somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্যময় সিরিয়াল কিলারঃ জোডিয়াক কিলার

০৪ ঠা জুন, ২০২৩ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিরিয়াল কিলার ব্যাপারটা আমরা বইপত্রেই পড়ি বেশি । আমাদের দেশে এই রকম সিরিয়াল কিলিংয়ের ব্যাপার গুলো খুজে পাওয়া যাবে না বললেই চলে । যাবে না বলে যে নেই সেটা ভাবা কিন্তু ঠিক হবে না । এমন কি আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেই কিন্তু অনেক গুলো কেস পাওয়া গিয়েছে । নেটফ্লিক্সের সুবাদে আমরা সেই ঘটনার গুলো জানি । যাক আমাদের দেশে না থাকুক, পৃথিবীর নানান দেশে এই সিরিয়াল কিলার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে । যার অনেক গুলো সামনে সামনে আসে অনেক গুলো আসে না । অনেক সিরিয়াল কিলার চোখের আড়ালে কাজ করে যায় আবার অনেকেই আছে যারা চায় যে লোকে তাদের চিনুক তাদের কথা জানুক । এমন একজন কিলার হল জোডিয়াক।
জোডিয়াক কিলারের আবির্ভাব ঘটে ১৯৬৮ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে । একের পর এক মানুষ খুন করে এবং সেই খুনের কথা ফোন করে পুলিশকে জানিয়ে পুরো শহরের নজর কাড়ে এই জোডিয়াক কিলার । পরবর্তিতে ক্রিক্টিক মেসেজের মাধ্যমে পত্রিকাতে সে নিজের করা খুনের ব্যাপারে তথ্য চিঠি আকারে পাঠায় । যা পুরো শহরে কৌতুহল এবং আতংকের সৃষ্টি করে । সে দাবী করে যে সে মোট ৩৭ জনকে খুন করেছে । তার ভাষ্য মতে মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য সে স্লেভ মানে দাস দাসী সংগ্রহ করছে । এবং এই পর্যন্ত সে ৩৭ জন দাস দাসী সংগ্রহ করেছে । ৩৭ জনকে সে খুন করেছে যদিও পুলিশ মোট সাত জনের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে এই পর্যন্ত যাদের ভেতরে দুইজন আবার তার হামলার পরেও জীবিত ছিল । আরো কিছু কেসের সাথে তাকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছে বটে তবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে নি ।

জোডিয়াক কিলারের প্রথম ঘটনা ঘটে ২০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে । লেক হরমান রোডের লাভারস লেন এক টিনএজ জুটি তাদের গাড়ির ভেতরে বসে কিছু একান্ত সময় কাটাচ্ছে । ছেলেটির নাম ডেভিড আর্থার ফ্যারাডে আর মেয়েটির নাম বেটি লু জেনসেন । এটিই ছিল তাদের প্রথম ডেট । কিন্তু এটাই যে তাদের জীবনের শেষ ডেট হবে সেটা তারা কেউই কি ভেবেছিলো ! তারা গাড়ির ভেতরে বসে থাকাকালীন সময়ে লোকটি এসে হাজির হয় । এবং তাদের গাড়িতে থাকা অবস্থায় বাইরে থেকে ডেভিডের মাথায় গুলি করে লোকটা । পরে বেটি যখন গাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে যায় তখন তাকে পেছন থেকে গুলি করে । সেখানেই মৃত্যু হয় দুজনের । এটা ছিল জোডিয়াক কিলারের প্রথম ঘটনা ।



