somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলেয়া (প্রথম পর্ব)

১২ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(২০১৩ সালে হেনা ভাইয়ের পাঠানো "স্বপ্ন বাসর" উপন্যাস পড়ে সেই রাতেই লেখা ছড়াটি অনেক লম্বা হওয়ায় তিন পর্বে পোষ্ট করা হলো)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আলেয়া তুমি আলেয়া হয়ে
রইলে আমার মনে
অনেক স্মৃতি হারিয়ে গেলেও
আছো হৃদয় কোনে।

হাঁটু অবধি কুন্তল তোমার
পটল চেরা চোখ
আজো ভুলিনি হাসি হাসি মুখ
বুক ভরা তাই শোক।

চপলা চঞ্চলা হরিণীর মত
বিচরিতে গ্রামময়
সরকার বাড়ির মেয়ে হওয়াতে
পেত যে সবাই ভয়।

আম কাঁঠালের বাগানে বাগানে
বাঁশ বাগানের তলে
পুকুর ঘাটের উঠলে কথা
চোখ ভরে যায় জলে।

হেথায়-হোথায় মাঠে-ঘাটে
ঘুরেছি ফিরেছি মোরা
অনেকে বলতো, ‘খুব ভাল লাগে
কপোত কপোতি জোড়া’।

চাঁদনী রাতের মিষ্টি আলোয়
গরুর গাড়ীর পর
কত না কথা বলেছি মোরা
পাশাপাশি রাতভর।

খড়ের গাঁদায় লুকোচুরি খেলে
হেসে হতে কুটিকুটি
কোনো কিছুতে বাধা ছিল না
ছিল না তো ভ্রুকুটি।

পানের বরজে পালিয়ে পালিয়ে
করতে কুহু কুহু
খুঁজে খুঁজে আমি পথহারা হয়ে
বলতাম উঁহু উঁহু।

কখনও হাতে জবা ফুল পেলে
খোঁপাতে গুঁজে দিয়ে
তাকিয়ে থেকে মন জুড়াতাম
প্রেমিকের ভাব নিয়ে।

মাঠ পেরিয়ে বিলে যেতে যেতে
রোদ্রে পোড়াতো মাথা
ওড়নার আঁচল মোর মাথায় দিয়ে
বলতে, ‘এই তো ছাতা’।

ফিরতি পথে আষাঢ়ের মেঘে
বৃস্টিতে ভিজে ভিজে
শরীরের কাপড় একাকার হয়ে
দেখতে হয়েছিল কি যে!

চাহিতে পারিনি কেহ কাহারে
শরমের মাথা খেয়ে
ঝাপ দিলে তুমি পদ্ম পুকুরে
উঠলে আবার নেয়ে।

সাঁতার জানিনা গায়ে ছিটালে
সেই পুকুরের জল
বৃস্টির সাথে পুকুরের পানি
দিলে মোরে অবিরল।

সেই ভিজাতে জ্বর হলো মোর
তুমি ছিলে সদা পাশে
সে সব কথা মনে হলে আজো
চোখ ফেটে জল আসে।

নিজে হাতে এনে দুধের গ্লাসে
অর্ধেক করে পান
বাকি অর্ধেক খাওয়াতে মোরে
কত যে ছিল টান?

মাছের মুড়োর মুড়িঘন্টো
কিংবা মুরকি-মুড়ি
ভুলতে পারিনি ফোকলা দাঁতের
তোমার ‘সই’ সেই বুড়ি।

মামাতো বোন হেনাকে তুমি
অপমান করে করে
চোখে চোখে মোরে দিতে পাহারা
সারা দিনরাত ভরে?

রুই মাছ রেঁধে এনেছিল হেনা
করলে কত কলরব
হিংসে করে পুরো বাটি ধরে
দূরে ছুঁড়ে দিলে সব।

ঝামটা দিয়ে রাগ রাগ মুখে
বললে অকথ্য কথা
গালি দেয়ার পরও চুপ করে হেনা
দাঁড়িয়ে রইলো তথা।

‘কি সব রেধেছে’, বললে মামীকে
‘পুরো লবনে ভরা’
এসব কথা সত্য ছিল না
সব ছিল মনগড়া।

তোমার কথায় মুখ কালো করে
ঘর থেকে গেল হেনা
তোমার আচরণ ওই খানে মোর
হয়েছিল সব চেনা।

‘আমি শুধু তোমার অন্য কারো নই’
বললে আড়ালে ডেকে
আর কেউ নয় শুধু তোমাকে
ভেবেছিলাম সেই থেকে।

মামার বাড়ির কত যে আদর
তোমার কারণে তাই
থাকতে চেয়েও থাকতে দিলে না
মনে হলে ব্যাথা পাই।

মামীর আদর উপেক্ষা করে
জোর করে এলে চলে
আফসোস কত করিল তারা
মোর কথা বলে বলে।

এসব কথা মনে হলে আজো
ভেসে উঠে সেই মুখ
বলিতে চেয়েও বলিতে পারিনা
জমাট বাঁধা মোর বুক।

গরুর গাড়িতে নিজে ঘেমে নেয়ে
আমাকে বাতাস করে
কত সুখে যেন তাকিয়ে থাকলে
মোর বাহুটি ধরে।

ছইয়ের উপর ঝরঝর করে
বৃস্টি পরার পর
গায়ের পরে হেলান দিয়ে
ঘুমালে দিনভর।

অনেক কথাই মনে পরে আজো
ভুলে যাইনি কিছু
অতীত জীবন যত পিছে যাক
স্মৃতি ছাড়েনা পিছু।

জন্মের পরে মা মরো মরো
আমার জীবনো যায়
নিয়েছিল কোলে আধমরা মোরে
তোমার দুখিনী মায়।

সুস্থ্য হয়েই তোমার মাকে
বলেছিল মা মোর
মরা ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখেছিস
আজ থেকে হলো তোর।

সেই থেকে যে তোমার মাকেও
বলিতাম আমি মা
দুইটি মায়ের আদর পেয়ে
জুড়াইতো কলিজা।

মা হওয়াতে সারা দিনমান
তার কাছে বসে বসে
কত না বিচার দিতাম মোরা
পরস্পর রোষে রোষে।

আদরের সুরে মা ধমকাতো
আজো যাইনি ভুলি
বুক ভরা মোর সে সব কথা
কাকে কব মন খুলি?

সেই শিশুকালে দুই মায়ে মোর
করেছিল বিয়ে ঠিক
তোমার মুখে সে কথা শুনে
দিয়েছি কত যে ধিক।

সবার মতেই হয়েছিল নাকি
এই ঘটনাটি পাকা
দীর্ঘদিন গাঁয়ে না যাওয়াতে
কথা ছিল সব ঢাকা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×