somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের আইপ্যাড টা চোর নিয়ে গেছে ... ... ... !!! :|:((/:):P

২৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর তিনেক আগে বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে একটা আইপ্যাড কিনেছিলাম। ছেলে কে দিয়ে তার মা’কে গিফটটা দেওয়ালাম। উদ্দেশ্য ছিল, এটা সে পার্সোনাল কাজে ইউজ করতে পারবে এবং তার স্কুলের বাচ্চাদের বিভিন্ন ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে শেখাতে। কিন্তু ফল হলো উল্টো! ছেলে নাম মাত্র তার মা’কে আইপ্যাডটটি হস্তান্তর করল ঠিকই কিন্তু পরক্ষনে তা নিজের দখলে নিয়ে নিল! ;)

এই থেকে শুরু। প্রথম প্রথম আমাদের একটু ধরতে দিত, কিন্তু দিন দিন সে সেটা পুরাপুরি নিজের দখলে নিয়ে নিল। আমরাও খুব একটা বাধা দিইনি, শুধু খেয়াল রেখেছি যেন খারাপ কিছু না দেখে। শিক্ষামূলক গেইম-কার্টুন গুলো খুজে খুজে বের করে দিতাম; এক সময় সে নিজেই এক্সপার্ট হয়ে গেল। এখন আর আমাদের সাহায্য লাগে না, নিজে নিজেই ভিডিও বের করে,অ্যাপেল ষ্টোর থেকে গেইম ডাউন লোড করে। ডিস্কোভারীর শিক্ষামূলক ডুকুমেন্টরী গুলো তার খুব পছন্দ। আমরাই এগুলো দেখতে তাকে উতসাহিত করতাম। দিন দিন ছেলে বিশাল বিদ্বান হয়ে উঠল, ইংলিশ কার্টুন দেখে তার ইংলিশ এক্সেন আমাদের থেকেও ভাল হইয়ে গেল, অনেক এক্সক্লুসিভ ইনফরমেসনে সে বাবা-মা কেও হারিয়ে দিতে লাগল ... বাবা-মা ছেলের পাণ্ডিত্যে গর্বিত!! B-)

কিন্তু একসময় মনে হলো ছেলে আইপ্যাডের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে। প্রথম প্রথম পাত্তা দিইনি - কি আর করবে সারাদিন, খেলার সাথি নেই, খেলার মত পরিবেশ নেই, তাছাড়া ও আইপ্যাড নিয়ে থাকলে আমরাও আমাদের কাজকর্ম নিরঝঞ্জাট ভাবে করতে পারি। আমি আমার পিএইচডি থিসিসের কাজে খুব ব্যস্ত; ওর মা’ও স্কুল সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেকে সময় দেওয়া হচ্ছে কিন্তু সঙ্গ দেওয়ায় হচ্ছে না। সেই সুযোগে ছেলের আইপ্যাড দেখার নেশা আরো বেড়ে গেল। তারচেয়ে বড় কথা ও অন্য সকল বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। ওর গাড়ি ফ্যাসিনেশনের কথা এই ব্লগে অনেকেরই জানা। সেই গাড়ী নিয়েও তার উতসাহে ভাটা পড়ল। ঘুম থেকে উঠে আইপ্যাড ধরত আর ঘুমানো আগে জোর করে হাত থেকে আইপ্যাড নিতে হতো। এমনও হয়েছে ৩/৪ ঘন্টা ধরে আইপ্যাড খেলছে কিন্তু তারপর যখন ওকে সেটা রাখতে বলা হচ্ছে তখন কথা শুনছে না, জোর করে নিতে গেলে জীদ করে বেয়াদবী করে বসছে। ওর সব কিছুর কেন্দবিন্দু তখন আইপ্যাড। নাওয়া, খাওয়া, খেলা, ঘুম, বেড়াতে যাওয়া ... কোন কিছুতেই আর ওর খেয়াল নেই। কোথাও ঘুরতে গেলে অস্থির হয়ে যেত কখন বাসায় ফিরব, মানে আওইপ্যাড খেলতে পারব। শখের বই পড়াতে মনোযোগ নেই, রেস্পন্স কমে গেল, ৪/৫ টা ডাক দিলে একটার উত্তর দিত তাও যদি সেটা মায়ের ডাক হয়, বাপের কোন পাত্তাই নেই! আগে যেখানে ল্যাব থেকে ফিরে দরজায় টোকা দেওয়ার সাথে সাথে পড়ি মড়ি করে ছুটে আসত... “আমার জন্য কি এনেছ” বলে। এখন সেখানে দরজা নক করতে করতে হাত বেথা হয়ে যায়, ওর মা চিল্লাতে চিল্লাতে গলা ফাটিয়ে ফেলে ... ছেলের খোজ নেই। অনেকক্ষন পরে যদিও আসে এক হাতে আইপ্যাড ধরা, আর চোখ থাকে চলমান ভিডিওতে! X(