এরপর ঘটনা ঘটে পরের বছর জুলার মাসে । এবারের ভিক্টিমের নাম ডারলিন ফেরিন এবং মাইকেল মাজাউ । তারাও একই ভাবে গাড়ির ভেতরে একে অন্যের সাথে একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য ভ্যালেনজোর ব্লু রক স্প্রিং পার্কে হাজির হয় । রাত একটু গভীর হলে তারা খেয়াল করে একটা গাড়ি এসে থেমেছে এবং গাড়ি থেকে নেমে একজন লোক হাতে টর্চ লাইট এবং পিস্তল নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে । প্রথমে দুজনেই ভেবেছিলো যে হয়তো লোকটা কোন পুলিশের অফিসার । নির্জন স্থানে গাড়ি দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসছে । যখন লোকটি সামনে এল তখন দুজনকেই অবাক করে দিলো তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লো । মোট ৫টি গুলি করলো দুজনকে । তারপর আবার ফিরে গেল । তবে মাজাউয়ের ব্যাথায় গোঙ্গানীর আওয়াজ শুনে লোকটা আবার ফিরে এল এবং আরো দুটো করে গুলি করলো ।



এর কিছু সময় পরে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে একটা ফোন কল এসে হাজির হয় । ফোন করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি পুলিশকে জানায় যে ব্লু রক স্প্রিং পার্কে দুজন গুলি বিদ্ধ অবস্থায় পরে আছে এবং সে নিজেই গুলি করেছে । এবং সে এটাও স্বীকার করে যে গতবছর লেক হরমনে সে দুটো খুন হয়েছিলো সেগুলোও সে নিজেই করেছে ।

পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হয় । মাজাউ আর ফেরিন তখনও জীবিত ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে দিন ফেরিন মারা গেলেও মাজাউ বেঁচে যায় । তার মুখ থেকেই পরবর্তিতে পুরো ঘটনা শুনতে পায় পুলিশ । এবার পুলিশ একটু নড়ে চড়ে বসে । মাজাউ সুস্থ হলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনি সম্পর্কে । তার বর্ণনা অনুসারে জানা যায় যে খুনি ছয় ফুটে মত লম্বা, বয়স হবে ৩০ এর ভেতরে । ভারী স্বাস্থ্যের অধিকারি । এবং গাড়ির নম্বর প্লেট থেকে ধারণা করা হয় সে ক্যালিফোর্নিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা সে ।

এরপর ঘটে আরেক চমকপ্রদ ঘটনা । একই বছর আগস্ট মাসে স্থানীয় তিন পত্রিকায় একই রকম তিনটি চিঠি গিয়ে হাজির হয় । চিঠির কোন মেইলে আসে নি । ধারণা করা হয় যে চিঠিটা কেউ হাতে করেই দিয়ে গেছে অফিসের মেইলবক্সে । কে দিয়ে গেছে সেটা অনুমান করা খুব একটা কষ্টকর নয় । সেই তিনটি চিঠির সাথে তিনটি সাংকেতিক ভাষায় লেখা ক্রিপ্টোগ্রাম যুক্ত ছিল । চিঠি লেখা হয়েছিলো পত্রিকার এডিটরের উদ্দেশ্যে । সেখানে সে নিজেকে ব্লুরক পার্ক এবং লেক হরমোনের হত্যাকারী হিসাবে দাবী করে । এবং সাথে প্রমান হিসাবে এমন কিছু তথ্য উল্লেখ করে যা পুলিশ ছাড়া অন্য সাধারণ জনগনের জানার কথা না । চিঠি দাতা এও বলে যে যদি এই চিঠি পত্রিকার প্রথম পাতায় না ছাপানো হয় তাহলে সে বোমা মেরে আরও অনেক লোক মেরে ফেলবে ।



তবে পত্রিকা খুনীর খবর প্রথম পাতায় না ছেপে ভেতরের পাতায় প্রকাশ করে । সেই সাথে স্থানীয় পুলিশ চিফের বক্তব্যও ছাপা হয় ঠিক তার পাশে । সেখানে বলা হয় যে এই চিঠি যে আসল খুনীই লিখেছে সেটার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না ।

