একটা ছোট্র গল্প দিয়ে লেখাটা শুরু করবো-
রাজার বাড়ির সিংহ-দ্বারের পাশে, লোহার খাঁচার একটা মস্ত বাঘ ছিল। রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে যত লোক যাওয়া-আসা করত, বাঘ হাত জোড় করে তাদের সকলকেই বলত, ‘একটিবার খাঁচার দরজাটা খুলে দাও না দাদা!’ শুনে তারা বলত, ‘তা বইকি! দরজাটা খুলে দি, আর তুমি আমাদের ঘাড় ভাঙো।’
এর মধ্যে একদিন রাজার বাড়িতে খুব নিমন্ত্রণের ধুম লেগেছে। বড়-বড় পণ্ডিত মশাইয় দলে-দলে নিমন্ত্রণ খেতে আসছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ঠাকুর দেখতে ভারি ভালো মানুষের মতো ছিলেন। বাঘ এই ঠাকুরমশাইকে বারবার প্রণাম করতে লাগল। তা দেখে ঠাকুরমশাই বললেন, ‘আহা, বাঘটি তো বড় লক্ষ্মী! তুমি কি চাও বাপু।’ বাঘ হাত জোড় করে বললে, ‘আজ্ঞে, একটি বার যদি এই খাঁচার দরজাটা খুলে দেন! আপনার দুটি পায়ে পড়ি।’
ঠাকুরমশাই কিনা বড্ড ভালো মানুষ ছিলেন, তাই তিনি বাঘের কথায় তাড়াতাড়ি খাঁচার দরজা খুলে দিলেন। তখন হতভাগা বাঘ হাসতে-হাসতে বাইরে এসেই বললে, ‘ঠাকুর, তোমাকে তো খাব!’
গল্প এখানেই শেষ নয়। এখান থেকেই গল্পের শুরু। যদিও আমি আজ অন্য গল্প বলব।
মধ্য দুপুর। মধ্য দুপুর সময়টা খুব অদ্ভুত!
বুকের মধ্যে যেন কেমন করে! সূর্য ঠিক মাথার উপর থাকে বলে- নিজের ছায়াও খুঁজে পাওয়া যায় না। চারপাশে যা দেখা যায় সবই ভালো লাগে। ঢাকা শহরের রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলো আমার খুব প্রিয়। আসলে এই চায়ের দোকান গুলো জ্ঞানের ভান্ডার। আমি নিয়মিত রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলোতে যাই। চা খাই আর আশেপাশের লোকজনদের কথা গুলো খুব মন দিয়ে শুনি। কত রকম বিষয় নিয়ে যে আলোচনা হয়- তা চায়ের দোকানে না গেলে বুঝা সম্ভব নয়।
এক সময় আমার খুব ইচ্ছা ছিল- বড় করে একটা চায়ের দোকান দিবো। সারাদিন দুনিয়ার মানুষজন এসে আমার দোকানে চা খাবে-গল্প করবে। আর আমি খুব মন দিয়ে তাদের গল্প শুনব। এই ইচ্ছাটা আমার এখনও আছে। ব্লগার চাঁদগাজী কি আমার চায়ের দোকানে আসবেন? তাকে আমি ফ্রি চা খাওয়াবো।
আজ দুপুরবেলা চারিদিকে কাঁচের মতোন স্বচ্ছ রোদ ছিল। আমি রোদে পুড়তে পুড়তে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে এক কাপ চা খেলাম। খুব মুগ্ধ হলাম। আশ্চর্য ব্যাপার সাথে সাথে আমার রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ল। আমার এক সময় ধারনা ছিল রবীন্দ্রনাথ চা খেতেন না। বিশেষ করে রাস্তার পাশের কোনো দোকান থেকে। রবীন্দ্রনাথ কি কখনও এমন কড়া রোদে মধ্যদুপুরে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেয়েছেন? খেলেও আমার মতো মুগ্ধ কী কখনও হয়েছিলেন?
আমার চা খাওয়া শেষ। আরেক কাপ খাবো কিনা ভাবছি- ঠিক এই সময় আমার সামনে একটি ছেলে এসে দাঁড়ালো। হাসিখুশি মুখ। কাধে ক্যামেরার ব্যাগ। ছেলেটি আমার খুব অস্থির মনে হচ্ছিল। ছেলেটির সামনে দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিল । মেয়েটিকে খুব রুপসী বলা যাবে না। শুধু চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। আর কপালে একটা টিপ। ছেলেটা, মেয়েটিকে বলল- শুনুন। মেয়েটি এক আকাশ অবাক দৃষ্টি নিয়ে ফিরে তাকালো। ছেলেটি বলল- আচ্ছা, ক’টা বাজে বলেন তো? মেয়েটি বলল, আমার হাতে ঘড়ি নেই, জানি না কয়টা বাজে। ছেলেটি বলল- আহ হা আন্দাজে বলুন। মেয়েটি বলল- আমার আন্দাজ ভালো না। ছেলেটি বলল- আচ্ছা, মোবাইলে সময় দেখে বলুন। মেয়েটি হেসে ফেলল। বলল- আমার মোবাইল আজ ভুলে বাসায় রেখে এসে পড়েছি।
মাইকেলের কয়েকটা লাইন আজকাল প্রায়ই মনে পড়ে-
''কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুইরে অভাগী,
কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা
এ ভুজগে?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৮