ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (পর্ব-৫)
মামু চাচা হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করেন,
- কি মিয়া সাহেব, কোন দরকার টরকার পড়লো নাকি?
রাকিব মিয়া নিজের গাম্ভীর্য্য বজায় রেখে উত্তর দেন,
-হ্যাঁ মিস্ত্রী ভাই, একটু দরকার পড়েছে বলেই তো তোমার কাছে এলুম।
-তা এমন দোনামোনা কেন করছ? কি দরকার বলেই ফেলো না..
-আসলে আমি এসেছিলুম কাঠের চৌকির ব্যাপারে তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে। কিন্তু তুমি তো সব বাঁশের কাজ করো। তাই একটু চিন্তায় আছি, তুমি কাজটা পারবে কিনা। আর না পারলেও কোথায় গেলে মিস্ত্রি পাব তার যদি একটু সন্ধান দিতে পারো..
মোড়ল সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই মামু চাচা জোরে জোরে হেসে উঠলেন।
কিছুক্ষণ নীরব দর্শক থেকে কিছুটা বিরক্তি সহকারে মোড়ল সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করেন,
- আরে! আমি কি তোমার সাথে মজা করছি যে এতো হাসাহাসি করতে হচ্ছে?
মামু চাচা বুঝলেন তার এভাবে হেসে ওঠাটা ঠিক হয়নি। মোড়ল সাহেব বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। যে কারণে ওনার প্রশ্ন শুনে তৎক্ষণাৎ হাসি বন্ধ করলেও নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে পারেননি। আরো কিছুক্ষণ মুখ নিচু করে দম ধরে রইলেন।হাসি যেন মনের মধ্যে গুমরে গুমরে উঠতে লাগলো।
রাকিব মিয়া বিষয়টি লক্ষ্য করে আবার প্রশ্ন করেন,
-আচ্ছা মিস্ত্রী ভাই, তুমি সেই কখন থেকে এমন করে হেসে যাচ্ছ। কিন্তু কেন?
এবার নিজেকে সামলে নিয়ে,
- মিয়া সাহেব আমার হাসাটা হয়তো তোমার খারাপ লাগতে পারে। তবে যে জন্য হাসা সেটাই তোমার অজানাকে কিনা। আমার বাপ দাদার আসল কাজ-ই ছিল কাঠের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে দাদা শহরে কাষ্ঠ শিল্পী হিসেবে কাজ করে গেছে। দাদির চলে যাওয়ার পরে দাদার মানসিকতা বদলে যায়। যে কারণে পাকাপাকিভাবে গ্রামে চলে আসে।পরে বাকি জীবন এখানে বাঁশের কাজ করেই অতিবাহিত করে। আমি আর আমার বাপ শহরে কাঠের দোকানে থেকে যায়।পরে কোন একটি কারণে আমাদের কাজটিও চলে যায়।বাধ্য হয়ে আমরা সকলে গ্রামে ফিরে আসি এবং বাঁশের কাজে কাজে লেগে যাই। ছিলাম কাষ্ঠ শিল্পী হয়ে গেলাম বাঁশ মিস্ত্রি।
-শহরের কাজ ছেড়ে দিলে কেন তোমরা?
-সে অনেক কথা। আজ বরং থাক। সময় হলে অন্য একদিন বলবো।
এবার হাসতে হাসতে রাকিব মিয়াই বলে উঠলেন,
-ভাগ্যিস তোমাদের সে সময় কাজটি চলে গিয়েছিল, নইলে আজ যে আমি বড় বিপদে পড়তাম মিস্ত্রী ভাই।
কথাটা শুনেই মামু চাচার মুখের অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ বদলে গেল।ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে করুণভাবে মিয়া সাহেবের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে রইলেন। রাকিব মিয়া বুঝতে পারলেন যে একটু বেসুরে কথা বলে ফেলেছেন।হয়তো কাজ ছাড়ার পিছনে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা থাকতে পারে যে কারণে মানুষটার মুখের অবয়ব মুহূর্তে বদলে গেছে। পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে তিনি আবার বলে উঠলেন,
-সে তুমি যাই বলো মিস্ত্রি ভাই আমি কিন্তু ঠিক জায়গাতে এসে পড়েছি।
এবার মুখে স্বভাবসুলভ হাসি নিয়ে মামু চাচা পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন,
- তা তোমার কি কাজ করতে হবে মিয়া সাহেব?