এই চিঠি পত্রিকা ছাপার কয়েক দিন পরে আরও একটা চিঠি এসে হাজির হয় । সেখানে প্রথমবারের মত খুনী নিজেকে জোডিয়াক বলে সম্মোধন করে । এবং এই চিঠিটা মূলত ছিল পুলিশ চিফের উদ্দেশ্য যে কিনা চিঠির প্রেরক আসলেই আসল খুনী কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ করেছিলো । এই চিঠিতে জোডিয়াক খুন গুলোর এমন সব বর্ণনা তুলে ধরে যা পুলিশ কখনই সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরে নি । এটা জানতে পারে কেবল পুলিশের লোকজন এবং যে খুনটা করেছে সে নিজে । এবং সেই বর্ণনা গুলো সব সঠিক ছিল । এখান থেকেই পুলিশ বুঝতে পারে যে চিঠি প্রেরকই আসল খুনী।

জোডিয়াক চিঠির শেষে এও জানায় যে সে যে সাংকেতিক চিঠি পাঠিয়েছে সেটার পাঠ্যউদ্ধার যদি পুলিশ করতে পারে তাহলে তাহলে সে কে এবং কেন এই কাজ করছে সেটাও জানা যাবে । তারপর সেই সাংকেতিক চিঠি পত্রিকায় ছাপা হয় । পুলিশের এক্সপার্ট তো বটেও সাধারণ জনগনও এই ক্রিপ্টোগ্রাম পাঠ্য উদ্ধার করতে লেগে যায় । এবং মাত্র তিন দিনের ভেতরে চিঠির পাঠ্য উদ্ধার হয়ে যায় । এবং সেটা কিন্তু কোন পুলিশের এক্সপার্ট করে না । ক্রিপ্টোগ্রামের পাঠ্যউদ্ধার করে স্কুলের একজন গণিত শিক্ষক এবং তার স্ত্রী। তাদের নাম ছিল ডোনাল্ড এবং বেটি হারডেন । এই কোডটি ভাঙ্গতে তাদের সময় লেগেছিলো ২৪ ঘন্টারও কম সময় ।



চিঠিতে যা লেখাছিলো তার সারমর্ম ছিল অনেকটা এই রকমঃ
সে মানুষ খুন করতে কারণ মানুষ খুন করা মজার একটা কাজ । পশু শিকার করা থেকেও মানুষ খুন করা মজা বেশি। মানুষ হচ্ছে সব থেকে বেশি ভয়ংকর প্রাণী । মরার পর মানুষেরা সব স্বর্গে জন্ম নেবে এবং সে যাদেরকে খুন করেছে তারা স্বর্গে তার স্লেভ বা দাস হিসাবে জন্ম নেবে । সে মূলত পরকালের জন্য স্লেভ সংগ্রহ করছে ।
যদিও সে বলেছিলো যে কোড ব্রেক করতে পারলে তার পরিচয় জানা যাবে তবে চিঠিতে সে নিজের পরিচয় দেয় নি । পরিচয় দিলে পুলিশ তার স্লেভ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিবে ।

গোয়েন্দাদের এই কোডের ধরণ দেখে সন্দেহ হয়েছিলো জোডিয়াক সম্ভবত নেভিতে কাজ করতো কিংবা করে । কারণ নেভিতেই এই ধরনের কোড ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।


জোডিয়াক এর পরের আক্রমন করে একই বছর ২৭শে সেম্টেম্বর । লেক বেরিয়েসায় ব্রায়ান হার্টনেল এবং সিসিলিয়া শেপার্ড গিয়েছিল নিজেদের মত সময় কাটাতে । এমন সময়ে সেখানে এক জোডিয়াকের মুখ পড়ে উচু লম্বা লোক এসে হাজির হয় । তারা প্রথমে যদিও ভেবেছিলো যে খুনি কেবল তাদের গাড়ি চুরি করার জন্য এসেছে কিন্তু একটু পরেই তাদের সে ভুল ভাঙ্গে । দুজনকে বেশ কয়েকজন ছুরি দিয়ে আঘাত করে । তারপর তাদের গাড়িতে নিজের চিহ্ন, তারিখ আর কী দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটা লিখে চলে যায় জোডিয়াক । এরপর একটা পে ফোন থেকে ফোন করে খুনের লোকেশনের কথা জানায় ।



