Click This Link
Click This Link
(তৃতীয়)
আমাদের ভাইবোনরা হয়তো সবসময় বাবাকে মা'য়ের সাপেক্ষেই দেখেছিলাম সেই সময়। ফলে তাঁর যে ব্যক্তিত্ব আমাদের কাছে ধরা পড়েছে তা তার একটা দিক মাত্র । আর তাতে যাই হউক তাঁকে কখনো কাছের মানুষ মনে হয়নি। তবু একটা জীবন, একটা মানুষ----তার ভেতর সে কখনো না কখনো হয়তো তার গড়ে উঠা ব্যক্তিত্বের সন্ধানসুত্রটি রেখে যায় । বাল্যকালে আমরা হয়তো তার নাগাল পাইনি । মা ঠাম্মার কাছে পরবর্তীতে শুনেছি বাবা নিতান্ত শৈশবেই মাতৃহারা এবং কৈশোরেই পিতৃহারা হয়েছিলেন। আমার দাদু তৎকালীন সময়ে বেশ কৃতি পুরুষ ছিলেন। শিক্ষিত আইনব্যবসায়ী মানুষটি ভাল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রী বিয়োগের পর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন । আমাদের দেখা ঠাম্মা আসলে আমাদের সৎ ঠাম্মা। অথচ তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অন্ততঃ আমি সেটা জানতে পারিনি।
সহায়সম্পত্তি যা সেসবই ছিল তখনকার সামাজিকতায় যৌথ পরিবারের দখলে। নিতান্ত অল্প বয়সেই দাদুর মৃত্যুর পর বাবা, যিনি তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান, বেশ বিপদে পড়ে গেলেন। সংসারে তখন সদ্য বিধবা ঠাম্মারও বয়স তেমন বেশী না। সম্পত্তিলোভী আত্মীয়দের হাতে তখন একই সংসারে তারা দুজনই কমবেশী নির্যাতিত। একমাত্র উত্তরাধিকারী যেহেতু বাবা তাই সেই হিসেবে বাবার উপর নির্যাতনের মাত্রাটা তাই অনেক বেশী ছিলো । আর এইসব সহ্য করতে না পেরে বাবা তখন একদিন বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে চলে যান। কোথায় গেলেন বাড়ীর কর্তা ব্যক্তিরা তার কোন খোঁজও নিলেননা । দিন গড়িয়ে যেতে যেতে যখন তা প্রায় বছর ঘুরতে চলল তখন আর থাকতে না পেরে ঠাম্মা একদিন মরিয়া হয়েই মুখ খুললেন। বাড়ীর কর্তার কানে যথারীতি কথাটা গেল। বাড়ীর কর্তা শুনে মন্তব্য শোনালেন যে সৎ ছেলের জন্য এত দরদের কী আছে ---- সংসারে এই সৎ মা'য়েরত আর খাওয়াপরার অভাব হবেনা---- । কিন্তু মাতৃস্বভাব সংসারে একটি বিরল জৈবিক অনুভূতি। তখনকার ঐ অনগ্রসরতার মধ্যেও আমার ঠাম্মা ক্রমে বিদ্রোহই করে বসলেন। প্রশ্ন তুলে বসলেন সম্পত্তি নিয়েও। কিছুটা লোকজানাজানিও হয়ে গেল। তাতে কিছু আত্মীয়স্বজন ঠাম্মা তাঁর স্বপক্ষে পেয়ে গেলেন। বাড়ীর কর্তাদের টনকও নড়লো। আলোচনা সভা হলো বিস্তর। শেষে ঠিক হলো যে বাবার সন্ধানে খোঁজ খবর করা হবে। সেই মতো কাছাকাছি নানা জায়গায় খোঁজখবরে একসময় জানা গেল যে বাবা উত্তর ভারতের দিকে গেছেন। আর সেই সুত্রে এক আত্মীয়কে সংগে নিয়ে ঠাম্মা রওনা হয়ে গেলেন সেই দু'একটা তীর্থ স্থানে খোঁজ নিতে। ঠাম্মার কপাল ভালো যে মাসখানিক ঘোরাঘুরির মধ্যেই বাবাকে পাওয়া গেল বৃন্দাবনের এক আশ্রমে। প্রায় কংকালসার কালাজ্বরে আক্রান্ত অসুস্থ বাবাকে । কোনমতে তাঁকে নিয়ে বাড়ী ফিরে তারপর চলল দীর্ঘ চিকিৎসা শুশ্রুষা। সেই থেকে ক্ষীণজীবী বাবার স্বাস্থ্য অনেকদিন পর ফিরলেও হয়তো তার মানসিক স্বাস্থ্যটা আর প্রয়োজন মাফিক ফেরেনি। একজন সদ্য যুবকের যে ধরণের বিষয়আশয় ঘটিত চিন্তা সেই যুগে থাকা দরকার ছিলো বাবার তা ছিলোনা। মানসিক গঠনের ঐ ঘাটতিটা আর বাকি জীবনে তাঁর পুরণ হয়েছিল বলে মনে হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০০