আমি একজন নতুন মা, পুরোনো বউমা। যখন বিয়ে হয়েছিল তখন ছিলাম নতুন বউমা। হাজারো চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পাঁচটি বছর পার করে সন্তান জন্ম দিয়ে হলাম নতুন মা। যখন নতুন বউ হয়ে এ বাড়িতে এলাম, সেকি বিস্ময়কর টানাটানি আমাকে নিয়ে! আমাকে ছাড়া কোনো আসরই জমছেনা। আমি যে এতো গুনের অধিকারিণী তা আগে বুঝতে পারিনি। আমার শাশুড়ির মুখে যেন আমার গুণের খই ফোটা থামছেইনা। তাঁর পুত্রের জন্য কি মারাত্মক দূর্লভ বউমাই না তিনি খুঁজে এনেছেন! আর আনবেননাই বা কেন? - তাঁর পুত্র বলে কথা! এ যেন এক অমূল্য হীরকখন্ডকে পরম যত্নে আগলিয়ে রাখার জন্য একটি সুসজ্জিত, টেকসই ভান্ড খুঁজে নিয়ে আসা।তারপর যা হলো, সেই সুসজ্জিত, টেকসই ভান্ডটি আস্তে আস্তে পুরোনো হতে শুরু করল। ময়লা হলো, গায়ে দাগ পড়লো, ক্ষয় ধরলো, বের হতে শুরু করলো নানান খুঁত। আমার গুণের মতোই আমি যে এতো খুঁতের অধিকারিণী তাও আগে বুঝতে পারিনি।
তারপর একদিন হঠাৎ নিজের হৃদস্পন্দনের মাঝে শুনতে পেলাম আরেকটা ধুকপুকানি....। ততদিনে আমি পুরোপুরি পুরোনো হয়ে গেছি। হীরকখন্ড আর তার আনুসঙ্গিক রত্নভান্ডারের যত্ন নিতে নিতে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, বিস্মৃত এই পুরোনো আমি নতুন আর কোনো বিস্ময়ের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলামনা। শুরু হলো আমার নতুন কিন্তু অজানা এক পথে হাঁটা। মজার ব্যাপার হলো, হঠাৎ করে যেনো আমার কদর বেড়ে গেল। সবকিছু সেই নতুন বউমা হওয়ার মতো। হাজার হোক বংশধর নিয়ে আসছি যে!! নয় মাস কাটল একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে। শেষে এলো সেই মাহেনদ্রক্ষণ! বছরের পর বছর বয়ে বেড়ানো অমানুষিক যন্ত্রণার কথা মুহূর্তেই ভুলে গেলাম আমার কোলে ফুটফুটে একটি শিশু দেখে। কি বিস্ময় নিয়ে নিষ্পাপ দুটি চোখ দিয়ে দেখছে পৃথিবীকে! আহা! কি সুন্দর সেই দৃষ্টি!
এরপরের তিন মাস কাটলো ভীষণ আদর-সোহাগে। পুত্রসন্তান বলে কথা! বংশের বাতি! সবকিছু নতুন। জিনিসপাতি নতুন, আদর-সোহাগও নতুন। - কারন আমি যে এখন নতুন মা! .....তারপর আবার সেই নতুন ভান্ড পুরোনো হবার কাহিনী। আমার অবস্থার আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। জানি হবেনা। কোনোদিন হয়না। বাতি জ্বলা-নেভার মতো আমিও একবার নতুন হচ্ছি, একবার পুরোনো হচ্ছি। তফাতের মধ্যে এই যে আগে ছিলো একটি, এখন দুটি হীরকখন্ড আগলে রাখছি...।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