খোজ নিয়ে দেখা যায় যে খুনী ফোনটা করেছিলো পুলিশ স্টেশনের খুব কাছেই । কয়েক ব্লকের ভেতরেই । অন্য দিকে সেটা ছিল খুনের স্পট থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দুরে । খুনি যে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ, খেলা করছিলো করছিল সেটা বুঝতে কারো বাকি ছিল না ।

ব্রায়ান আর সিসিলিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সিসিয়ালে দুদিন পরে মারা যায় অন্য দিকে ব্রায়ান বেঁচে ওঠে । তার কাছ থেকেও জোডিয়াকের দেহের একই রকম বর্ণনা পাওয়া যায় । ঘটনা স্থাল থেকে যে জুতোর ছাপ পাওয়া যায় তা ছিল ১০.৫ এবং মাটিতে জুতার ছাপ দেখে ধারণা করা হয় যে তার ওজন হবে কম করে হলেও ৯০ থেকে ১০০ কেজি ।

এই ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে ১১ অক্টোবর জোডিয়াক আবারও হামলা চালায় । এইবার সে একজন ট্যাক্সির যাত্রীর বেশে । প্রেসিডিয়ো হাইটের ম্যাপল স্ট্রিটে যাওয়ার জন্য এক যুবক ট্যাক্সিতে উঠলো । নির্ধারিত স্থানে থামা বাদ দিয়ে কয়েক ব্লকে দুরে গিয়ে থামলো ট্যাক্সি চালক । ঠিক তখনই যাত্রী পিস্তল বের করে গুলি চালালো ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে । তারপর ড্রাইভারের মানিব্যাগ চাবি নিয়ে পালিয়ে গেল । সেই সাথে নিয়ে যায় রক্তাক্ত শার্টের টুকরো। ঘটনার স্থলে, রাস্তার বিপরীত দিকের একটা বাড়ি থেকে তিনজন কিশোর ছেলে এই দৃশ্য দেখে ফেলে । তারা সাথে সাথে পুলিশকে ফোন করে তা জানায় কিন্তু এখানে একটা ছোট্ট ভুল হয়ে যায় অপারেটরের দ্বারা । সে বর্ণনা গ্রহনের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গের পরিবর্তে খুনীকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে তথ্য গ্রহন করে । ঘটনা স্থলের একদম কাছেই একজন পুলিশ অফিসার ছিল । সে রেডিও মারফত জানতে পারে যে একজন কৃষ্ণাঙ্গ লোককে খোজা হচ্ছে । এদিকে তার ঠিক সামনে দিয়েই এক শেতাঙ্গ হেটে চলে যায় কিন্তু অফিসারটি তার দিকে নজরই দেয় না ।

তিনজন বালক যে বর্ণনা দিয়েছিলো সেটাও জোডিয়াকের আগের বর্ণনার সাথে মিলে যায় খুব ভাল ভাবেই । ট্যাক্সি ড্রাইভার পল স্টাইনের ট্যাক্সি সার্চ করে একটা রক্তমাখা হাতের ছাপ পাওয়া যায় । ধরে নেওয়া হয় যে এটাই সম্ভবত খুনীর হাতের ছাপ । এছাড়া আরও অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় কোথা হতে খুনি উঠেছিলো । যে তিনজন কিশোর দুর থেকে সরাসরি খুনিকে দেখেছিলো তারা চেহারার বর্ণনা দেন । যদিও অন্ধকারে পরিস্কার চেহারার বর্ণনা তারা দিতে পারে নি তারপরও খুনীর চেহারার একটা স্কেচ তৈরি করা হয় ।
এই ঘটনার তিন দিন পর ১৪ অক্টোবর জোডিয়াক আবারও একটা চিঠি পাঠায় । সেখানেই সে জানায় যে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে সে নিজেই খুন করেছে । এবং প্রমান স্বরূপ ট্যাক্সি ড্রাইভারের রক্তমাখা শার্টের একটা অংশ পাঠায় চিঠির সাথে । তারপর সে জানায় যে স্কুলের বাচ্চা খুনের জন্য চমৎকার টার্গেট । এই কথাতেই পুরো শহরে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । তখন প্রতিটি স্কুল বাসের সাথে একটা করে পুলিশ অফিসার যুক্ত করে দেওয়া হয়।

