somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখ-পাখালি - ২৬ : সান প্যারাকিট

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক বছর আগের কথা, ২০১৪ সাল, জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে গিয়েছিলাম গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। দিনটি ছিলো আমার বড় কন্যা সাইয়ারা নাজিবা সেহেন এর জন্ম দিন। ওর জন্ম দিন উপলক্ষ্যেই এই বেড়াতে যাওয়া। তখন সবে নতুন নতুন চালু হয়েছিলো সাফারি পার্কটি। পার্কের একটি অংশে ছিলো নানান ধরনের বিদেশী পাখিদের খাঁচা। আলাদা টিকেট কেটে সেখানে ঢুকতে হতো। হরেক রকম পাখিদের মধ্যে খুবই সুন্দর একটি উজ্জ্বল রঙের পাখি ছিলো। নাম তার সান প্যারাকিট (Sun parakeet).

সান প্যারাকিটের বাংলা কোনো নাম আছে কিনা আমরা তা জানা নেই। তবে এর বেশ কয়েকটি কমন নাম রয়েছে।
Common Name : Sun conure, Jandaya parakeet, Jenday conure, Aratinga jandaya
Binomial name : Aratinga solstitialis


সান প্যারাকিট একটি মাঝারি আকারের উজ্জ্বল রঙের তোতা জাতীয় পাখি। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় বাসিন্দা এরা। এদের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। এদের ঠোঁট কালো, মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সোনালি-হলুদ, আর গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত লালচে কমলা রঙের। পিঠের রং সোনালি-হলুদ আর ডানার রঙ সবুজ। লেজে আছে নীল, সোনালি-হলুদ আর সবুজ রঙের পালক।

সান প্যারাকিটেরা সাধারণত ঝাঁক বেঁধে দলবদ্ধ ভাবে বাস করে। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ টি পাখি মিলে একটি বড় ঝাঁক তৈরি করে। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ও একটি মেয়ে পাখি মিলে একটি একগামী জোড়া গঠন করে। একটি পূর্ণবয়ষ্ক সান প্যারাকিটের ওজন প্রায় ১১০ গ্রাম এবং প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। পুরুষ আর মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম হলেও মহিলা পাখি গুলি পুরুষের তুলনায় কিছুটা হালকা এবং সরু হয়। এরা সাধারণত ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।



বন্দিদশায় নানান কলা-কৌশল শেখার ক্ষমতা এদের রয়েছে। প্রশিক্ষকের কথাবার্তা বুঝার ক্ষমতাও এদের আছে। অর্থাৎ এরা বেশ বুদ্ধিমান পাখি। পায়ের আঙ্গুল ও নখ ব্যবহার করে কোন কিছু ধরা বা খাবার খাওয়ার ক্ষমতা এদের আছে অন্য তোতাদের মতোই। এরা প্রধানত ফল, ফুল, বেরি, বীজ, বাদাম এবং পোকামাকড় খায়। প্রজনন ঋতুতে এদের বেশি প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়, বাচ্চাদের লালন-পালনের সময় বেশি কার্বোহাইড্রেট এবং ডিম উৎপাদনের সময় বেশি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।


সান প্যারাকিটের ঝাঁক খাওয়ার সময় তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে, কিন্তু উড়ে যাওয়ার সময় বেশ শব্দ করতে থাকে। এরা এক দিনে মাইলের পর মাইল বেশ দ্রুত গতিতে উড়ে যেতে পারে ঝাঁক বেঁধে। এরা ঝাঁক ছেড়ে খুব কমই বের হয়। কখনো দল থেকে বিচ্ছিন্ন হলে উচ্চ-স্বরে চিৎকার করে যা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। সেই চিৎকার শুনে তার দলের অন্য পাখিরা সাড়া দিলে সে তার দলকে খুঁজ পায়।


সান প্যারাকিটের এই প্রজাতিটি বর্তমানে বাসস্থানের অভাব এবং পোষা প্রাণীর ব্যবসায়ীদে ফাঁদে আটকে পড়ার কারণে প্রকৃতিতে আশংকাজনক ভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গেছে। তাই এদেরকে বর্তমানে IUCN (International Union for Conservation of Nature and Natural Resources) এর বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।



ছবি তোলার স্থান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ১৪ই জানুয়ারি, ২০১৪ খ্রীষ্টাব্দ্।
তথ্য সূত্র : অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ।

=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
পাখ-পাখালি - ০১, পাখ-পাখালি - ০২, পাখ-পাখালি - ০৩, পাখ-পাখালি - ০৪, পাখ-পাখালি - ০৫
পাখ-পাখালি - ০৬, পাখ-পাখালি - ০৭, পাখ-পাখালি - ০৮, পাখ-পাখালি - ০৯ পাখ-পাখালি - ১০
পাখ-পাখালি - ১১, পাখ-পাখালি - ১২, পাখ-পাখালি - ১৩, পাখ-পাখালি - ১৪, পাখ-পাখালি - ১৫
পাখ-পাখালি - ১৬, পাখ-পাখালি - ১৭, পাখ-পাখালি - ১৮, পাখ-পাখালি - ১৯, পাখ-পাখালি - ২০
পাখ-পাখালি - ২১, পাখ-পাখালি - ২২, পাখ-পাখালি - ২৩, পাখ-পাখালি - ২৪, পাখ-পাখালি - ২৫
পাখ-পাখালি - ২৬
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×