somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা ।

২৬ শে জুন, ২০১০ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(দ্বিতীয়)
তৎকালীন মাইন্ডসেট অনুযায়ী আমার মা' মনে হয় পুরুষতন্ত্র সম্মত আচরণেই বিশ্বাসী ও অভ্যস্ত ছিলেন। ঠিক মধ্য বয়সে যখন বাবা সংসারের কুটোটিও নাড়া ছেড়ে দিলেন তখনও সংসারে বাবার দেবতুল্য অবস্থানটি সুরক্ষিত ছিলো শুধু স্বামী বলে। তখন সংসারে মা'র এই নীরব কৃচ্ছসাধনের অন্যতম সহায়িকা ছিলেন আমার ঠাকুমা, অর্থাৎ আমাদের ঠাম্মা। সংসারে শাশুড়ি বউ এর এই বিরল সম্পর্ক সচরাচর দেখা যায়না। শুধু আমাদের ন'জন ভাইবোন মানুষ করার দায়িত্বকেই তাঁরা সংসার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করে ছিলেন।
অথচ এরজন্য তাঁরা সংসারে যে খুব ধন্যবাদ পেয়েছিলেন তা নয় । বরং দারিদ্রের কষাঘাতগুলো মুখ্যত তারা দুজনেই ভাগ করে নিয়েছেন। আর সেই পরিসরে বাবার অবস্থানটা ছিলো ভারী অদ্ভুত। তিনি ধর্মচর্চা তথা নামকীর্তন ইত্যাদি নিয়ে তৎকালীন ঐ পিছিয়ে থাকা সমাজে দিনে দিনে শ্রদ্ধাস্পদ হয়ে উঠেছিলেন। কৃষিভিত্তিক ঐ সমাজের স্বার্থ দ্বন্দ্বের কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারতোনা। ফলে তাঁর মহত্বের কথা শৈশবে আমাদেরও শুনতে হত। আমরা কোনো ছোটখাটো অন্যায় করলে বাবার উদাহরণ টেনে সবাই খুব আক্ষেপ করতো । যেন আমরাও বাবার মতো না হয়ে কেন সাধারণের মতই-----।
আমাদের পড়াশুনোর জন্য মা' এবং ঠাম্মার দুঃশ্চিন্তার শেষ ছিলোনা। শুরু থেকেই এই দুই মহিলা কী করে যে সন্তানদের শিক্ষার মধ্যেই তাদের আবছা নিস্পেষিত এক স্বপ্নের মুক্তির কথা ভেবেছিলেন কে জানে! যেখানে তখনকার দিনে শতকরা পাঁচজনও স্বাক্ষর নয় । বিশেষ করে যেখানে পড়াশুনো মানে খেতখামারের কাজের ক্ষতি। অথচ আমাদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। বড়দার মেট্রিক পরীক্ষার ফিস জোগাড় করার জন্য একটা গরু বেচে দিতে হয়। কিংবা একজনকে শহরের স্কুলের খরচের জন্য জমানো ধান বেচে দিতে---আবার অভাবের সময় সেই ধানই চেয়ে চিন্তে ধার করে আনতে হয় ।
এরকম নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে দুই মহিলার জীবনযুদ্ধের নীরব সাক্ষী ছিলাম আমরা ভাইবোনরা।
ঐ সময়টাতে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আমাদের দুই দিদির বিয়ে হয়ে যায়। তখন এক প্রস্ত জমিবেচা। তবু দিদিদের বিয়ে ভালই হয়েছিলো। একজনের ছিলো বাজারের মধ্যে বেশ বড় দোকান যা তখনকার দিনে বেশ লোভনীয় ঘর। আরেকজন ছিলেন দর্জি--তবে জমিজমা ছিলো বেশ। এই বিয়েদুটির পর পর খরচের চাপ ক্রমে আমাদের সংসারের প্রায় গলা টিপে ধরে ছিলো । ঐ সময়টাতেই মা'কে দেখেছি ছেঁড়া কাপড় পরে কোনোমতে দিন কাটাতে। তবে দিদিরা তখন কাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে গোপনে মা'কে কিছুটা সাহায্য করেছিলো। তবে তারা যে সবচেয়ে বড় সাহায্য করেছিলো তা হলো আমাদের হাইস্কুল পড়ুয়া তিন ভাইবোনকে তারা তাদের নিজেদের বাড়িতে রেখে পড়াশুনো করিয়েছিল।
এইসব চরম অভাবের সময়গুলোতে বাবাকে দেখে কখনোই মনে হয়নি আমাদের কোনো অভাব আছে। উনি সারাজীবন কখনো লুঙ্গি পরেননি। পরিস্কার ধবধবে সাদা ধুতি, কখনো প্রয়োজন হলে সাদা পাঞ্জাবীই পরতেন। অনেকসময় বাবাকে পরিবারের সবার থেকে এত আলাদা মনে হতো যে যেন সংসারে তিনি আগন্তুক কেউ। তাঁর অবস্থানটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো সেই একান্ত কৈশোরেই
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৫৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×