রাকিব মিয়া মেয়ের বাড়ির ঘটনাটা খুলে বললেন। এবং পরামর্শ চাইলেন এমতাবস্থায় ঠিক কীভাবে তিনি আশু সমস্যা থেকে উদ্ধার হবেন। বিজ্ঞের মতো মাথা চুলকাতে চুলকাতে মামু চাচা বলে উঠলেন,
-তাইতো সময় তো বড্ড কম। তবে তুমি যদি আমার পরামর্শ শোনো তাহলে একটা কথা বলি।
রাকিব মিয়া আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করেন,
-কি কথা?
-দেখো মিয়া সাহেব, কাল বা পরশু তোমার মেয়ে জামাই আসবে। এত কম সময়ে চৌকি করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ আগামীকাল যদি আমরা শহরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাঠ কিনে আনি এবং পরের দিন থেকে কাজ শুরু করে দেই, সেক্ষেত্রে দু-একদিন বাঁশের চৌকিতে থাকলেও মেয়ে জামাই খুব একটা অখুশি হবে না। উল্টে জামাইয়ের কাছে বরং ভিন্ন প্রকৃতির বাঁশের চৌকিতে থাকাটা নতুন হাওয়ায় বেশ আকর্ষণীয় হতে পারে। এভাবে কটা দিন যেতে না যেতেই ততদিনে আমাদের কাঠের চৌকিও তৈরি হয়ে যাবে।
-অ্যা অ্যা.অ্যা. তোমার পরামর্শটা মন্দ নয়। আর এছাড়া তো অন্য কোন উপায় নেই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাকিব মিয়া আবার বলতে লাগলেন,
-বেশ তাহলে এটাই থাক। আগামীকাল আমরা কাঠ কিনতে যাব। রত্নাকে একটু আগেভাগে বুঝিয়ে বলতে হবে এই যা..
-তবে এখানে আর একটা সমস্যা আছে মিয়া সাহেব, মামু চাচা বললেন।
-আবার কি সমস্যা?
-সমস্যা হলো আমরা যখন শহরে কাঠের দোকানে কাজ করতাম, তখন যন্ত্রপাতি সব দোকান মালিকের ছিল। পাশেই ছিল আমাদের থাকার জায়গা। আমরা খালি হাতে যেতাম। কাজ সেরে আবার ঘরে আসতাম খালি হাতে। আর এখনতো বাঁশের কাজ, সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি দিয়েই কাজ মিটে যায়।
-তাহলে উপায়! বলে রাকিব মিয়া মামু চাচার দিকে চেয়ে রইলেন।
-উপায় বলতে কাঠের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গুলোও কিনতে হবে।
-ওসব কিনতে কেমন খরচ পড়বে?
-তাহলে তো তুমি আমার সেই পুরোনো কথাটা মনে করিয়ে দিলে মিয়া সাহেব। বাপের সঙ্গে দোকানে কাজ করতে করতে একদিন ঠিক এই প্রশ্নটাই বাপকে করেছিলাম যে এগুলো কিনলে আর আমাদের অন্যের দোকানে কাজ করতে হবে না। শুনে বাপ বলেছিল, ওসবের অনেক দাম রে বাবা। ও সব স্বপ্ন আমাদের মত ছোটখাটো লোকের নাকি শোভা পায় না। আবার যন্ত্রপাতি কিনলেই শুধু নয়, রাতদিন এটা ওটা খারাপ লেগেই থাকবে যেটা আরো সমস্যার হবে।
-ঠিক আছে যা লাগার লাগবে। কাল কাঠের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও কেনা হবে,বলে চলি বলেও রাকিব মিয়া আবার ঘুরে দাঁড়ালেন। -একটা কথা না জেনে যেতে মন চাইছে না মিস্ত্রী ভাই।
-কি কথা?
