somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ম্যাজিক মুনশি' ও আমার প্রাক্তনের ম্যাসেজ এবং দুই চাকার বাতাসী।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি মনে করি আমি একজন প্রতিভাশুন্য নকল মানুষ। যখন যে লেখকের বই পড়তে থাকি। তার ভাব আমার লেখায় চলে আসে। পরে বুঝতে পারি। এই লেখাটা নিজের এই দুরাবস্থা আবার যাচাইয়ের জন্য। মুলত ভিন্ন একটি দিন আমার কেমন গিয়েছে তাই লিখে রাখা। বহু দিন পর আমার প্রাক্তন আমাকে ম্যাসেজ দিয়েছেন। এই ম্যাসেজ টা যদি সকালেই দেখতে পেতাম তাহলে হয়তো আমার দিন অন্য রকম হতো। হয়তো স্মৃতিচারণ করেই দিনটা শেষ হতো। সুখস্মৃতি। আমাকে সহ্য করা অসাধারণ ব্যাপার। অনেকদিন যিনি আমাকে সহ্য করেছেন তাকে নিয়ে আমার মনে কোনদিনই বিরুপ স্মৃতির উদ্ভব হবার নয়। বইয়ে মুখ গুজে থাকা কিংবা মুভি সিরিজে ডুবে থাকা অথবা শরীরচর্চার পর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ে থাকাই আমার বেশিরভাগ ছুটির দিনের কাজকর্ম।




কিন্তু আজ বেরিয়ে পড়লাম। লক্ষ্য, স্কুটারে করে মুসাপুর ক্লোজার টা দেখে আসা। অনেকে দিন ধরে মগজে উষ্কানি দিচ্ছিলো জায়গাটা। ভাবছিলাম বাতাসীকে ( স্কুটারের মায়ের দেয়া নাম) নেব না। কিন্তু বেচারি আবার খুব মন খারাপ করে। আমার হাতে ইঞ্জিনের অনেক টাকা বিল ধরিয়ে দেয়। মানে তিনি বসে থাকতে চান না। কিংবা বলা যেতে পারে আমার আরেকজন বিরহিণী হিসেবে তিনি দুদিন ঘরে থাকতে নারাজ। ভাবলাম চলুক আমার সাথে। এতটা পথ একা ছাড়বেন না বোধয়। ছাড়লে আমার অর্ধেক পড়া বইটা আজ শেষ হয়ে যেতো। কি আর করা।





অসাধারণ সুন্দর এই পথটা। না আসলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবেনা। সব ক্যামেরাগুলো বাতাসী তার গর্ভে বহন করবে এই বৃস্টির দিনে এটাই প্রাপ্তি। আবার যেখানে খুশি সেখানে যাওয়া যাবে। কেউ একজন বলেছেন, Life is not here, it's out there. নেটে দেখেছি। আচ্ছা বাইরে জীবন যেহেতু আজ ঘরেই থাকব না। মুসাপুর সৈকত টা সুন্দর। ঝাউবন, ব্লকের বাধ সহ নয়নাভিরাম বললে কম বলা হবে। কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় আর অলস থাকার কারণে ভালো ছবি তোলা আমার দ্বারা হয় না। আবার ফটোগ্রাফির ক খ ও জানিনা। শখ বলে কথা। এতদূর আসার পর কিছু একটা ক্লিক করে বাড়ি ফিরতে হয়।




