
চলচ্চিত্র শিল্প বিপ্লবের সবচেয়ে কনিষ্ঠ মাধ্যম। এরপর আর কোন মাধ্যম আসেনি। যেহেতু সর্বশেষ মাধ্যম সেহেতু সবচেয়ে আধুনিক। মনেহয় না ভবিষতেও এর চেয়ে উন্নত আর কোন আধ্যম আসবে। সে অনেক কাল আগের কথা, তখন মানুষ মুখে মুখে গল্প বানাতো, গল্প শোনাতো, গল্প ছড়াতো। সেই শিল্প মাধ্যম আজকের চলচ্চিত্রে এসে ঠেকেছে। মানুষ লিখতে শুরু করেছে, ছবি আকতে শুরু করেছে।
মূলতঃ চলচ্চিত্র আলাদা কোন মাধ্যমই না, শীল্পের সব গুলো মাধ্যমের সমষ্টি। আর এই কারণেই ফিল্ম এত জটিল এত জনপ্রিয়। এই কারণেই ফিল্ম মেকিং এত কঠোর ও কঠিন। এসব থেকে বাঁচতেই গল্পের এত চাহিদা। যারা বলে ভালো গল্প নেই বলে ভালো মুভি হচ্ছে না, তারা আসলে ফিল্ম বানাতেই জানে না। সেই যে আদি কালে মানুষ মুখে মুখে গল্প বানাতো, গল্প শোনাতো, গল্প ছড়াতো এ কারণেই গল্পের প্রয়োজন। সবকিছুর মধ্যেই গল্প আছে, আস্ত জীবন টাই তো একটা গল্প। পৃথীবির শুরু- সেই যে আদম-হাওয়া অথবা বিগ ব্যাঙ্গ থেকে পৃথিবির শেষ, সব গল্প। চদ্র রাতে ছেড়া কাথায় বাড়ির উঠোনে দাদীর কোলে মাথা রেখে খোকার শুয়ে থাকা থেকে শুরু করে বিশাল অট্রালিকার দামি চাদরের আদরে খোকা বাবুর শুয়ে থাকা, গল্প।
জীবিনের ছায়ায় মিশে আছে গল্প, পলকে পলকে, বিন্দু ধুলিক্ণা থেকে আকাশের চদ্র, গল্প। কেবল এই কারণেই গল্পের প্রয়োজন। নয়তো গল্পের কোন প্রয়োজন নেই। চলচ্চিত্র শব্দের অর্থ চলমান চিত্র। সেই চলমান চিত্র যেকোন কিছু হতে পারে। ঐ চিত্রটাই ধরুন- মাথার পাশে বাশ ঝাড়, থোকায় থোকায় জোনাক, জোস্নার নরম আলো বিছিয়ে খোকা শুয়ে আছে বৃদ্ধ দাদির কোলে। পাশেই বসে রান্না ঘরে মা, বাবা বসে আছে বারান্দায়। এটা একটা চলমান চিত্র। কিন্তু গল্প পেয়েছেন? তারপরের চিত্রই ধরুন। জানালা দিয়ে এক চিলতে জ্যোৎস্না আচড়ে পড়েছে নরম চাদরে। কোলবালিশ জড়িয়ে নিদ্রায় খোকা বাবু। ছাদে দাড়িয়ে নব দম্পতি, বারান্দার শিক গলে হাত বাড়িয়ে কিশোরী, জলন্ত সিগারেট ঠোটে নিয়ে যুবক হাটছে কালো পিচের রাস্তায়। গলির কোনে দাড়িয়ে চাদ কে ডাকছে একটি কুকুর, এই মাত্র বিক্রি হয়ে গেল একটি শরীর। ফুটে পাথে শুয়ে থাকা ক্ষুধার চক্ষু টলমল করে তাকিয়ে আছে চাদের দিকে। নিরব হয়ে গেল একটি আর্তচিৎকার। টকটকে রক্ত গড়িয়ে গেল নর্দমায়। এসবি চিত্র, সাধারণ চলমান চিত্র কিন্তু গল্প পাচ্ছেন? এরপরেও যারা বলে ভালো গল্প নেই বলে ভালো মুভি হচ্ছে না, তারা আসলে মুভি বানাতেই জানে না। গল্প চলচ্চিত্রের একটা অংশ, গল্পটাই কিন্তু চলচ্চিত্র না। চলচ্চিত্র হল গল্পটাকে প্রেজেন্ট করার কৌশল। আপনি গল্পটাকে কীভাবে দেখাচ্ছেন। ক্যামেরা মেকিং, সাউন্ড, কালার, লাইট প্রত্যেকটা চলচ্চিত্রের একেকটা অংশ। ধরেন একটা লোক কথা বলছে, তার পিছনে দিয়ে একটা বাঘ চলে গেল, না মাছি এটাও গুরুত্বপূর্ণ । গল্পের খুব একটা প্রয়োজন নেই। সেই যে আদিকালে মানুষ গল্প বলতো, গল্প শুনতো, গল্প ছড়াতো, সেটা আমাদের জ্বিনে রয়ে গেছে। আমরা সব কিছুর মধ্যেই গল্প খুজি। চিত্রে খুজি, সঙ্গীতে খুজি, কবিতাই খুজি এমনকি পরনিন্দা, পরর্চচায় ও গল্প খুজি।
