
ধরুন, আমি কাওরানবাজার এলাকার রাস্তায় ডাব বিক্রি করছি। সময় মধ্য দুপুর। কড়া রোদ উঠেছে। আমার ভ্যান ভরতি ডাব। সদরঘাটের বাদামতলি ঘাট থেকে এক শ' ডাব এনেছি। ডাব কিনেছি প্রতি পিস ২৫ টাকা করে। বিক্রি করছি ষাট টাকা করে। ভ্যানটাও নিজের না, সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছি। পথচারীরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আমার কাছ থেকে ডাব কিনে খাচ্ছে। আমি ধারালো দা দিয়ে কচকচ করে ডাব কেটে দিচ্ছি। এমন সময় আমার সামনে দিয়ে চাঁদগাজী সাহেব হেঁটে যাচ্ছেন। তার হাতে একটা কালো রঙের ছাতা। অথবা তিনি আমাকে ডাব বিক্রি করতে দেখেই আমার কাছে এলেন।
উনি আমাকে দেখেই হয়তো বলবেন- কি খবর ব্লগার রাজীব নূর? আজকাল ব্লগে দেখি না!
আমি বলল- ওস্তাদ, ব্যবসা শুরু করেছি। সময় পাই না ব্লগে যাওয়ার।
আমি নিজের হাতে ওস্তাদকে একটা ডাব কেটে দিব।
মনে করুন, আমি একজন মাছ বিক্রেতা। ঠাঠারি বাজারে মাছ বিক্রি করি। বড় বড় রুই মাছ বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে মাছ কিনলে, আমি মাছ কেটে দেই ফ্রি। মাছ কিনে কাটতে গেলেও ৫০ টাকার উপরে লাগে। আমি জানি এই পঞ্চাশ টাকা বাঁচাতে গিয়ে সকলে আমার কাছ থেকেই মাছ কিনবেন। একদিন কবি জাহিদ অনিক ভাই আসবেন ঠাঠারি বাজারের মাছের বাজারে। আমাকে দেখে উনি প্রচন্ড অবাক হবেন। চশমার কাচ মুছে আবার ভালো করে আমার দিকে তাকাবেন। আমি বলল, কবি সাহেব আপনি ভুল দেখছেন না। আমিই আপানদের ব্লগার রাজীব নূর। কোনো পথ না পেয়ে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। বেঁচে তো থাকতে হবে। নিজের হাতে বেছে এবং কেটে কবি জাহিস অনিক ভাইকে একটা রুই মাছ দিয়ে দিব। প্রিয় জাহিদ অনিক ভাই বলবেন- কত টাকা দিতে হবে? আমি বলল- আপনার অনেক কবিতা পড়েছি। আনন্দ পেয়েছি। তাই মাছের দাম দিতে হবে না। এটা আমার পক্ষ থেকে।
ধরুন, সিজনাল ব্যবসা শুরু করেছি। আমের সময় আম বিক্রি করি, পেয়ারার সময় পেয়ারা বা তরমুজ। আড়ৎ থেকে ফল কিনে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বিক্রি করি। স্বাধীন ব্যবসা। কখনও দৈনিক বাংলার মোড়ে, কখনও গুলিস্তান মোড়ে, কখনোবা সিটি কলেজের সামনে অথবা লালমাটিয়া আড়ং এর সামনে। একদিন হয়তো ছড়াকার 'বিএম বরকতউল্লাহ' বা 'বাকপ্রবাস' আমাকে দেখবেন রাস্তায় ফল বিক্রি করতে- আর প্রচন্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবেন আপনাকে চেনা চেনা লাগছে কেন? আমি বলল- আমি বিখ্যাত ব্লগার রাজীব নূর। তারা হয়তো আমার দিকে মানে ফল বিক্রেতার দিকে করুন চোখে তাকাবেন। আমি তাদের জোর করে আমি কেটে খাইয়ে দিব। এবং সাথে করে কিছু আম দিয়েও দিব।
