সব মানুষের জীবনের কোন না কোন গল্প থাকে। সব গল্প এক নয়। আবার সব গল্প একই বিন্দুতে শেষ হয়না। নারীর জীবনের একরকম গল্প,পুরুষের অন্যরকম। সেই গল্পের সময় থাকে,থাকে স্থান,চরিত্র।কখনও কখনও একটি গল্পের সাথে আরেকটির মিলও পাওয়া যায়।এবার ভিন্ন কিছু জীবনের গল্প নিয়ে আমার এই লেখা। যা আমার আপনার আশেপাশের কাছের মানুষের গল্প। যার অনেকটাই আমাদের অগোচরে থাকে। এসব গল্পের নায়ক-নায়িকারা আমাদেরই বন্ধু, বান্ধবী, ভাই, ভাবি কিংবা অন্যকেউ।
মিথিলা। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব। মিথিলার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া কিন্তু সে আশা যখন গুড়েবালি হয় তখন তার লক্ষ্য দাড়াল উপস্থাপক হওয়ার।গ্রামের মেয়ে হলেও চলনসই ফিগার থাকায় ভেবেছিলাম সে পারবে।অনুপ্রেরণাও দিয়েছিলাম। কোচিং শেষে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিলনা। ৪ বছর পর ২০১০ সালে ইডেন কলেজের সামনে মিথিলার সাথে দেখা।এবার সে একা নয়। সাথে বয়ফ্রেন্ড। পোশাকে আশাকে বড় ধরনের পরিবর্তন। বছরখানেক আগে মধ্যরাতে মিথিলার ফোন ।বিমর্ষ কণ্ঠ।জানাল, যে ছেলেটির সাথে তার সম্পর্ক সে তাকে ছেড়ে পরিবারের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেছে।তাকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া করার কিছু ছিল না।তারপর থেকে মিথিলার মোবাইল বন্ধ ।
মালিহা । রাজধানীর একটি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী।বর্তমানে একটি সংগঠনে শিল্প চর্চা করছে। সে সংগঠনে কয়েকদিন আগে বন্ধু সোহেল যোগ দিয়েছে।পেশায় আইনজীবী। সোহেল ২ বছর আগে যখন আদম ব্যবসায় জড়িত।তখন রাজধানীর অভিজাত একটি আবাসিক হোটেলে পরিচয় হয় মালিহার সাথে।একরাতও নাকি কাটিয়েছে তার সাথে।সময়ের ব্যবধানে সেই মালিহা এখন তার সহপাঠী।জীবনের ভুল বুঝতে পেরে সোহেল ও মালিহা এখন এসেছে শিল্পচর্চায়।
তামান্না চৌধুরী।একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী। অষ্টাদশী তরুণী। অদম্য সাহসী এবং খুবই কনফিডেন্ট মেয়ে।স্বপ্ন মডেল হওয়ার। কন্টকময় পথ পাড়ি দিয়ে তামান্না কতদুর এগোতে পারবে তা সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম ।মাঝে মাঝে ভাবি, জীবনের দৌড়ে কত পিছিয়ে ছিলাম আমি। যে বয়সে আমি স্বপ্ন তো দুরের থাক, বাপের হোটেলে খাওয়া আর আড্ডা ছাড়া কিছু ভাবতে পারতাম না । সে বয়সে এ সময়ের উদীয়মান তরুণ-তরূণীরা জীবন নিয়ে কত কি না ভাবে।
দেশের উদীয়মান তরুন-তরূণীদের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখায়,ভাবতে শিখায় দেশী বিদেশী টিভি চ্যানেলগুলো। বাক স্বাধীনতা,ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে চ্যানেলগুলো উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন বুনে দিচ্ছে অডিয়েন্সের চোখে।বর্তমানে যে ইয়াবা সুন্দরী,মডেল কন্যা,নিশিকন্যা,কলগার্ল, পার্টি গার্ল, ড্যান্স গার্ল, মাদক সম্রাজ্ঞীদের নাম শুনা যায়-এদেরকে ব্রান্ড করেছে মিডিয়াগুলো।