অনেক বছর আগে জন্ম নিলে এমনি এমনি আমার সিক্স প্যাক হয়ে যেতো। শিকারে যেতাম একটু হাত-পা ছোড়ার বয়স হলে। বাবা শেখাতেন কিভাবে বন্য শুয়োর বা ম্যামথ শিকার করতে হয়। শিকারে ব্যার্থ হলে নিজেও শিকারে পরিনত হতে সময় লাগতো না। কিল অর বি কিলড রাইট! প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হতো। এই ডিপ্রেশন, প্রোলংড প্রোক্যাস্টিনেশন নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকতো না। আমার ক্ষিধে লাগতো। তা মেটানোর জন্য নিজেই বনবাদাড় থেকে খাদ্য যোগান দিতাম। এক এলাকার খাদ্যের অভাব হলে অন্য এলাকায় চলে যেতাম। কেউ আমার আইডি দেখতে চাইতো না। অপরিচিত জায়গায় আমি অবাঞ্চিত হতাম না। কেউ আমার ধর্ম দেখতো না, বর্ণও না। আমি প্রকৃতির অন্য সন্তানদের মতই একজন সন্তান হতাম। ইউর জাংগল, ইউওর সারভাইভাল মেনে চলতে হতো। হয় বাচতাম না হয় মরে যেতাম। মাঝামাঝি থাকতে হতো না।
আমার একজন সঙ্গী হতো। সেও জীবনযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো। চাঁদের আলোয় একজনের চোখে আরেকজন বিভোর হয়ে মগ্ন থাকতাম। বন্য, উন্মত্ত, উশৃংখল কিন্তু পরিশেষে নিবিড় হতো আমাদের সম্ভোগ। এখনকার রাতের মতো এতো আলোর ভীড়ে জোছনা দেখার অভাবটা বোধ হতো না। প্রতিনিয়তই জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে থেকে একজন আরেকজনের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হতো।অনেক সময় থাকতো আমাদের হাতে। নক্ষত্র দেখতাম। একসাথে । নিস্তব্ধতা, অন্ধকার আমাদের প্রিয় হতো। একে অপরের শ্বাসের শব্দ শুনতাম। অজানা রহস্যময় ভয়ই আপন হতো।আমার সন্তান হতো। তাকে কিভাবে বাচতে হয় তা শেখাতাম।
আমি টাকার কন্সেপ্ট নিয়ে ভাবতাম না। কতোটা পোশাক পড়ে আছি তা নিয়ে ভাবতাম না। সমাজ নামক ভন্ডামি নিয়ে ভাবতে হতো না। পঁচিশে চাকরি আটাশে বিয়ে নিয়ে ভাবতাম না। ব্লাডপ্রেসার,ডায়বেটিস, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ ঘুষ,যৌনতা, বডিকাউন্ট,পরকীয়া, বেতন, ট্যুর, বাচ্চার রেজাল্ট, ফরমালিন, ভেজাল,প্রফিডেন্ট ফান্ড,প্যারানয়া,,,,,, এসব তখন অলীক। আমাকে শুধু বেচে থাকার উপায় খোজা নিয়ে বেচে থাকতে হতো।
এখন, আমার সামনে সমানে সবাই শব্দ করে যাচ্ছে। বিংশতম শতাব্দীর শব্দ। কাপড়ে পড়েও নগ্নতার শব্দ। সমাজের দোহাই দিয়ে ভন্ডামির শব্দ। সৎ পথে থেকে ধুলায় লুটিয়ে পড়ার শব্দ। চাহিদার শব্দ। লোভের শব্দ। কাপুরুষতার শব্দ। পাপ-পুন্যের শব্দ। আমার কানে তালা লেগে যাচ্ছে। আমার পরিচয় দিতে হচ্ছে সবখানে। শব্দ করে বেচে থাকতে হচ্ছে। অথচ শব্দ করলেই শিকার ফসকে যেতো আগে। আমিও শব্দ করছি। বেচে থাকতে শব্দ করতে হচ্ছে। ভন্ডামির শব্দ করছি শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি খরচ করে। শরীরের আর মানিব্যাগের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রাণপণে শব্দ করে যাচ্ছি। কেবল পরিপূর্ণ হচ্ছে না।
অথচ আমার শিকার করার কথা। পিনবতন নীরবতার মধ্য দিয়ে। গুহায় বসে সন্তানের, সঙ্গীর মুখে জোছনার আলো দেখার কথা। নক্ষত্র দেখার কথা। সবুজ ঘাসের মাঠে গরুর মতো ধীরে লয়ে বেচে থাকার কথা। শ্বাস নেবার কথা। সময় হয়ে এলে উবে যাবার কথা।
লেখাগুলোও আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তাদেরও আকর্ষণীয় ভুমিকা,যবনিকার প্রয়োজন হচ্ছে। এবারে দিতে পারলাম না। দুঃখিত। এই লেখা আমার না। যারা এ সো কল্ড আধুনিক যুগে এমন অনুভব করেন, তাদের।