বাড়ি ফেরা খুব কঠিন মনে হলো। আসলে আমার পঞ্চাশ কিলো রেডিয়াসের ভেতরে আমার বন্ধু আছে মন তা জানতে পেরে গেছে। তবে তাই হোক। আমার একজন প্রাণপ্রিয় বন্ধু মুসাপুরের অন্য প্রান্তে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত। তাকে কল দিতেই জানা গেলো তার কর্মব্যাস্ততার পরেও আমাকে গ্রহণ করতে রাজি আছেন। আসলে সবসময় আমাকে সাদরে গ্রহণ করতে রাজি থাকেন তিনি। খানিকটা প্ররোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্কুটারে চেপে বসলাম। ফেনী নদীর ব্রীজের নিচে দেখলাম নদীর চরে অনেকে ফুটবল খেলছে। একটি গোলও ক্যামেরা বন্দী করতে পারলাম। এক প্রান্তে চর জেগেছে অন্য প্রান্তে জল। এই দেশ আসলেই অনেক সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর নদীগুলো। নদীতে মহিষের গা ডুবিয়ে থাকাটা খুবই স্থির এবং প্রশান্তির মনে হলো। মহিষের মতো বাচা উচিৎ। ঘাসে সবুজে, গা ডুবিয়ে, চিন্তাহীন। কেন পারিনা?





এসে পড়লাম মীরসরাইয়ে। এসে দেখলাম তিনি চোর ডাকাত ধরতে বেরিয়ে পড়েছেন। আমাকে এই ফাকে মহামায়া লেক টা ঘুরে দেখতে বলা হলো। আসার সময় মুহুরি প্রজেক্টের পথটা অনেক দিন মনে থেকে যাবে। প্রচন্ড বাতাসে আমার ১০৪ কেজি স্কুটার সহ আমি উড়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। খুবই ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো বাতাসের ঘুর্ণি। মহামায়া লেকে দলবলে নয় বছর আগে এসেছিলাম। আজ একা একা। মহামায়া লেক সবুজে একাকার হয়ে আছে। অনেকদিন পর পর এই সবুজ আমার দরকার হয়ে পড়ে। আমি যদি শুধু একজন ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারতাম। জীবনের যেকোনো কিছু একটা সম্পুর্ণ ভাবে করতে না পারার কস্টটা আমাকে আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। পা মানছিলো না। তারপরেও উচু এই পথ হাটার ব্যাপারটা অসাধারণ লাগছিলো। বন্ধুর অভাবে কায়াকিং করা হলো না। মানুষের জীবনের অর্থটা পরিস্কার হয়ে গেলো। কয়েকবছর আগে অনেকজন মিলে আসা আর আজ একা হেটে বেড়ানোর মেটাফোরটা সবাই বোধয় বুঝতে পেরে যায় আগে পরে।




ফিরে এসে একটি চায়ের দোকানে যখন অপেক্ষা করছি তখন বন্ধু এলেন। তাও বসতে বলে আবার ছুটলেন। লক্ষ করলাম তার ভীষন কাজের চাপ। জানিয়ে দিলাম, Take your time. মোবাইলে থাকা পড়ে ফেলা বইগুলো দেখতে লাগলাম। হুমায়ুন স্যারের ' ম্যাজিক মুনশি' নিয়ে পড়তে বসলাম। এই ভয়াবহ যানবাহনের শব্দ উপেক্ষা করে বইয়ের লেখা গুলো আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল বাহিরের জগৎ থেকে। মুগ্ধ হলাম এই হট্টগোলের মধ্যেও বই পড়া যায় ভেবে। সাথে থাকা গাড়ির হর্ণ, দোকানে চায়ের আড্ডা, বিভিন্ন সমস্যার কথাবার্তা আমাকে ছুলোই না। বইয়ে বিভিন্ন জাদুকর, উইচক্র্যাফট এবং প্রায় ৭০০০০ ডাইনিবিদ্যা চর্চাকারীদের নির্মমভাবে হত্যা করা নিয়ে অসাধারণ কথা লেখা রয়েছে। হাওরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন ইমামের ম্যাজিক প্রীতি এবং হাওরের আটকে যাওয়া লঞ্চ তাতে আটকা পড়া হুমায়ুন স্যারের অনুভূতির বিবৃতি, আর কি চাই? বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে জনপ্রিয় জাদুকর জুয়েল আইচ কে। লেখক নিজেও ভালো জাদুকর ছিলেন। স্যারের শব্দের জাদু তো আমরা আগেই দেখেছি। রীতিমতো দোকানী তার দোকানপাট বন্ধ করে চলে গেলেন। আমি অন্ধকারে বই পড়ে চলেছি। ছোট্ট এই থানার মানুষ আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়ে। একটু ছমছম করছিলো অস্বীকার করব না।








