যার তখন হেসে বলল বলল, এটা তো ভাল । বছরের প্রথমদিন পড়বি তার মানে সারা বছর পড়তেই থাকবি !


আমি যখন ইন্টার পাশ করি, সেই বার থেকে আমাদের শহরের প্রান কেন্দ্র, টাউন ফুটবল মাঠে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপি বৈশাখী মেলা আয়োজন শুরু হয় । সেই মেলাতে সব স্টল বসতো । জেলার নানান জায়গা থেকে লোকজন আসতো তাদের পন্য নিয়ে আমরা যেতাম সেগুলো দেখতে, কিনতে খেতে । মেলার শেষ দিন কনসার্ট হত ! শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হত । বৈশাখী গান হত ! ছোট বেলা থেকে বৈশাখ বলতে আমি এই জিনিস বুঝে এসেছি । এই জিনিস দেখে এসেছি ।

ঢাকায় যেবার প্রথম এলাম সেইবার পহেলা বৈশাখে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম রমনার বটমূলে । সকাল বেলা । এতো মানুষ ছিল সেখানে ! এতো চমৎকার উৎসব । তখনই আমি আসলে সরাসরি এই অনুষ্ঠানটা দেখেছি । পহেলা বৈশাখের জন্য মানুষ জন আলাদা শাড়ি সেলোয়ার কামিজ কিংবা পাঞ্জাবি কিনেছে । আশের পাশের সবাই এমন পোশাক পরেছে । যদিও আমি পাঞ্জাবি পরেই গিয়েছিলাম তবে সেটা বৈশাখ উপলক্ষে কেনা ছিল না । সেইবারই আসলে স্বচোক্ষে এই ব্যাপার টা অবলোকন করলাম যে প্রচুর মানুষ কেবল বৈশাখকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক কেনে । আমাদের মত সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষদের কাছে নতুন পোশাক কেনার উপলক্ষ হচ্ছে কেবল দুই ঈদ ।

তারপর অবশ্য আর রমনার বটমূলে আমার যাওয়া হয় নি । আসলে ততদিনে সকালের ঘুম আমার কাছে অনেক প্রিয় হয়ে উঠেছে । ঘুম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করতো না । তবে বিকেলে ঠিক ঠিকই বের হতাম ! বিশ্ব বিদ্যালয় জীবনে পহেলা বৈশাখ কাটতো বন্ধুদের সাথেই । একবার মনে আছে বৈশাখে গিয়েছি এক বন্ধুর বাসায় । ওরা জানতো যে আমি বাঙ্গি একদম পছন্দ করি না । দুই বান্ধবী মিলে আমার ভুল ভাল বুঝিয়ে বাঙ্গির জুস খাইয়ে দিল। তারপর সেটা নিয়ে কত হাসাহাসি !

এরপর ফ্রেন্ড সার্কেল আরও ছোট হয়ে এল । সর্বশেষ পহেলা বৈশাখে বের হয়েছিলো ২০১৯ সালে । ধান্ডমণ্ডির ভেতরেই অবশ্য ছিল ।
তারপর তো করোনা এলো । আর বের হওয়া হয় নি । গতবার প্রথম রমজান ছিল এবারও তাই । রোজা রেখে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না ।

পহেলা বৈশাখের এই দিনটা আমার বেশ মনে থাকে আরও একটা বিশেষ কারণে । এই দিনে আমার প্রথম প্রেমিকা আমার প্রোপোজে রাজি হয়েছিল । এই দিন থেকে আমাদের প্রেম শুরু হয়েছিল । এটা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট আছে । তাই আলাদা করে কিছু লিখলাম না আর ! যারা প্রেমিকা সিরিজের গল্প গুলো পড়েছেন তারা পড়ে থাকবেন আশা করি !

পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় জীবনের একটা সংস্কৃতির অংশ । আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি এটাকে বাঙ্গালীর একটা উৎসব হিসাবেই । এর ভেতরে কোন দিন ধর্ম ঢোকে নি । আমার হিন্দু মুসলিম বন্ধুরা মিলে এক সাথে বৈশাখের সময় কাটিয়েছি ! সামনেও তাও কাটাবো আশা করি !

সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা !
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×