ধরুন, রেল লাইনের পাশে একটা চায়ের দোকান দিয়েছি। সমস্ত বাংলাদেশের চায়ের দোকান খুব চলে। চায়ের দোকানে শুধু চা না, আরও অনেক কিছু থাকবে। রুটি-কলা, কয়েক রকমের বিস্কুট। চা থাকবে দুই রকমের লাল চা আর দুধ চা। গনমাধ্যম কর্মী এবং ব্লগার নূর মোহাম্মদ নূরু আমার দোকানে চা খেতে আসবেন। আমাকে দেখে প্রচন্ড অবাক হবেন। এতটাই অবাক হবেন যে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসেই পড়বেন। তিনি মনে মনে ভাববেন- শেষমেষ একজন ব্লগারকে চা বিক্রি করতে হচ্ছে! হায় খোদা! আমি নূর মোহাম্মদ নূরু ভাইকে নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবো। কুশলাদি জিজ্ঞেস করবো। উনি যদি সিগারেট খান, তাহলে একটা সিগারেটও খাইয়ে দিব। একদিন ব্লগার ''পদাতিক চৌধুরি' দাদা আসবেন আমার দোকানে। এসে অনেক গল্প করবেন।
ধরুন, আমি পাঠাও বা উবার চালাই। একদিন আমার গাড়িতে উঠলেন শ্রদ্ধেয় 'খায়রুল আহসান' স্যার। আমি বলল, কেমন আছেন স্যার? শরীরটা ভালো? উনি বললেবন- তুমি কে? আমি বলব স্যার আমি একজন ব্লগার। উনি বলবেন কোন ব্লগে লিখো? আমি বলব সামুতে স্যার। কি নামে লিখো? আমি বলব স্যার আমি আমার নামেই লিখি। উনি বলবেন, তোমার নাম কি? আমি বলব, স্যার আমার নাম রাজী নূর খান? এইভাবে অনেক কথা হবে। কথা বলতে বলতে স্যারকে আমি তার গন্তব্যে নামিয়ে দিব। এবং অবশ্যই ভাড়া নিব না।
মনে করুন, আমি সারা ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। বিশেষ করে শপিং মল বা স্কুল কলেজের সামনে। ব্লগার শায়মা আমার কাছ থেকে ঝালমুড়ি খাবেন। এবং আমাকে বলবেন- আচ্ছা, ঝাল মুড়িওয়ালা ভাই আপনাকে চেনা চেনা লাগছে কেন বলুন তো? আমি মিটি মিটি হাসবো।
'সনেট কবি' আমাকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখে দৌড়ে আসবেন। বলবেন, এ কি ভাতিজা তোমার এই অবস্থা কেন? আহারে--- আসলেই তোমাকে দেখে খুব খারাপ লাগছে। ঝালমুড়ি বিক্রি করে বেড়াও বলেই আজকাল তোমাকে ব্লগে দেখি না।
ব্লগার ঢাবিয়ান আমাকে দেখে হয়তো বলবেন- আমি জানতাম আপনার পরিস্থিতি এরকম হবে। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে কেমন লাগে? এ বিষয়ে আপনি কি কোনো পোষ্ট লিখেছেন?
ব্লগার 'আব্দুল্লাহ্ আল মামুন' আমাকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখে ভাববেন- গ্রেট। রাজীব ভাইয়ের তুলনা হয়। এই ঢাকা শহরে রাজীব ভাইয়ের মতো এত সুন্দর করে কেউ ঝালমুড়ি বানাতে পারে না।
ব্লগার 'বিজন রয়' আমাকে দেখে বলবেন- কখনও ভাবিনি আপনাকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখব! খুব দঃখজনক।
ব্লগার 'নীলপরী' এবং 'রাকু হাসান' আমাকে রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখে ব্লগে লিখবেন 'একজন ব্লগার যখন ঝালমুড়ি বিক্রেতা'। সেই লেখা অবশ্যই হিট হবে।
'বিচার মানি তালগাছ আমার' এবং 'সাইন বোর্ড' উনারে দুইজন আমাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন।
ব্লগার 'শিখা রহমান' এবং 'আরোহী আশা' আমাকে দেখে বলবেন- বেশি করে মরিচ দিয়ে ঝালমুড়ি দেন ভাইয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