৮ নভেম্বর আরেকটি চিঠি পাঠায় জোডিয়াক । তবে এই চিঠিতে সে কি লিখেছিলো সেটার অর্থ বের করা সম্ভব হয় নি । পরদিন সে আরেকটি চিঠি পাঠায় । সেখানে জোডিয়াক জানায় যে পল স্টাইণকে খুন করে চলে যাওয়ার সময় এক পুলিশ অফিসার তাকে দাড় করিয়েছিলো কিন্তু তাকে বেশি কিছু না জিজ্ঞেস করে চলে যেতে দেয় । এবং এই চিঠি পাঠানোর কারণে তার কাজে অনেক বাঁধা আসছে । এরপর থেকে আর যে কোন প্রকার যোগাযোগ করবে না বা নিজের খুনের কথা পুলিশকে জানাবে না ।

এরপর আরেকটি ঘটনা ঘটে পরের বছর মার্চ মাসে । ক্যাথলিন জোন্স তার মেয়ের সাথে করে তার মায়ের বাসায় যাচ্ছিলো গাড়িতে করে । তখন সে গর্ভবতি ছিলো । রাস্তায় চলার সময় তার পেছনে একটা গাড়ি বারবার হেড লাইট জ্বালিয়ে তাকে সংকেত দিতে থাকে । ক্যাথলিন গাড়ি থামায় । চালক নেমে এসে বসে যে তার গাড়ির পেছনে সমস্যা দেখা দিয়েছে । তার পেছনের চাকা নড়বড়ে হয়ে আছে । এবং সত্যি সত্যি যখন ক্যাথলিন পরে গাড়িটা চালাতে যায় গাড়ির চাকা খুলে যায় । লোকটি তখন জানায় যে তারা চাইলে তার সাথে নিকটস্থ কোন গ্যাস স্টশনে যেতে পারে । সেখান থেকে মেকানিক নিয়ে আসতে পারে ।

ক্যাথলিন তার মেয়েকে সেই লোকের গাড়িতে উঠলো কিন্তু গ্যাসস্টেশন পার হয়ে গেলেও লোকটি গাড়ি না থামানোতে ক্যাথলিন চিন্তিত হয়ে পড়ে । বারবার গাড়ি থামাতে বলে ।প্রায় দেড় ঘন্টা গাড়ি চালানোর পরে লোকটি যখনই গাড়ি থামালো তখনই ক্যাথলন তার মেয়েকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে লুকিয়ে পড়লো । লোকটিও নামলো তাদের খোজার জন্য কিন্তু অন্ধকারের ভেতরে তাদের খোজ না পেয়ে এক সময় লোকটা চলে গেল । ক্যাথলিন নিকটস্থ পুলিশ স্টশনে গিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে সেখানে ডোডিয়াকের স্কেচ দেখে দাবি করে এই লোকই তাকে এবং তার মেয়ের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো ।

