somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশ্রমে দিন-রাত্রি

০১ লা জুন, ২০২২ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাত ২৯শে মে সকালে যাওয়ার কথা ছিল টঙ্গী হাটে আশ্রমের জন্য কয়েকটি হাঁসের বাচ্চা কিনবো, দুটি ভেড়াও কেনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হীরার বাসায় হঠাত করে মেহমান এসে পড়ায় বের হতে হতে অনেক দেড়ি হয়ে গেলো। ফলে সঙ্গী যাদের হওয়ার কথা ছিলো তারা কেউই যেতে চাইলো না। অগত্যা আমি আর হীরা বের হলাম বাসা থেকে। সময় তখন সম্ভবতো সাড়ে বারোটা। আকাশে রোদের তেজ না থাকলেও ঘরম ছিলো খুব। তাই আমরা বাড্ডা থেকে নতুন বাজার গিয়ে সেখান থেকে এসি বাসে চলে গেলাম টঙ্গিতে।

হাটে পৌছে বুঝতে পারলাম আমরা বেশ দেড়ি করে ফেলেছি। বাচ্চা হাঁস নেই বললেই চলে। অনেক খুঁজে পরে একজনের কাছে মাঝারি সাইজের কিছু হাঁসের বাচ্চা পাওয়া গেল, ১০টির মতো হবে। দরদাম করে শেষে প্রতিটির দাম ঠিক করা হলো ১৫০ টাকা করে। কয়েকটি দূর্বল মনে হওয়া বেছে বেছে শেষ পর্যন্ত ৭টি হাঁস নেয়া হলো। আরো কিছু নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও দুই যায়গা থেকে নেয়াটা হাঁসের রোগ ছড়ানোর কারণ হতে পারে বলে এই ৭টি নিয়েই রওনা হলাম আমরা আশ্রমের দিকে। দিপঙ্করকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমরা দুজন আসতেছি। ভূনা খিঁচুড়ি আর ডিম ভাজির ব্যবস্থা করে রাখতে বললাম।

টঙ্গী ব্রিজের দক্ষিণ পাশে থেকে ইজিবাইকে চললাম উলুখোলা ব্রিজে। পথে বারবার হাঁসগুলি নিজেদের পায়ের বাঁধন খুলে ফেলে আমাদের বিপাকে ফলতে শুরু করলো। শেষে বাধ্য হয়ে ওদের পায়ে ধরে ঝুলিয়ে নিতে হলো। এক সাথে ৩-৪টা হাঁসের ওজন একেবারে কম নায়! কিছুক্ষণ পরেই হাত ব্যথা হয়ে যায়। যাইহোক ইজিবাইকে উলুখোলা নেমে সেখান থেকে আরেকটি বেটারি রিক্সা নিয়ে পৌছে গেলাম আশ্রমের কাছে।
















আশ্রমের সাবমার্সিবল পাম্পটি পুরে গেছে। নতুন আরেকটি কেনার আগে সোলার প্যানেল থেকে কত ওয়াড আসছে আরো কি কি যেন চেক করতে হবে (এইসব বিষয়ে আমার জ্ঞান শূণ্যের কোঠায়, আমি এইসব বুঝি না)। হীরা তাই একটা ডিজিটাল মিটার নিয়ে এসেছে। কিন্তু একেতো আকাশে মেঘ তার উপরে বিকেল হয়ে গেছে তাই সোলার প্যানেল থেকে কিছুই মাপা গেলো না। ততোক্ষণে প্রচন্ড খিদা লেগে গেছে খুব।









বিকেল থেকে আশ্রমের চারপাশের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। তাছাড়া এখন বর্ষাকাল হওয়াতে চারদিকে বর্ষার নতুন জল এসে গেছে। সময়ের সাথে সাথে জল বড়তেছে। জলের উপর দিয়ে শীতল বাতাস বয়ে আসে আশ্রমে। আশ্রমের বিচিত্র বাড়ির ঝাপগুলি যখন খুলে দেই তখন শাতল-মাতাল হাওয়া মন উদাস করে তোলে। এবারও তাই হলো। ভাবলাম রাতটা থেকেই যাই। পরদিন সকালে সূর্য উঠলে মাপামাপির কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরা যাবে।