আমরা দুজনেই বুঝতে পারছিলাম, আইপ্যাড ছেলেটার খুব ক্ষতি করছে, ও এডিক্টেড হয়ে যাচ্ছে। ওর কাছ থেকে যখন আইপ্যাড কেডে নেওয়া হতো তখন ওর এক্টিভিটি দেখে নেশাগ্রস্থ ছেলেমেয়েদের কথা মনে হতো। গতানুগতিক ভাবে আমরা দু’জন দু’জন কে দোষ দিচ্ছিলাম ছেলের এই অবস্থার জন্য। অনেক ভাবে চেষ্টা করছিলাম ওর এই নেশা কাটানোর, কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।

চিন্তা করলাম জাপান থেকে যখন দেশে যাব তখন অনেক মানুষের মধ্যে থাকব; তখন আইপ্যাডের নেশা ছাড়ান যাবে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আইপ্যাড লাগেজে তালা দিয়ে রাখা হলো। খুব একটা সমস্যা হয়নি, তারপরো মাঝে মাঝে নেশাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠত; তখন খুব কান্না কাটি করত।

দু’মাস দেশে থাকার পর চাকুরী নিয়ে মালয়েশিয়া চলে আসলাম। নতুন জায়গা, নতুন ইউনিভারসিটি, মানিয়ে নিতে আবার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। সেই সুযোগে একদিন দুইদিন করে আবার ছেলে চলে গেল আইপ্যাডের দখলে। বুঝতে পারছি আইপ্যাড ছেলেটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হতো আইপ্যাডটা আছাড় দিয়ে ভাঙ্গি! তাও করতে পারতাম না, এত টাকার জিনিষ!!! নিজেদের খুব অসহায় মনে হতে লাগল !

একদিন এই বুদ্ধিটা ওর মা দিল ... আমাদের আইপ্যাডটা চুরি হয়ে যাবে! ওটা অনির্দিষ্ট কালের জন্য চোর চুরি করে তার অফিসে নিয়ে যাবে। ;) ওকে বিশ্বাস করানোর জন্য ওর আইপ্যাড আর ডি-এস এর সাথে আমাদের নষ্ট ল্যাপটপটাও চোর নিয়ে যাবে। কিন্তু কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না; অনেক প্রিপারেশন এর ব্যাপার ছিল; ওকে ব্যাপারটা পুরাপুরি বিশ্বাস করাতে হবে। ওর একটা প্রতিক্রিয়া হবে সেটা সামাল দেওয়ার জন্য ওকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, সর্বপরি আমরা অনিরদিষ্টকালের জন্য আইপ্যাডটার মায়া ছাড়তে পারব কি না।

যা-ই হোক একদিন সেই সুদিন এল... ছেলে স্কুল থেকে এসে দেখল আর আইপ্যাডটা চোর নিয়ে গেছে; সে তাড়াতাড়ি তার বাবাকে ফোন দিল, বাবা অফিসের কাজ ফেলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এল... পুলিশ কে ফোন করা হলো... পুলিশ বল্ল তারা চোর কে খুজে বের করবে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আইপ্যাড টা ফেরত দিয়ে যাবে।। :P

দু-ই মাস হতে চলল, এখনো পুলিশ আইপ্যাডটি খুজে পাইনি; ;) প্রথম দিকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করত- পুলিশের আর কয়দিন লাগবে? আমি একটু পুলিশের সাথে একটু কথা বলতে পারি?? ... কিন্তু পুলিশ তো আবার ইংলিশ, বাংলা বা জাপানীজ বুঝেনা!! মালেশিয়ান পুলিশ তো জাপানের পুলিশ এর মত এতটা এক্সপার্ট না তাই মনেহয় তারা খুজে পাচ্ছে না! সেদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, আচ্ছা বাবা চোর কি আইপ্যাডটা নিয়ে খেলতে পারবে? আমি বললাম না, কারণ ওটা তো পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড! ও নিশ্চিত হলো তাহলে তার আইপ্যাড নষ্ট হবে না! :((

এখনো সে আশা করে আছে পুলিশ তার আইপ্যাড খুজে বের করে দিবে ... কিন্তু দিনে দিনে সে আইপ্যাডের কথা ভুলে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভাল কথা, আল্লাহর রহমতে ছেলে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে ... ... ... ... ... ওর জন্য দোয়া চাইছি!
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জীবনের ল্যান্ডমার্ক, ৩৬ জুলাই আমাদের চেতনা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪২




এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদের দ্বিকক্ষবিশিষ্টকরণ: বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় পদ্ধতির বৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এর তুলনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×