somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০ : বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০ এর যাত্রা শুরু ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২০ বাংলাদেশ বিমানের দুপুর ২টার ফ্লাইটে। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ৪০ মিনিটে প্লেন থেকে পাখির চোখে দেখা অপরূপ দৃশ্যের স্বাদ নিতে নিতে আমরা ৪ জন পৌছে যাই কক্সবাজার এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটি ইজিবাইক ভাড়া করে চলে আসি কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টের কল্লোল হোটেলের রেস্টুরেন্ট কাশুন্দি-তে। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে পাশেই হোটেল অভিসারে উঠে আসি। তারপর চলে যাই সাগর সৈকতে প্রথম দিনে সূর্যাস্ত দেখবো বলে। বিকেল আর সন্ধ্যেটা কাটে সাগর পারে ভাড়া করা বিচ চেয়ারে আয়েসী আলসেমীতে চারধার দেখতে দেখতে।

পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বরে সকালে নাস্তা সেরে চলে আসি সাগর পারে। শুরু হয় কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০ এর দ্বিতীয় দিনের সমূদ্র স্নান। অনেকটা সময় নিয়ে চলে সমূদ্র স্নান আর ছবি তোলা। সমূদ্র স্নান শেষে হোটেলে ফিরে দুপুরে লাঞ্চ শেষে আমরা বেড়াতে যাই রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের রঙ্গীন মাছের দুনিয়ায়। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে নানান প্রজাতির মাছ দেখা শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যাই পুরনো বার্মীজ মার্কেটের পিছনে অবস্থিত আগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং দেখতে।



৩০ সেপ্টেম্বর সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পরি সারাদিনের জন্য বেড়াতে। সম্ভবতো ১,২০০ টাকায় একটি সিএনজি ভাড়া করি সারা দিনের জন্য। রুট প্লান হচ্ছে কক্সবাজার > রামু > ইনানী > কক্সবাজার



আমাদের প্রথম গন্তব্য কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ। আগে এই মসজিদের কি নাম ছিলো জানি না, তবে বর্তমানে এটিতে সাচী চৌধুরী জামে মসজিদ নাম ফলক লাগানো রয়েছ। কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় মসজিদটির অবস্থান বলে লোক মুখে এটি বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ নামে অধিক পরিচিতো।











এই মসজিদের নাম নিয়ে ঝামেলা আছে। এর অনেকগুলি নাম পাওয়া যায়। আগে এটি গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত ছিলো। সাধারনত এক রাতে হঠাত করে তৈরি হয়েছে বলে প্রচলিতো মিথ ওয়ালা মসজিদ গুলিকে গায়েবী মসজিদ বলা হয়। এই মসজিদটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং কে কবে কখন এই মসজিদটি তৈরি করেছে তার কোনো সঠিক তথ্য জানা নাই বলে এটি গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিতো হয়ে ওঠে। কেউ কেউ আবার গায়েবির বদলে আজগবি মসজিদ বলেন।








কয়েকটি সূত্র মতে এটি কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প শাহ সুজা মসজিদ। মোঘল শাহজাদা শাহ সুজা এই এলাকা হয়ে আরাকানে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এই মসজিদটি তৈরি করেছেন বা করিয়েছেন বিষয়টি তেমন নয়। বরং তার সমসাময়িক সময়ে এই মসজিদটি তৈরি হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয় এবং এই কারনেই এটিকে কেউ কেউ কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প শাহ সুজা মসজিদ বলতে পছন্দ করেন।










চৌধুরী পাড়া মসজিদ নামেও একে ডাকা হয়। কারণ এর অবস্থান চৌধুরী পাড়ায়। এই অবস্থানগত কারণে অনেকে আবার এটিকে ঝিলংঝা সিকদার পাড়া জামে মসজিদ হিসেবেও চেনেন। মসজিদটির প্রধান গম্বুজটির সাথে নাকি সামুদ্রিক পটকা মাছের সাদৃশ্য রয়েছে (আমার কাছে তা মনে হয়নি)। তাই এটি পটকা বা পুটকা মসজিদ নামেও পরিচিত।






