এক আধদিন বিকেলে আকাশ খুব বেশি ঝলমল করে। ঢাকা শহর যতই নোংরা হোক, কিছু সৌন্দর্য অবশ্যই আছে। যার দেখার চোখ আছে শুধু সেই-ই দেখতে পায়। এরকম বিকেলে যাদের কোথাও যাওয়ার নেই, তাদের ভীষন কষ্ট! অবশ্য মানুষের জীবনে নানা ঋতুর পালাবদল মেনে নিতে হয়। এই শহরে এত মানুষ, এত বেশি মানুষ যে, পথে নামলেই দূর্ভোগ অপেক্ষা করে থাকে। মানুষ যে সমাজে বাস করে, সেই সমাজের নিরন্তর সমালোচনাও করে যায় মনে মনে।
মানুষ নিয়ে আমার কৌতুহলের শেষ নেই!ব্যবসায়ীরা যেমন লাভ-লোকসানের হিসাব করে। তেমনি আমি মানুষের দুঃখ কষ্ট আর উত্থান পতন খুব খেয়াল করি। অতি অসহনীয় অবস্থার মধ্যেও মানুষ যুদ্ধ করে খানিকটা উপরে উঠতে চায়, এরকম মানুষকে শ্রদ্ধা করি। তবে, আমেরিকা জাপানের মধ্যে নতুন কোনো চুক্তি হলো কিনা সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।
চল্লিশ পঞ্চাশ বছর পার করে মানুষ পেছনের দিকে তাকায়। ভাবে, এত নদী, এত পথ, এত খানাখন্দ, ঝড় তুফান, কুটিলতা আর জটিলতা পার করে এলাম - তবু তলিয়ে যাই নি। মনের গভীরে ভেসে ওঠে কয়েকটি মূখ! পরিচিত অপরিচিত একজনকে দেখলেই ভাবি, এই লোকটা কি কুম্ভ রাশি? খুব সাহস করে তাকে জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবেন না জনাব, আপনি কি কুম্ভ রাশির জাতক? আসলে মানুষের মুখ দেখে আমার এস্ট্রোলজি স্টাডি করার অভ্যাস আছে। এতে আমার কোনো স্বার্থ নেই। তাই বিবেকের কাছে লজ্জা পেতে হয় না।
গীবত করার চেয়ে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান অথবা মানুষের নিয়তি নিয়ে চর্চা করা ভালো। সেদিন এক অল্প চেনা মেয়ের সাথে দেখা। আমি বললাম, কিছু মনে করবেন না ম্যাডাম, আপনার কি ইদানিং অকারনে মন খারাপ হয়? বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে? ম্যাডাম আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, আপনার ওপরে শনির প্রভাব চলছে। ক'টা দিন খুব সাবধানে থাকবেন। দেশি ফল বেশি করে খাবেন। খুব বেশি জ্যোতিষ চর্চা করছি। নিজের মনেই গোপনে একটু হেসে নিই। হে হে....
সুন্দর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধানমন্ডি রাপা প্লাজার সামনে। কি সুন্দর করেই শাড়িটা পড়েছে! মুখটা ভীষন মায়াময়। প্রচন্ড রোদ। চারিদিকে গাড়িঘোড়ার বিকট শব্দ। আমার ইচ্ছা করলো, একটা ছাতা নিয়ে মেয়েটার পাশে দাঁড়াই, চিৎকার করে বলি, সবাই সরে দাড়ান। গাড়ির বিকট হর্ন বন্ধ করুন। আমি মেয়েটার পাশে দাড়াবো। কোথাও বসে ঠান্ডা লেবুর সরবত খেতে খেতে দু'টা সুখ দুঃখের কথা বলতে চাই। অথবা কোনো নদীর পাড়ে গিয়ে চুপ করে মুখোমুখি বসে থাকা যেতে পারে। উবার এলো, মেয়েটি চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে আমাকে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে গেল। কিছু কিছু মানুষের হাসি এত সুন্দর!
সেদিন আমার এক ধার্মিক বন্ধু বলল, দোস্ত সব সময় নামাজ পড়া হয় না। কিন্তু যখন কোনো সমস্যা সামনে এসে দাঁড়ায় তখন খুব নামাজ পড়ি। এই বন্ধুই একসময় বলেছিল, ধর্মকে একেবারে নির্মুল করতে না পারলে এই পৃথিবীর মানুষের মুক্তি নেই। এই সমাজে স্বার্থপর আর মতলববাজ লোকদের অভাব নেই। এরা নিজের প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যবহার করে। এই সমাজে কত রকম নোংরা ঈর্ষা যে হয়! ঈর্ষা করলে কোনো লাভ নেই, প্রমোশন হবে না। তবু পেছনে লাগবে, আড়ালে নিন্দা করবে। যুগ যুগ ধরে তো এরকমই চলছে। স্বচ্ছ, পবিত্র, আধুনিক মুক্তমনা মানুষ নেই। সবাই মিথ্যা ভাব ধরে থাকে।
শেখ মুজিবকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা হলো, সেদিন আমার নানা বলেছিলেন- এই দেশের লোকদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। এরা সব দুষ্টলোক, এরা ভন্ড। কেউ কেউ একবার ছদ্মবেশ ধরলে, তার থেকে আর বের হতে পারে না। মুখোশটাই আসল মুখ হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