ইদানিং আমার খুব ভূতের ভয় হয়েছে।
এক সময় গ্রামে মধ্যরাত্রে একা পুকুর ঘাটে বসে থেকেছি, শ্মশান এবং কবরস্থানে আড্ডা দিয়েছি। কখনও কিছু টের পাইনি। মোটেও ভয় করেনি। কিন্তু এখন বয়স বাড়ছে, সাথে সাথে ভয়টাও বাড়ছে। নিজেকে বুঝাই ভয় কেন পাবো? ভয় পাবার কিছু নেই। ভয় না পাওয়ার জন্য লজিক দাঁড় করাই। লজিকে কাজ হয় না। ভয় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই থাকে। সুরভি তার বাবার বাড়ি গেলেই আমাকে একা থাকতে হয়। আর তখন ভয় লাগতে শুরু করে।
আজকাল হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তখন, সামান্য টিকটিকি'র ডাকে বুকটা কেঁপে ওঠে। ঘরে দরজার কাছে মড়মড় শব্দ পাই। একটা শীতল বাতাস বয়ে যায়। রাস্তায় অনেক গুলো কুকুর একসাথে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। তখন বুকটা কেমন কেঁপে ওঠে। মনে হয়, কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। কেমন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। গাটা কেমন ছমছম করে ওঠে। ভয়ের চোটে ঘুম আসে না। কিছুতেই ঘুম আসে না। চোখ মেলে চার পাশে তাকাতেও সাহস পাই না। চোখ বন্ধ করে মাথার উপর বালিশ চেপে শুয়ে থাকি।
গতকাল রাতের ঘটনাটা বলি-
ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। মোবাইলে সময় দেখলাম- ২ টা ৫৫ মিনিট। পানি খাবো। ফ্রিজ খুলে পানির বোতল বের করার সময় মনে হলো- কেউ একজন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। বুড়ো মতো একটা লোক। আমি তার নিশ্বাঃসের শব্দ পাচ্ছি। পরমুহুর্তেই মনে হলো- বেলকনিতে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। সুযোগ পেলেই আমার গলা টিপে ধরবে অথবা মাথার মধ্যে গুলি করে দিবে। নয়তো তলোয়ার বুকের মধ্যে বিধিয়ে দিবে।
এর আগের দিনও হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
তখন রাত প্রায় তিনটা। ওয়াশরুমে গেলাম। মনে হলো কমোডে বুড়ো মতোন কেউ একজন বসে আছে। সে এখন'ই আমার গলায় ছুরি চালাবে। আমি ওয়াশ রুম থেকে দৌড়ে চলে এলাম ঘরে। অথচ আমার খুব প্রস্বাবের বেগ পেয়েছে। নিজেকে বুঝালাম ওই বুড়ো লোকটাকে ভয় পাবার কিছু নেই। বুড়ো লোকটা দেখতে আমার নানার মতোন। নানা আমাকে ছোটবেলায় খুব আদর করতেন। আমাকে কোলে করে বাজারে নিয়ে যেতেন।
দিনের বেলা ভয়টা হারিয়ে যায়।
বরং রাতের ভয় দিনের বেলা মনে পড়লে হাসি পায়। নিজেকে নিজে বলি এত সামান্য ব্যাপারে ভয় পাও রাজীব। তুমি তো এতটা ভীতু নও। সেই বুড়োকে দেখে ভয় পাবার কিছু নেই। বুড়োর সাথে বসে দাবা খেলবে। দেশভাগ বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করবে। বুড়োরা অনেক জানেন। তাদের অনেক অভিজ্ঞতা। তাদের কাছ থেকে যত পাবো অভিজ্ঞতা নিয়ে নাও। মানূষের জীবনের আসল সঞ্চয় হলো তার অভিজ্ঞতা। টাকা পয়সা চুরী হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা কেউ নিতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:২৭