মূলতো মসজিদটি কে কখন নির্মাণ করেছিলেন এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত তথ্য কারো কাছে না থাকার কারণে এবং মসজিদে কোনো শিলালিপি না পাওয়ার করণে নাম সংক্রান্ত এই ভিন্নতার সমস্যাটি হয়েছে।

শুনতে পাই এই মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের কবরস্থান, সামনের বিশাল দীঘি, পাশের ফসলি মাঠ দখল করে নেয়ার জন্য প্রভাবশালী মহল পায়তারা করছে। বর্তমান নাম পরিবর্তণের সেটিও একটি কারণ বলে অনেকে মনে করেন।






মসজিদটিতে জ্বীনেদের নামাজ আদায় করা ও কোরআন তেলাওয়াত করা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ঘনটার জনশ্রুতি রয়েছে। সেই গল্পগুলিতে না যাই। মসজিদের সামনের দীঘিতে মাছ চাষ হয়। গল্প চালু আছে সেই মাছ কেউ চুরি করতে পারে না। তবে বর্তমানে কিছু প্রভাবশালী লোক রাতের অন্ধকারে চুরি করে সেই দীঘির একপাশে মাটি ফেলে ভরাট করে দখল করে ফেলছে।







আমরা সকাল ১০টার দিকে মসজিদে পৌছেছি। সম্ভব আগের জ্বীনেরা অবসরে গেছে, অথবা তারা দিনের বেলার দায়িত্ব নেয়নি। তাই চুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে মসজিদের দরজায় তালা দেয়া আছে। ফলে আমি ভিতরের কোনো ছবি তুলতে পারি নাই। বাইরে থেকে একটি ছবি তুলেছি কোনো রকমে। পুরনো মসজিদের এক অংশ নতুন করে বর্ধীত করা হয়েছে। চোখে লাগার মতো হলদে সোনালী রং করা হয়েছে। ভিতরে টাইলস লাগানো হয়েছে।



ছবি তোলার স্থান : বিজিবি ক্যাম্প, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 21°25'54.7"N 92°00'10.4"E
ছবি তোলার তারিখ : ৩০/০৯/২০২০ ইং

পুরনো এই মসজিদটি দেখা শেষে এবার আমরা রওনা হলাম রামুর দিকে। অনেকবার কক্সবাজার এলেও রামুতে যাওয়া হয়নি আমার। এবারই প্রথম যাচ্ছি।


চলবে.....


ভ্রমণ সংক্রান্ত আমার সকল লেখার লিংক - মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস


সিলেট ভ্রমণ : হযরত শাহজালাল ও শাহপরান দরগাহ, চাষনী পীরের মাজার, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং, হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড
শ্রীমঙ্গল : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক,
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ : আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ঝুলন্ত সেতু, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ : সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার
বান্দরবন ভ্রমণ : নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির
কক্সবাজার ভ্রমণ : রঙ্গীন মাছের দুনিয়া, আগ্গ মেধা ক্যাং, বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ
নারায়ণগঞ্জ : ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির, টি হোসেন বাড়ি, কদম রসুল দরগাহ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, সিরাজ শাহির আস্তানা, কুতুববাগ দরবার শরিফ, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, পালপাড়া মঠ, বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি, মহজমপুর শাহী মসজি



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের এখনই সময়।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৮




দেশ এখন বেশ বহুমুখী চ্যালেন্জ মুখাবেলা করছে বিশেষ করে ভারতের মিডিয়াগুলোর সর্বদা মিথ্যচার বেশ অস্বস্থিকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
বর্তমান সরকার অবশ্য বেশ শান্ত মেজাজে সব কিছু চমৎকারভাবে হ্যান্ডেল করছে তবুও জনপ্রতিনিধির... ...বাকিটুকু পড়ুন

পত্রিকায় শেখ মুজিবের শাসন-আমল ১৯৭২,১৯৭৪

লিখেছেন রাকু হাসান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০২



ইতিহাস বহমান নদীর মত। তাকে তার মত চলতে দেওয়াই শ্রেয়। সে নদীতে কেউ পূর্ণার্থে
স্নান কিংবা সে পানি পান করবে না ,সেটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । যে বই,ইতিহাস উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদ কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

×