বাসায় ফোন করে বিষয়টা জানাতেই শুরু হলো ক্যাচাল, নানান ভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজী করাতে হয়েছে। হীরারও একই অবস্থা। ও বাড়িতে বলেছে হাস রান্না হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যত রাতই হোক ফিরে আসবো। রাতেন ১১টা পর্যন্ত এই বুঝ দিয়ে রেখেছিলো হীরা ও বাড়িতে। হাঁস কিন্তু সত্যিই রান্না করা হয়েছি। আশ্রমে রাতে পরিবেশ লিখে বুঝানো সম্ভব না। সন্ধ্যার পরে হীরা আর দিপঙ্কর চলে গেলো বাজারে, কিছু কেনা কাটা আছে। দুধের সর, মুড়ি, কোক এইসব টুকটাক জিনিস।

ওরা চলে যাওয়ার পরে আমি আশ্রমের দ্বীপে একা। চারিধার অন্ধকার, আশেপাশে কোথাও কোনো আলো নেই। দূরে অন্য একটি গ্রামের টিমটিমে আলো দেখা যায় একটুখানি। হাজারো নিশিজাগা পোঁকার ডাকে চারিদিক মুখরিত। বড় বড় কিছু মশা আমাকে একা পেয়ে আক্রমণ করে বসলো। ফোন করে বললাম কয়েল নিয়ে আসবে। তবে একটু পরেই তারা উধাও হয়ে গেলো, কয়েল আর জ্বলতেই হয়নি সারা রাত। আমি একা একা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে শুয়ে প্রকৃতির মাঝে মিশে যেতে চাইলাম....

অনেক্ষণ পরে ওরা ফিরে এলো। আমি তখন গোসল করে ঝরঝারা শরীরে হাঁস কাটতে বসলাম। তারপর শুরু হলো হাঁস রান্না। অনেক রাতে হাঁস রান্না শেষ হলে পরে আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। দিপঙ্কর গেলো টেটা নিয়ে মাছ শিকারে। একটি টাকি মাঝ ধরে ফেললো অল্প সময়েই। কিন্তু টর্চের আলো কমে গেছে বলে পরে আর পেলো না কিছুই। এক সময় আমি আর হীরা ঘুমানোর আয়োজন করলাম। দিপঙ্কর আর তার বন্ধু গেলো শশ্মানে কাছে একটি গাছ থেকে আম পারতে।


সকালে এরা ফোটে এখন আশ্রমে

সকালে দোকান থেকে পরটা আনিয়ে হাঁসের ঝোল গরম করে নাস্তা সেরে নিলাম। আকাশে গুমট মেঘ, মাপামাপির কাজ আজও হলো না তাই। সকাল হলেই আশ্রমে থাকাটা কষ্টকর হয়ে যায়। টিনের ঘর হওয়াতে বেশ একটা অস্থির গরম হয়। তাছাড়া এখনো গাছ-পালা ছায়া দেয়ার মতো বড় হয়নি। বাতাসও সকালে কম থাকে।












তাই বের হয়ে গেলাম আশ্রম থেকে বাড়ির পথে। করান বাজার থেকে ৬০ টাকায় ২টি টেডি সাইজের কাঠাল নিলাম। আর রাতের পারা এক ব্যাগ আমের দাম ২০০ টাকা ফেরার সময় সেই গাছের মালিককে দিয়ে দিলাম। এবার বাড়ি ফেরার পালা। বেশ কিছুটা পথ আশার পরেই আকাশ কালো করে মেঘ জমতে শুরু করলো, সাথে শীতল হাওয়া। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ পেলাম। বেরাইদ এসে নৌকাতে যখন উঠছি তখন বৃষ্টি হচ্ছে, শীতল বৃষ্টি....




=================================================================
আশ্রমের কথা :
প্রায় কাল্পনিক একটি রাতের চিত্র
বৃষ্টি বিলাস
গল্প কিন্তু গল্প না
বর্ষার জলে অবগাহন চিত্র
শীত বিলাস ২০২২
এবার আগাম জোয়ার এসেছে!!
আশ্রমের পুকুরে দ্বিতীয় দফায় মাছ ধরা হলো
আবার কোনো দিন বৃষ্টিতে ডুব দিবো পুকুরের জলে....
আবার কোনো দিন বৃষ্টিতে ডুব দিবো পুকুরের জলে.... (ছবি ব্লগ)
আশ্রম বিলাস
আশ্রমে গিয়ে বিপাকে
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২২ রাত ১০:১৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×