কিছুক্ষণ পর অনলাইনে ঢুকে দেখি বহুদিন পর প্রাক্তনের বার্তা। সকালেই এসেছিলো। একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো। What a day! কোন কোন দিন আসে। জীবনের প্রত্যেক দিনকে ঐ দিনের মতো করে ফেলতে ইচ্ছে হয়। সময় কতো দ্রুত চলে যায়। আমরা আসলে কারা। এখানে আমাদের অভিনয়ের একেকটি রোল প্লে করে যাচ্ছি। কার জন্য? মুসাপুর থেকে মীরসরাইয়ে আসতে সব ধরনের পথ পেয়েছি আমি। যেহেতু পথ ভুল করি বেশী। কোথাও পথ শেষ হয়ে গিয়েছে। আবার ফিরতি পথ ধরে আগের জায়গায় আসতে হয়েছে ম্যাপ দেখার পরেও। কোথাও খুব ভাংগা চুড়া গর্তে ভর্তি রাস্তা। কোথাও মসৃণ পথ। কোথাও পথের চারদিকে সবুজের সমারোহ। কিছু কিছু জায়গায় তো সাদা রেখা ছাপিয়ে বন্য লতাপাতায় ভর্তি।রাস্তার এক পাশের সাদা দাগ প্রায় দেখাই যায়না। প্রথমে ভেবেছি দেয়া হয়নি। কোথাও গুইসাপ রাস্তা পার হতে গিয়েও আমাকে চমকে দিয়ে ফিরে গেছে। কোথাও নদী। কোথাও নদীর চারপাশের মেঠো পথ। এতো দেখছি আমার জীবন, সারসংক্ষেপে। আবার মেটাফোর।





একদিন আর বের হব না। আর নদীর তীরের গরু চরাতে বের হওয়া ছোট বাচ্চাটির ' নেন ছবি তুলেন ' বলে হাত উঠিয়ে দাঁড়ানো টা দেখা হবে না। পড়া হবে না তারানগরের সর্পরাজ, প্রাইমারির হেডমাস্টার আর মসজিদের ইমামের গল্প যিনি ম্যাজিক দেখাতে ভালবাসতেন এবং যার একজন হিন্দু ব্রাম্মণ স্ত্রী ছিলেন । যার একমাত্র লক্ষ্য ছিলো, বাচ্চাদের ম্যাজিক দেখানো কেননা তারা অবাক হবার সৌন্দর্যে আশীর্বাদপুষ্ট। যার ধারণা ছিলো বড়রা সহজে অবাক হয় না। আর জানা হবে না নেত্রকোনায় প্রায় দেড়শ বছর আগে জন্মানো ইমাম যিনি গান লিখে ফিরতেন কিন্তু সমাদৃত হন নি তার মতো আর কে কে রয়ে গেছেন। যাকে সবাই 'উকিল মুনশি' নামে চিনতেন। জানা হবে না কিং জেমস নামে নিষ্ঠুর, ইংল্যান্ডের কালোশক্তির ভয়ে ভীত এক রাজার কথা। যার বাইবেলের কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন কেড়ে নিয়েছিলো হাজারো প্রাণ। একদিন বাসার পাশের কুকুরটাও আর আমার জন্য অপেক্ষা করবেনা। স্কুটার টা এক কোণে ধুলোয় পড়ে থাকবে আমার আর সব বইয়ের মতো। একদিন বন্ধুকে স্বভাবসুলভ জড়িয়ে ধরা হবে না। একদিন সময় সব কেড়ে নেবে। আমার ভেতরের সাদা বক পাখিটি উড়তে বেরিয়ে পড়বে। তার স্কুটারের প্রয়োজন পড়বে না। গানটা শোনা দরকার। দেড়শ বছর আগের এক ক্ষণজন্মার লিখে যাওয়া গান,,,,,








" শোয়াচান পাখি? আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:২৫
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×