somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলাইনে প্রোপাগাণ্ডা যেভাবে চালানো হয় .... (বাস্তব উদাহরনসহ)

২২ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফেসবুক এমন একটা জায়গা যেখানে যেকোন তথ্য আপনি অর্ধেক সত্য করে লিখলেও আপনাকে খুব একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না । মানুষ সেটা নিয়েই লাফানো শুরু করবে । গতকালকের রেসকিউ ব্রেধের পোস্টটা যদি পড়ে থাকেন তাহলে ওটা নিয়ে ফেসবুকের পোস্ট গুলোর ব্যাপার হয়তো জেনে থাকবেন । ফেসবুকে ঐ পোস্টটা যখন আমি দেখি আমি নিজেও খানিকটা সময় ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম । সেখানে যে ছবিটা ব্যবহার করে হয়েছিল সেটা যে এডিটেড হতে পারে প্রথমে আমার সেটা মনেই হয় নি । আমি ছবিটা দেখলাম তারপর স্ক্রল করে চলে গেলাম নিচে ।

পুরো ফেসবুকের ব্যাপারটাই এখন এই রকম হয়ে গেছে । ফেসবুকে আমরা যা দেখি তা নিয়ে আমরা কখনই বেশি ভাবি না । দেখি রিএকশন দেই, তাৎক্ষণিক মন্তব্য করি তারপর ক্রল করে নিচে চলে যাই। কন্টেন্ট টা নিয়ে আর ভাবি না । অন্য কিছুর দিকে চলে যাই আবার । এবং এর ফলে একটা ভয়ংকর ব্যাপার আমাদের সাথে আপনা আপনি ঘটে যায় তা হচ্ছে তা হয়তো আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি না । তা হচ্ছে ঐ যে ক্ষণিকের জন্য আমরা যে তথ্য (অর্ধ সত্য কিংবা বিকৃত)টা দেখলাম সেটা আমাদের মাথার ভেতরে ঢুকে যায় । হয়তো সব ঢোকে না তবে ঢোকে । পরে কোন একটা সময়ে এই বিকৃত তথ্য আমাদের অবচেতন মন থেকে বের হয়ে আসে । মানে মনে হবে যে সত্যিই আমাদের বাচ্চাদের টেক্সট বইয়ে এই রকম একটা ছবি দেওয়া কিছু ছাপা হয়েছে ।

অথচ আমাদের কী করা দরকার ছিল? পোস্টের ছবিটা দেখে যখন মনে হল যে এমন ছবি দেওয়া উচিৎ হয় নি, তখনই আমার মনে হওয়া দরকার ছিল যে এই ছবিটা কি আসলেই অথেনটিক? এটা বিশ্বাস করার আগে একটু খুজে বের করা কি দরকার?

এই প্রশ্নটা কেউ করে না । আসলে কারোই এতো সময় নেই । এবং এই সুযোগটাই নিয়ে ফেসবুকে প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয় । এবং আমরা ঐ তাৎক্ষণিক ভাবে সেসব দেখি এবং যেহেতু তাতে কিছু সত্য থাকে তখন মনে হয় আরে তাই এটা তো এমনই । কিন্তু এই সত্যের মাঝেও যে আরো সত্য থাকতে পারে, সেটাও যে স্বাভাবিক ভাবেই হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা ভাবিও না ।

এই রকম একটা উদাহরন দিই তাহলে বুঝবেন আরো ভাল করে । কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা পোস্ট বেশ চলল । পোস্টের বক্তব্য হচ্ছে এই অর্থ বছরে বাজেটে প্রাইম মিনিস্টার কার্যালয় চালাতেই খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা । এটা নিয়ে একটা স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছে । এতো খরচ কেন লাগে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে । এটা একটা সত্য কথা । মানে কার্যালয়ে এতো টাকাই দেওয়া হয়েছে । কিন্তু ঠিক এর নিচেই কমেন্টে সেই একটা ট্রিক্স খাটিয়েছে । সেখানে ভারত আর পাকিস্তানের পিএম অফিসের খরচ তুলে ধরেছেন । ভারতে লাগে ৫০ কোটি পাকিস্তানে মাত্র ৪ কোটি !