এরপর পুরো বছর ধরেই জোডিয়াক নানান চিঠি পাঠাতে থাকে । চিঠিতে সে জানায় যে এই পর্যন্ত সে ১০জনকে খুন করেছে । যদিও পুলিশের কাছে ১০ জনের লিস্ট ছিল না । ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সার্জেন্ট ব্রায়ান মারা যায় এক বোমা হামলায় । চিঠি দিয়ে জোডিয়াক দাবি করে সে এই বোমাহামলাটা করেছে । সে চিঠিতে বোমা বানানো উপকরনের বর্ণনা দেয় যা সঠিক বলে প্রমানিত হয় ।
জিডিয়াক সার্জেন্ট রিচার্ড রেডটিককে হত্যা করার কথা বলেছিলো । এছাড়া জুলাই মাসে আরেকটা চিঠিতে জানায় যে ক্যাথলিন তার মেয়েকে এবং তার মেয়েকে সেই গাড়িতে তুলে নিয়েছিলো । তাদের গাড়িটিও সেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো ।



জোডিয়াকের শেষ চিঠি আছে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে । সেই চিঠিতে সে দাবি করে সে জীবনে মোট ৩৭ টি খুন করেছে । যদিও পুলিশের এই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে । এরপর জোডিয়াকের আর কোন চিঠি আছে নি ।

কে ছিল এই ডোডিয়াক কিলার । আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে নি কে ছিল জোডিয়াক । তবে পুলিশ অনেককেই সন্দেহ করেছে । এদের ভেতরে অন্যতম ছিল অর্থার লেইগ এলান । এলান ১৯৯২ সালে মারা যায় । তার জীবদ্দশায় তাকে অনেক বারই জেরা করা হয়েছে । অনেকবার তার বাড়ি সার্চ করা হয়েছে । তবে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় নি সেই জোডিয়াক কিলার কিনা ! ১৯৯১ সালে তার বাড়িতে আরেক দফা সার্চ করা হয় কিন্তু দরকারি কোন কিছুই পাওয়া যায় না । তার মৃত্যুর দুই দিন পরে পুলিশ আবারও তার বাড়ি সার্চ করে এবং কিছু জিনিস জব্ধ করে নিয়ে যায় । মজার ব্যাপার হচ্ছে তার জোডিয়াকের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মাইকেল মাজাউ ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে ফটো ফাইল দেখে পুলিশের কাছে বলে যে এই লোকই তাকে গুলি করেছিলো ।
অন্যতম আরেকজন সাসপেক্ট হল গ্রেরি ফ্রান্সিস পোস্টে । পোস্টে ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যায় । আমেরিকার কোল্ড কেইস ইনভেস্টিগেশনের একটা টিম দাবি করে যে গ্রেরিই হল জোডিয়াক কিলার । এমন কি তারা ডিএনএ এভিডেন্স পাওয়ারও দাবী করেন । এছাড়া এও দাবী করে যে পোস্টে অন্তত ছয়জনের কাছে স্বীকার করেছে যে সেই ছিল জোডিয়াক কিলার । তবে এফবিআই বলছে নতুন কোন ইনফরমেশন তারা পায় নি ।
এছাড়া আরও ডজন খানেকের উপরে মানুষকে সন্দেহ করা হয়েছে জোডিয়াক হিসাবে । তবে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বের করা যায় নি । আজও কেউ জানে যে জোডিয়াক কিলার আসলে কে ছিল !

জোডিয়াককে নিয়ে বই লেখা হয়েছে, বানানো হয়েছে মুভিও । এই মুভিতে অভিনয় করেছে আমাদের পছন্দের আয়রন ম্যান, হাল্ক এবং ভিলেন মিস্টেরিও।


মুভিটা ইউটিউবে রয়েছে দেখছি যদিও থাকার কথা না ।










রেফারেন্সঃ যে যে লেখা গুলো পড়েছি এই পোস্টটা লিখতে তার লিস্ট
Zodiac Killer
THE ZODIAC KILLER
জোডিয়াক কিলার
জোডিয়াক কিলার
Cold case team says Zodiac Killer ID'd, linking him to another murder
এবং অবশ্যই চ্যাট জিপিটি

এছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন
History's Greatest Mysteries
Who the Zodiac most likely is
The Story of the Zodiac Killer


ছবি
০১
০২
এবং উইকিপিডিয়া ফটো এলবাম
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২৩ সকাল ১০:২৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×