এছাড়া চলচ্চিত্রে গল্পের কোন প্রয়োজন নেই। পৃথিবীতে এমন বহু মুভি আছে, যার গল্প আহামরি কিছুই না। খুবি সাধারণ। আসলে গল্প বলতেই কিছু নেই। ইন্ডিয়ায় টিফিন সিস্টেম নিয়ে একটা মুভি আছে। আপনার বাড়ী থেকে খাবার নিয়ে আপনার অফিসে পৌছে দিবে, এর বিনিময়ে আপনি তাদের কে পে করবেন। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও ইন্ডিয়ায় এটা বেশ জনপ্রিয়, এবং প্রচুর লোক এই কাজের সাথে জড়িত। যেদের ইনকামের একমাত্র রাস্তায় হল এই টিফিন সিস্টেম। যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা ও সহজ না। একটু জটিলতা আছে, যেটা ফিল্ম দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন।
তো, এই সিস্টেমে ভুল করে একজনের খাবার আরেক জনের কাছে চলে যায়৷একটাই, বাকী সবার খাবার ঠিক ঠিক জায়গায় চলে যায়। কেবল এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই একটা মুভি হয়েছে The lunch box। ইরানী একটা মুভি আছে, নাম ভুলে গেছি। দুই ভাই বোনের দুই জোড়া জুতো। একদিন বাবা ভাইকে বোনের জুতা সেলাই করতে বাজারে পাঠায়, ভাই জুতো জোড়া হারিয়ে ফেলে। কিন্তু বাবাকে বলতে পারে না, বাবা বকবে। দুই ভাই বোনের এখন ঐ বাকী এক জোরা জুতো নিয়েই সম্পূর্ণ একটা মুভি। পাশের কোলকাতাতেই একটা মুভি আছে, আসে যাওয়ার মাঝে। সম্পূর্ণ মুভিতেই একটাও সংলাপ নেই। ইতিহাসে এমন মুভি অনেক আছে, আমি শুধু এখনকার সময়ের কয়েকটার কথা বললাম। আরে মুভি বানাতে জানলে একটা পিপরার জীবনি নিয়ে ও মুভি বানানো যায়। অতি মারি গল্পের প্রয়োজন নেই। এমন অনেক মুভি খুব ভারি ভারি গল্প নিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। শুধু গল্প দেখতেই মুভি দেখবো কেন? গল্পের প্রয়োজন হলে গল্পের বই পড়ে নেব। মুভি দেখবো মেকিং এর জন্য। কীভাবে গল্পটাকে প্রেজেন্ট করেছে। কেবল গল্পের দোহায় দিয়ে যারা বলে ভালো গল্প নেই বলে মুভিটা বাজে তারা আসলে মুভিই বোঝে না। মুভি বাজে হয় গল্পের প্রেজেন্টেশনের কারণে। মেকিং এর কারণে। গল্প বাজে বলে ইতিহাসে কোন মুভি বাজে হয়নি, পৃথিবীর সব গল্পই অসাধারণ। মুভি বাজে হয় পরিচালকের কারণে, পরিচালক গল্পটাকে ঠিক ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারে না বলে মুভি বাজে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