এখানেই আসল খেলা । কিভাবে দুইটা সত্য একই স্থানে ব্যবহার করে একটা মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো যায় সেটার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরন !

এবার কেবল একটা এক পক্ষ চিন্তা করেন, যেখানে কেবল মাত্র পিএম অফিসের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার খরচের কথা লিখে প্রশ্ন করা হয়েছে । আর অন্য কোন তথ্য দেওয়া হয় নি । এখন আপনি ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে পোস্টটা সামনে এল ! আপনি কী ভাববেন?
তেমন কিছুই কিন্তু ভাববেন না । কারণ পিএম অফিস কিভাবে কি খরচ হয় সেইটা নিয়ে আপনার আইডিয়া না থাকারই কথা । আর থাকলে তো উত্তর আপনার জানাই ।

কিন্তু যখনই আপনি নিচে দেখলেন ভারতের পিএম অফিসের খরচ মাত্র ৫০ কোটি, পাকিস্তানের ৪ কোটি সেখানে আমাদের সাড়ে চার হাজার কোটি ! এই যে একটা কম্প্যারিজনে চলে এলেন তখন আপনার ব্রেনে একটা ধা্ক্কা দিল । দিল না?
এর ধা্ক্কা দেওয়ার ফলে আপনি এর পরে আর কিছু চিন্তাই করবেন না । বেশির ভাগই চিন্তা করে না । তাদের চোখে সামনে কেবল থাকে যে অন্য দেশে মাত্র ৫০ কোটি আমাদের সাড়ে চার হাজার কোটি । কত টাকা চুরি করে রে ! শ্লার $%^# । ইত্যাদি ইত্যাদি !

এবং ঐ পোস্টটা যত জায়গাতে শেয়ার হয়েছে সব স্থানেই এই কম্পেয়ার করেই শেয়ার হয়েছে ।

এবার আসি এই দুই তথ্য সত্য হওয়ার পরেও সমস্যাটা কোথায় ?
মানে আমাদের পিএম অফিসের বরাদ্দ সাড়ে চার হাজার কোটি । সত্য !
ভারতের পিএমন অফিস খরচ ৫০ কোটি । সত্য !
পাকিস্তানের ৪ কোটি। এটাও সত্য ।

তাহলে তো সব ঠিকই আছে । এটা তো প্রোপাগাণ্ডা হতে পারে না ।

পারে । কারণ এখানে কিছু সত্য যেমন দেওয়া আছে । তেমনি কিছু তথ্য ইচ্ছে করেই দেওয়া হয় নি ।

আমাদের পিএম অফিসের খরচ এতো বেশি কেন তাহলে ?

এখানেই হচ্ছে আসল খেলা । আমাদের পিএম অফিসের অধিনে বেশ কিছু দপ্তর রয়েছে । যেমন অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তপক্ষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি প্রকিয়াকরন এলাকা এইরকম আরো অনেক কয়েকটা দপ্তর আছে । মানে হচ্ছে এই সব দপ্তপের অধিনে যত খরচ সব জমা হবে এই পিএম অফিসের অধিনে । এছাড়াও পিএম অফিসের অধিনেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয় । এমন একটা প্রকল্প হচ্ছে আশ্রয়ন - ২। এর অধীনে প্রায় বারোশ কোটিটা দেওয়া হয়েছে ।
ভারত কিংবা পাকিস্তানের পিএম অফিসের অধীনে কিন্তু এমন কিছু নেই । ওখানে কেবল অফিসের খরচই দেওয়া হয়েছে ।

তাহলে এইবার ব্যাপারটা ধরতে পারছেন তো?