-আরে শহরে তোমাদের কাজটা বন্ধ হলো কীভাবে,সেটা না শুনে যাই কি করে বল দেখি। অবশ্য তোমার যদি বলতে আপত্তি না থাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মামু চাচা বলতে লাগলেন,
-আপত্তি থাকবে কেন? যা সত্য তাকে অস্বীকার করি কেমনে? আমি তখন খুব ছোট। প্রায়ই দেখতাম কখনো বাপ বাড়ি থাকে তো দাদা থাকে না। আবার দাদা থাকে তো বাপ থাকে না। কখনো কখনো আবার দুজনের কেউই বাড়ি থাকতো না। ছয় ভাই বোনকে নিয়ে মা সারাদিন হিমশিম খেয়ে যেত। মায়ের সারাদিন রান্নাঘরেই কেটে যেত। আমরা ভাই বোন সারাদিন পাড়ার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা হৈ হট্টগোল করেই দিন কাটাতাম। এরই মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাঁটি হত লাগামছাড়া। একটু বড় হয়ে বুঝেছি তার জন্য দায়ী ছিলাম মূলতঃ আমি। ছোট থেকেই আমি ছিলাম খুব দুর্বল প্রকৃতির।পাড়ায় খেলতে গেলে আমাকে সকলে মশা বা ফড়িং বলে ক্ষ্যাপাত। মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে ঝগড়া করলে শক্তিতে ওদের সঙ্গে পেরে উঠলাম না। বিকল্প হিসেবে, কামড়ে দেওয়ার ফন্দি খুঁজতাম। সুযোগ বুঝে তাকে কামড়ে দিয়ে সোজা ছুটে যেতাম দাদির কাছে। দাদি ছিল আমার খুব ভরসার স্থল। একবার দাদির কাছে যেতে পারলে জানতাম আর কেউ আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না।তবে কখনো কখনো দাদিকে প্রতিশ্রুতি দিতে হতো আর কখনোই যেন কাউকে কামড়ে না দেই। আমি প্রতিবারই মাথা নেড়ে সম্মতি দিতাম।দাদি খুব খুশি হত। আমার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে কত কি না বোঝাত।এদিকে খানিক বাদে যথারীতি বাড়িতে নালিশের বহর চলে আসতো। এসব ক্ষেত্রে আমি সাধারণত মায়ের সামনে যেতাম না। কিন্তু দূর থেকে মায়ের গর্জন মুহুর্মুহু কানে আসতো। দাদির একটুকরো কামরাই হয়ে উঠতো আমার অস্থায়ী ঠিকানা। পরবর্তী দিন কয়েক আর খেলতেও বার হতাম না। এই সময় দাদির কাছে বিভিন্ন রকম গল্প শুনতাম।।বাপ-দাদা কোথায় থাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, দাদি মজার মজার গল্প বলতো। আর সেসব শুনে তখনই আমার ছোট্ট কৈশোরে শহরের জীবন সম্পর্কে রংবেরঙের ফানুস উড়াতে থাকতাম। এদিকে কয়েক দিন পর আবার রাস্তায় নামলে পরের দিকে আমাকে আর কেউ খেলতে নিত না।