যে মিডিয়ায় নারী স্বাধীনতা,নারী অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে সেসব মিডিয়াই এখন নারীরইজ্জতহরণকারী,দেহবিক্রির মূল আখড়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বে যেকোনো পণ্যের চেয়ে সেক্স এবং নারী পণ্যের বাজার রমরমা। শিশু বাদ দিলে ৫ বিলিয়ন মানুষ এর ক্রেতা বা বিক্রেতা। সুন্দরী প্রতিযোগিতা এরই একটি অংশ। প্রতিযোগী মেয়েরাও টাকা কামানোর লোভে, পরিচিতি পাওয়ার লোভে অলীক স্বপ্নে বিভোর। ফলত,যে কোনো অনৈতিক সম্পর্ক করতে এরা দ্বিধা করে না ।ফলশ্রুতিতে মেয়েটি যে কোনো অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জড়িয়ে পড়ে দেহবিক্রিতে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন প্রতিযোগিতা শেষে অনেক মডেলিং কিংবা প্রোডাকশন হাউস প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারী মেয়েদের ফোন নম্বরে কল করে জানায়, অমুক ফটোশুটিং, গান কিংবা বিজ্ঞাপনের কাজ আছে সে করবে কিনা? স্বাভাবিকভাবে মেয়েরা সেখানে যায় এবং অংশগ্রহণ করে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। কিন্তু যে করায় সে ঠিকই টাকা কামায়। দু’এক দিন পর ওই ফটোগ্রাফার,প্রযোজক কিংবা বিজ্ঞাপন পরিচালক জানায়, তোমাকে অনেক সুন্দর লেগেছে,ভালো পারফরমেন্স করেছো। আমি চাইলে তোমাকে অনেক উপরে উঠাতে পারবো। কিন্তু কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতে হয়। অর্থাৎ অনৈতিক সম্পর্কের আহবান। তখন স্বপ্নে বিভোর মেয়েগুলি আহবানে সাড়া দেয়। যারা সাড়া দেয় না, কাজ পায় না। ফলে যারা প্রথমে স্বপ্ন পুরণের কঠিন শর্তে অসম্মতি জানায়, বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে তারাও আহবানে সাড়া দেয়।
আবার যেসব কামুক পুরুষ প্রতিযোগিতায় থাকাকালীন পরিচালক হিসেবে কিংবা প্রযোজক হিসেবে কিংবা অন্য কোনো বড় পদে নিয়োগ থাকে তারাও ওই প্রতিযোগী মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার লোভ দেখিয়ে ভোগ করে। এভাবে এক এক করে নারী সাড়া দেয় বহু পুরুষের অনৈতিক আহবানে। আসলে সমাজের শিকড়ে শিকড়ে ধর্ষক পৌঁছে গেছে ।
অনেকের কাছে মিউচুয়্যাল আর অনেকের কাছে স্মার্টনেস । একটা জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ে জীবনে কোন নান কোন সময়ে নিকট আত্মীয়-স্বজন দ্বারা যৌন হয়রানীর স্বীকার হয়েছিল। গত কয়েক বছর আগেও এদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে বানানো পর্নোগ্রাফির রমরমা বাজার ছিল । এখন আর বিদেশ থেকে সিডি আমদানি করতে হয় না ,এখন দেশে উৎপাদিত পর্নোগ্রাফিতেই বাজার সয়লাব। প্রযুক্তির কল্যানে এসব পর্নোগ্রাফি এখন কিশোর,আবাল, বৃদ্ধ ভণিতা সবার কাছে।
পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন দুটি জিনিসের চাহিদা কখনো কমবেন না।তা হলো খাদ্য আর সেক্স। যেখানে জীবন আছে সেখানে ক্ষুধা আর যেখানে মানুষ সেখানেই সেক্স।দুটিই মানুষের মৌলিক চাহিদা ।এর চাহিদার শেষ নাই,তাই যোগানেরও কমতি নাই। একারণে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামুলক অনুষ্ঠান সমাজে থাকা চাহিদাকে পুজি করে ব্যবসা করছে । চ্যানেলগুলোয় বিভিন্ন নামে চলছে রিয়েলিটি শো।এসব প্রতিযোগীতার মূল উদ্দেশ্যই হয় নারীদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে ভোগ করা। এরপর যতদিন যৌবন থাকবে ততদিন ভোগ্যপণ্য হিসেবেই সেই নারীকে ব্যবহার করতে থাকবে রঙ্গিন জগতের বিভিন্ন স্বপ্ন দেখানোর মাধ্যমে।
আবার মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে অনেক সেলিব্রেটি অস্বীকার করে তার অতীতকে।রং বদলাতে থাকে ।যেমনটা হয় পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে। ঘনঘন গালফ্রেন্ড আর বয়ফ্রেন্ড বদল। এটা যেনো কাল মার্ক্সের নেগেশন অব নেগেশন থিওরির মত। যেখানে বলা হয়েছে, জগতের প্রতিটি বস্তু ও প্রাণী একটা সময় এসে তার মুলকে অস্বীকার করে অথচ সেই মুল থেকেই তার উৎপত্তি।
আমার সরকারী চাকুরে বন্ধু রহমতউল্লাহ সুজন ।জীবনের অনকেটা সময় উপার্জিত টাকা ব্যয় করেছে নারীর শরীরের পিছনে।জৈবিক চাহিদা মেটাতে চষে বেড়িয়েছে রাজধানীর আবাসিক হোটেল আর ফ্লাটগুলো।সেদিন শুনলাম রহমত নাকি গ্রামে এক ষোড়শী কিশোরীকে বিয়ে করেছে। যে রহমত শ’য়ে শ’য়ে নারীর সংস্পর্শ লাভ করেছে,সে ঠিকই একটি কুমারী নারীকে বিয়ে করেছে,নিজ স্বার্থ ঠিকই বুজেছে।
২০১২ সালের শুরুতে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক বন্ধু কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক অভিজাত হোটেলে ওঠে।ঢাকায় এসে বন্ধুরা জানাল সেই হোটেলের দেহবাণিজ্যের কথা।সুন্দরী মেয়েদের বিশেষ কক্ষে সাজিয়ে রাখে ।ভোক্তারা আসে, বের হয়। মেয়েগুলোকে সারাদিন-সারারাত ব্যবহার করতে থাকে শতশত পুরুষ। বন্ধুদের মধ্যে একজন এক তরুণীকে নিয়ে তার কক্ষে সারারাত কাটিয়েছে সেদিন।মেয়েটিকে নাকি সে জিজ্ঞেস করেছিল’, তুমি এতো সুন্দরী ।পথে বের হলে অনেকেই তোমার পিছু নিবে। কেন তুমি দোকানে ঝুলিয়ে রাখা মাংসের ন্যায় নিজেকে বিক্রি করছো? যেখানে রিকশাওয়ালা থেকে কোটিপতি তোমার ক্রেতা। মেয়েটির সোজা জবাব,‘ সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না। মেয়েগুলো স্বেচ্ছায় এখানে এসেছে,না অন্য কোন কারণে ।এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে বিশ্লেষণ করতে হবে রাষ্ট্রের বেসিক ও সুপার স্ট্রাকচারকে ।
সবশেষে ৬৮ সালে শিল্পী আব্দুল জব্বারের গাওয়া গানটির কয়েকটি লাইন দিয়ে সমাপ্তি টানলাম।
তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়?
দুঃখের দহনে, করুন রোদনে, তিলে তিলে তার ক্ষয়।
আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়.।
Click This Link তরুণীদের মডেল হওয়ার অন্ধকার স্বপ্ন, অত:পর..?? (প্রথম পর্ব)]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৮