somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ভ্রমণ - চাষনী পীরের মাজার

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯শে অক্টোবর ২০১৪ইং তারিখে সিলেটে একটা ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ড ভ্রমণের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের গাড়ী ছাড়া হল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে। পথে তখনও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। পথের ধারের চিরচেনা গ্রামবাংলার আবহমান দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। “শ্রীমঙ্গলের পথে” চলতে চলতে আমরা যখন লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে পৌছাই তখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদার পেরিয়ে লাউয়াছড়ার ছড়াতে ঝিরিঝিরি শীতল জল ছুঁয়ে পৌছাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেল লাইন এর সামনে। অল্প সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ শেষে আমরা পৌছাই মাধবপুর লেকে। অল্প সময়ে মাধবপুর লেক ভ্রমণ শেষে আমারা যাই মাধবকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে। বিকেলটা কেটে যায় “মাধবকুণ্ড ঝর্ণা ভ্রমণ” করে। সেখান থেকে ভ্রমণ শেষে পৌঁছই সিলেটে।

পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে হযরত শাহজালাল দরগাহতে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা চললাম ৬০ কিলোমিটার দূরের বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে। অচেনা রাস্তা বলে সময় কিছুটা বেশী লাগায় হাদারপাড় বাজারে যখন পৌছাই তখন ঘড়িতে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। একটি ট্রলার ভাড়া করে চললাম পিয়াইন নদীর অল্প জলের বুক চিরে বিছনাকান্দির দিকে। বিকেলের মধ্যে বিছনাকান্দির মহনীয় রূপ আর জল-পাথরের খেলা উপভোগের পালা শেষে পিয়াইন নদীতে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে রাতে ফিরে আসি আমাদের আস্তানা সিলেট শহরে।

পরদিন ২১শে অক্টোবর সকালে নাস্তা শেষে সোয়া ১১টার দিকে পৌছাই হযরত শাহপরান দরগাহ। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ১২টা নাগাদ বেরিয়ে পরবর্তী গন্তব্য হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড দেখে এগিয়ে চলি লালাখালের পানে। নীলজলের লালাখাল আর লালাখালের কর্ম ব্যস্ততা দেখা শেষে আমাদে সেদিনের শেষ ভ্রমণ গন্তব্য জাফলং। জাফলং পৌছে চোখে পরে গোয়াইন নদীতে জাফলং এর কর্ম ব্যস্ততা। গোয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলে জল-পাথরের খেলা দেখতে দেখতে বেলা শেষে জাফলং-এ সূর্যাস্ত দেখে সিলেট ফিরে আসি।

পরদিন ২২শে অক্টোবর, ফিরে আসবো ঢাকায়। তবে ফেরার আগে আরো কয়েকটা যায়গা দেখে নেয়ার ইচ্ছে আছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি সিলেটের হোটেলগুলি টুরিস্ট বান্ধব না। দেশের অন্য যেকোনো যায়গায় হোটেলে লাগেজ রেখে শেষ দিন বের হওয়া যায়, বিকেলে বা রাতে ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। সিলেটে তার কিছুই পাওয়া যায়না। ওয়াস রুম ব্যবহার করতে হলে একদিনের রুমের ভাড়া দিতে হয়। যাইহোক সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে সিদ্ধান্ত নেই সমস্ত লাগেজ গাড়িতে নিয়েই বেরিয়ে যাবো।


আমাদের প্রথম গন্তব্য সিলেট নগরীর উত্তর কাজিটুলার সৈয়দ চাষনী পীর (রঃ) এর মাজার। হযরত শাহ জালালের অন্যতম সফর সঙ্গী ও ৩৬০ আউলিয়ার বিশেষ একজন ছিলেন এই হযরত সৈয়দ চাষনী পীর (রঃ)।

কথিত আছে হযরত শাহজালাল (রঃ) তার মামার নির্দেশে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কোন মাটির সাথে এই মাটির মিল রয়েছে তার সন্ধানে বের হন। পথে হিন্দুস্থানে দেখা হয় সৈয়দ চাষনী পীরের সাথে। চাষনী পীর ছিলেন ভূ-তথ্যবিদ (মৃত্তিকা বিজ্ঞানী)। তাই হযরত শাহ জালাল (রঃ) তাকে নিজের সফর সঙ্গী করে নেন এবং মামার দেয়া মাটির থলিটি চাষনী পীরের হেফাজতে থাকে। শেষে সৈয়দ চাষনী পীর সিলেটের মাটির সাথে এই মাটির মিল খুঁজে পান। তাই হযরত শাহ জালাল (রঃ) এই সিলেটে নিজের আস্তানা করেন।



সৈয়দ চাষনী পীর (রঃ) এর এই মাজারটি একটি ছোট টিলার উপরে অবস্থিত। কয়েক ধাপে অনেক গুলি সিঁড়ি টপকে উঠতে হয় টিলার চুড়ায় অবস্থিত মাজারটিতে। যতদূর জানা যায় অনেক অনেক কাল আগে এই অঞ্চেলের মুরুব্বিরা সৈয়দ চাষনী পীরের আর্বিভাবের নির্দশন পেয়ে এখানে মাজার স্থাপন করেন। তবে এখানেই সৈয়দ চাষনী পীরের আর্বিভাবের নির্দশন ছিল কিনা তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমান আজও মিলেনি।







এখানেই সৈয়দ চাষনী পীরের মাজারের টিলায় এবং আশপাশে কয়েক শ বানরের বসবাস। জানা যায় মাজারে কাছেই দলদলি চা-বাগানের বন উজাড় হয়ে যাওয়ার পরে ১৯৮৪ সাল থেকে মাজার এলাকার বাসিন্দা হয়ে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে বানরগুলো। এই স্থানে পূর্ব থেকেই জঙ্গল ছিল, তে তা এখন উজার হয়ে গেছে। একসময় বাধ্য হয়ে জঙ্গলের অন্যান্য প্রাণীরা চলে গেলেও বানরগুলি এলাকার মানুষের ভালবাসা পেয়ে এখানেই রয়ে যায়।



মূলত মাজারে আসা ভক্তদের দেওয়া খাবারই এই বানরদের ক্ষধা মিটায়। প্রকৃতি থেকে খাবার যোগারের তেমন কোনো ব্যবস্থা আর অবশিষ্ট নেই। এই বানরদের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব বনবিভাগের হলেও তাদের তেমন কোনো দায়িত্ব পালন করে বলে মনে হয় না।






মাজার আর বানর দেখা শেষে এবার আমাদের গন্তব্য মালনীছড়া চা বাগান..........
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×