আমি শহরে যেতে চলেছি তারা আমার সঙ্গে খেলার যোগ্য নয় বলে তাদেরকে ছোট করলেও খেলতে না নেওয়ার জন্য আমার মধ্যে একটা প্রতিহিংসা তৈরি হতো এবং আমি আবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকতাম। কদিনের মধ্যে খুব সহজেই আবার সুযোগ মিলেও যেত। ওদের দলে লোক কম পড়লে আমাকে আবার খেলতে ডাকতো। আর আমি সুযোগ বুঝে কামড়ে দিয়ে দিতাম ছুট।পরের দিকে এর ফলে আমাকে নিয়ে বাড়িতে একটা ভয়ঙ্কর সমস্যা তৈরি হয়। প্রতিবেশী সব ছেলেমেয়েরা আমার কামড়ের শিকার হয়ে দলে দলে আমার নামে অভিযোগ করতে থাকে। মায়ের কাছ থেকে বেশ কয়েকবার বেদম শাস্তি পাই সে কারণে। যদিও শাস্তি ভয় আমাকে পিছু হটাতে পারেনি। উল্টে আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। আমার সবচেয়ে পছন্দের দাদিও একসময় আমার উপর নিরাশ হয়ে পড়ে। মায়ের অভিযোগ দাদির আশকারাতেই নাকি আমি এরকম জানোয়ার তৈরি হয়েছি। প্রথম প্রথম হেসে উড়িয়ে দিলেও পরের দিকে দাদি যেন মায়ের অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছিল। প্রায়ই বিরক্ত হয়ে বলতে থাকে, তোকে তোর দাদার কাছে পাঠিয়ে দেব। আমার ধারনা ছিল দাদি কখনো আমাকে বকাবকি করবে না। কিন্তু শেষ সম্বলটুকু চলে যেতেই বাড়ির কাউকে আমি আর সহ্য করতে পারতাম না। তবে সকলের সঙ্গে দাদির উপর রাগ কললেও মনে মনে একটা স্বস্তি যেন আমাকে আশা যোগায়।আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে এতদিনে ধীরে ধীরে শহর সম্পর্কে নানান জিজ্ঞাসার যে বিশাল অট্টালিকা নির্মিত হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ চলে আসাতে মনে মনে উৎফুল্ল হতে থাকি। দাদির ঘোষণাতে আমি রাগের মধ্যেও বরং খুশি হই। আমার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকি। পরবর্তী দিনগুলোতে ভিতরে ভিতরে এক রকম শিহরণ আমাকে দোলায়িত করতে থাকে। কিন্তু বাইরে আমার মেজাজটাকে বরাবরই ষোল আনাই বজায় রাখি।
কিন্তু ওদিকে শত্রুকে সুযোগ বুঝে ঘায়েল করার স্বপ্নেও আমি বিভোর থাকি। শেষবারের মতো আর একবার যদি কোনভাবে সুযোগটা পাওয়া যায়... মনে মনে ঠিক করি বাপের সঙ্গে নয়, দাদা বাড়িতে এলে বরং দাদার সঙ্গেই চলে যাব। যাওয়ার আগে যে করেই হোক অন্তত একজনকে কামড়ে দিয়ে তবেই যেতে হবে। সহজে হারমানা আমার স্বভাব নয়।একদমে কথাগুলো বলে মামু চাচা হঠাৎ থেমে গেল।
- আরে! থামলে কেন? তারপর..
-হ্যাঁ বলছি। আমি তখন খুব ছোট। আমাদের ঠিক দুটো বাড়ির পরে গহর বলে একটা ছোট ছেলে ছিল, তোমার মনে পড়ে?
- আমি তো তোমাদের পাড়ায় আসতাম না। তবে ওই ঘটনাটি মনে আছে। যে বাচ্চাটি পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছিল, তার কথা বলছো?
