somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা।

৩০ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রথম)

আমার মা'য়ের জন্ম গ্রামটির নাম 'দশাল'। ময়মনসিং থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথের বারহাট্টা নামক স্টেশনে নেমে মাইল তিনেক দক্ষিণে যেতে হয়। ফলে আমার মামারবাড়ি থেকে একটু উত্তরে তাকালে বিস্তির্ণ শস্যপ্রান্তরের পরেই দীর্ঘ উঁচু রেলপথ আমরা ছোটবেলাতেই দেখেছি। দিনে দুবার রেলগাড়ির যাওয়া আসা দেখাটা ছিলো আমাদের পরম প্রাপ্তি।

মা'য়ের কাছে শুনেছি তাঁর ছোটবেলায় নাকি এই রেললাইন পাতার কাজ হয়েছিলো। এবং কাজ শেষে হয়ে চলেছিলো রেলগাড়ি । তো মায়ের ছোটবেলা কোন সন হতে পারে? মা বেঁচে থাকলে এখন বয়স হতো নব্বইএর বেশী। তাহলে ছোটবেলা বলতে ধরা যাক পঁচাশি বছর আগে । আজ থেকে পঁচাশি বছর আগে মানে মোটামুটি ১৯২৫ সন। আরো শুনেছি প্রথম প্রথম রেলগাড়ি দেখতে আবালবৃদ্ধবনিতা দৌড়োত রেললাইনের দিকে । কিন্তু বিশাল প্রান্তর পার হতে হতেই রেলগাড়ি মিলিয়ে যেত।

পরবর্তী জীবনে আমাদের জন্মের পর মা এই রেলের বেশ নিয়মিত যাত্রী ছিলেন। কারন তাঁকে তখন বাপের বাড়ি আসতে হতো সংসারের নানা সংস্থানের জন্য। আমাদেরও প্রথম রেলযাত্রা বলতে মোহনগঞ্জ থেকে উঠে মাঝখানে ছোট্ট স্টেশন 'অতিথপুর' এবং তারপরই বারহাট্টা। এই সামান্য রেলযাত্রায় ছোটবেলাতেই অতৃপ্তি ছিলো বেশ। বাড়ি থেকে চার মাইল পা'য়ে হেঁটে এসে মাত্র এইটুকু রেলযাত্রা। তারপর নেমে আবার তিনমাইল হাঁটা।

মা'য়ের বাপের বাড়ি অর্থাৎ আমার মামার বাড়ি বলতে যা বোঝায় তখন আর সেসব কিছুই নেই। আমার দাদু মারা যাবার পর দিদিমা কলকাতা চলে যান এই জীবনের মত। ওখানে ওনার ছেলেরা মানে আমার মামারা থাকতেন। ফলে ফেলে যাওয়া যৎসামান্য জমিজমা যা ছিলো তা আমার মাকেই দেখা শোনা করতে হতো। আসলে এর থেকে কিছুটা আয় হতো যা ঐসময় আমাদের সংসারে খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিলো। আমার কর্মবিমুখ বাবার আমরা মোট নয় জন সন্তান ছিলাম। তাদের ভরণপোষণের দায়দায়িত্ব কেমন করে যেন আমার মা'র উপরেই বর্তে ছিলো। আসলে সন্তানের জন্ম এবং তাদের বেঁচে থাকার পারস্পরিক দায় ঐযুগে একলা মা'কে বহন করতে হয়েছিলো কেন তা নিয়ে আমি মনে মনে বাবার প্রতি অপ্রসন্ন ছিলাম সেই ছোটবেলা থেকেই।

প্রায় নিরক্ষর একজন মা' নিয়মিত আয়শূন্য একটা সংসার কীভাবে যে টেনেছেন তা আজ ভাবলে অবাক লাগে। শুধুত খাওয়া পরা নয় অসুখে বিসুখে শোকে দু্‌খে বিশাল দুই ডানা দিয়ে যেন আগলে রেখেছিলেন। তাঁর এই পাহাড় প্রমাণ দায়ভার থেকে মুক্তি পেলেন পৌঢ় বয়সে এ । ৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন সীমান্ত পার হয়ে আরো অনেকের সংগেই চলে এসেছিলেন তার বড় ছেলের কাছে। পরবর্তীতে আমার বাবা যখন আবার দেশে ফিরে গিয়েছিলেন তখন আর মা' যাননি সংগে। তার এই না যাওয়া নিয়ে ঐ সময়ে আমাদের সমাজ সংসারে অনেক সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো । মা' তার চরিত্র অনুযায়ী সেসব গ্রাহ্য করেননি । আমরা যারা আরো অনেক আগে প্রায় শৈশবেই দেশ ছেড়েছিলাম পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অন্ততঃ আমার সেই ফেলে আসা দেশবাড়ীর জন্য মন ব্যাকুল হলেও মাকে দেখেছি শেষ বয়সে তার ঐ পিছুটান ছিলোনা। কখনই কি তার নিজের হাতে গড়া বাড়িঘরসংসারের অবশিষ্টগুলো দেখার সাধ জাগেনি? মনে হয় জাগলেও তার প্রকাশ তিনি রুদ্ধ রেখেছিলেন কোনো কারণে। (ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×