আমাদের ফেসবুকের এই প্রোপাগ্যান্ডিস্ট কিন্তু এই তথ্য জানে । তারা জানে যে আমাদের পিএম অফিসের আন্ডারে অনেক গুলো দপ্তর রয়েছে । তাদের খচর যোগ হয় কার্যালয়ের আন্ডারেই । তারাও জানে যে পাকিস্তান কিংবা ভারতের পিএম অফিসের আন্ডারে এসব কিছু নেই । সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের আধিনে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা অন্য সব তথ্য না দিয়ে কেবল মাত্র অর্থের পরিমানটা দিয়ে পোস্ট দিয়েছে । উদ্দেশ্য একটাই । তাৎক্ষনিক ভাবে মানুষের মনে একটা ধাক্কা দেওয়া, একটা নেগেটিভ ইম্প্রেশন সৃষ্টি করা । কারণ তারা খুব ভাল করেই জানে যে যারা যারা সেই পোস্ট পড়বে তারা এটা তাৎক্ষণিক রিএকশন দেখাবে, মন্তব্য করবে হয়তো শেয়ার করবে তারপর স্কল করে চলে যাবে । তবে এখানে যে সমস্যা টা হবে যে তাদের মনের ভেতরে একটা তথ্য জমা হয়ে থাকবে । আমাদের ভারত পাকিস্তানের থেকেও পিএম অফিসের খরচ অনেক বেশি ।

ঠিক এই ভাবেই সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে কিংবা কিছু সত্য ইচ্ছে করে প্রকাশ না করে তথ্য উপস্থান করা হয় । ফলে দেখা যায় পুরো তথ্যটা একেবারে ভিন্ন ভাবে মানুষের মনে নেগেটিভ ইম্প্রেশন সৃষ্টি করে । যেমন ধরেন একটা আপনাদের পরিচিত কোন ছেলের নাম রহিম । ফেসবুকে রহিমের একটা ছবি প্রকাশ পেয়েছে । সেখানে দেখা যাচ্ছে রাতের বেলা সে একটা মেয়ের হাত ধরে কোথাও যাচ্ছে । নিচে যদি লেখা থাকে ''রাতের বেলা রহিম একটা মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে'' । ছবি যেহেতু দেখা যাবে তাই মানে সত্যি এই প্রশ্ন জাগবে যে রাতের বেলা একটা মেয়েকে নিয়ে কই যায় সে ! কিন্তু পুরো সত্য যদি হয় যে ঐ মেয়েটা রহিমের স্ত্রী যার সাথে রাতের বেলা বাসায় ফিরছিলো । তাহলে ?
আগের লাইন দিয়ে রহিমের ব্যাপারে নেগেটিভ চিন্তা আসবে সবার মাঝেই । কিন্তু যখনই পুরো তথ্য চলে এল তখন মনে হবে এটা তো কিছুই না । স্ত্রীর সাথে বাসায় ফিরতেই পারে ! খুবই স্বাভাবিল ঘটনা ।

এই পোস্টের উদ্দেশ্য আসলে কিভাবে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয় সেটার একটা বাস্তব উদাহরন দিয়ে বুঝানো । এখানে বিপক্ষ হচ্ছে প্রোপাগ্যান্ডিস্ট। এবং এই প্রোপাগ্যান্ডিস্ট সব দলেই আছে ।

এই কারণে অনলাইনে যে কোন তথ্য দেখার পরে তা চোখ বুঝে বিশ্বাস করে বসবেন না । আগে একটু খোজ খবর নিন । একটু নিজের বুদ্ধি দিয়ে খানিকটা বিচার করার চেষ্টা করুন । তারপর বিচার করুণ ।


ছবিটি পিক্সাবে থেকে সংগ্রহ করা।


এছাড়া অনুসাঙ্গিক পঠন
রিডিং ০১
রিডিং ০২
রিডিং ০৩
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৯:৫৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×