-এই তো মিয়া সাহেব। একদম ঠিক ধরেছেন। তোমার তো দেখছি পরিষ্কার মনে আছে কতদিন আগেকার ঘটনাটা।
- হ্যাঁ তা একপ্রকার মনে আছে বৈকি।তুমি তো আবার ওর বোনকেই বিয়ে করেছ।
-হ্যাঁ করেছি। সম্পর্কে সে আমার শালা। তবে সেটা অনেক পরের ঘটনা।
-কিন্তু গহরের প্রসঙ্গ কেন আসছে মাথায় ঢুকছে না তো।
-ঢুকবে! ঢুকবে! আমি বললে বিষয়টি ঠিক মাথায় ঢুকবে।
রাকিব মিয়া বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকেন মামু চাচার দিকে। কিছুটা গোঙানির স্বরে জিজ্ঞাসা করেন,
-এত বছর পরে গহরের প্রসঙ্গটা আমাকে যে তোলপাড় করে দিচ্ছে।
মামু চাচা আবার বলা শুরু করল,
-জহর ছিল আমার সমবয়সী। গাট্টা গোট্টা চেহারার। মূলত ওর জন্যই আমি শৈশবে এতটা বিগরে গিয়েছিলাম। খেলতে খেলতে প্রায়ই ঝগড়া করবে আবার উল্টে আমার গায়ে হাত চালাতো।আমি কাউকে কিছু করলে সবার আগে বাড়িতে গিয়ে নালিশও করবে।শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে আবার মাকেও সঙ্গে নেবে। প্রতি পদে পদে ওর কাছে আমি হেরে যেতাম। আর এ থেকেই আমি ওর বিরুদ্ধে ফুঁসতে থাকি। কিন্তু কিছুতেই ওকে আমি এঁটে উঠতে পারছিলাম না। সেবার দাদা বাড়িতে আসার দুদিন পরে যখন চলে যাবার কথা পারলো, সেদিন সকাল থেকে ফন্দি আঁটতে থাকি, শেষ মুহূর্তে যদি কিছু একটা উপায় বের করতে পারি। কিন্তু জহরকে কোনভাবে নাগালে না পেয়ে পুকুরের পাশে পাশে তার ছোট ভাইকে দেখে হঠাৎ মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুনটা চিকচিক করে ওঠে। আমার চিন্তাধারাটা মুহূর্তে বদলে যায়।গহর ছিল বয়সে আমাদের থেকে অনেকটাই ছোট। পুকুর পাড়ে একা একা দেখে, সজোরে একটা ধাক্কা দিতেই ও হুমড়ি খেয়ে পড়ে পুকুরে। উল্লেখ্য পুকুরের এই দিকটাতে ছিলো কচুরিপানায় ঠাসা। আমি আর পিছনে না তাকিয়ে, এক দৌড়ে চলে আসি সোজা বাড়িতে। এসেই দাদাকে জড়িয়ে ধরি। ওনার সঙ্গে চলে যাওয়ার বায়না করি। সামান্য নিমরাজী হলেও দাদি বলাতে দাদা রাজি হয়ে যায়। মাও অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আমার মতো জন্তুর উৎপাত থেকে রেহাই পাবে বলে।বারবার বলতে থাকে ওখানে গিয়েও যদি আমার দুষ্টুমি বন্ধ না হয় তাহলে যেন আমি ওনার মরা মুখ দেখি।দাদি মুখ বেজায় করে বলেছিল, বৌমা ছেলেটার যাওয়ার সময় অমন কথা কি না বললেই নয়? দাদা একবার জিজ্ঞেস করেছিল এত রাস্তা হেঁটে আমি যেতে পারবো কিনা।আমি খুব জোরের সঙ্গে হ্যাঁ বলে মাথা নাড়াতে দাদা খুব খুশি হয়েছিল। অস্বীকার করবোনা সেদিন দাদার সঙ্গে দীর্ঘ রাস্তা হেঁটে হেঁটে শহরে এলেও আমার এতোটুকু ক্লান্তি লাগেনি।মনে মনে খুব খুশি হলাম একটা যোগ্য প্রতিশোধ নিতে পেরেছি বলে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:-টাইপো থাকলে পরে সময় নিয়ে ঠিক করা হবে।
ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (পর্ব-৩)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০২