মাতা হারি হলেন- ইউরোপের মক্ষিরাণী।
এই নর্তকরীর হ্যালেন্ডে জন্ম। আজ থেকে ১০৩ বছর আগে ১৫ অক্টোবর ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল মাতা হারির। যাকে আজও বলা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত নারী গুপ্তচর। তার অভিনব নগ্ন নাচ দেখার জন্য, তার সাথে যৌনসম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, জেনারেল, শিল্পপতিরা উন্মুখ হয়ে থাকতেন। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব গোপন তথ্য মাতা হারি জানতে পারতেন তা হাতবদল করেই তিনি হয়ে ওঠেন এক সাংঘাতিক গুপ্তচর। ধরা পড়ার পর শেষ জিজ্ঞাসাবাদে মাতাহারি স্বীকার করেন যে হ্যাঁ, তাকে জার্মানরা গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করেছিল ১৯১৫ সালে।
মাতা হারির আসল নাম মার্গারেট জেল।
জন্ম নেদারল্যান্ডসে ১৮৭৬ সালে। মাতা হারির বৈবাহিক জীবন সুখের ছিল না। কিন্তু পরে প্যারিসে এসে তিনি একজন যৌন-উত্তেজক নাচিয়ে হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। একটি মেয়ে নাচতে নাচতে ক্রমশ নগ্ন হতে থাকে- সেই নাচ বলা যায় মাতা হারিরই উদ্ভাবন। ১৯০৩ সালে জেলে প্যারিসে আসেন, সেখানে একটি সার্কাসে তিনি লেডি ম্যাকলিওড নামে ঘোড়শওয়ার হিসেবে কাজ করেন। ১৯০৫ সালের মধ্যে তিনি বিদেশী নর্তকী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯০০ সালের শুরুতে তিনি প্যারিসের হোটেলগুলো মাত করে দেন ক্যাবারে ড্যান্সার হিসেবে। ধনী লোকেরা তার নাচ ও রুপ দেখে মুগ্ধ! সবাই তাকে নিজের করে পেতে চাইতো।
মাতা হারির পিতার নাম এডাম জেল।
মাতার নাম এন্টজে ভ্যান ডার মুলেন। চার ভাইবোনের মধ্যে মাতা হারি ছিলেন সবার বড়। তার পিতা এডামের একটি টুপির দোকান ছিল। পরবর্তীতে তিনি তেল শিল্পে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে যথেষ্ট সম্পদশালী হন। প্রচুর অর্থবিত্ত থাকায় মার্গারিটা তার শৈশবে বেশ বিলাসী জীবনযাপন করেন। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি খুব ব্যয়বহুল স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৮৮৯ সালে মার্গারিটার পিতা দেউলিয়া হয়ে যান, তার পিতামাতার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯১৪ সালে মাতা হারি শো করতে গেল জার্মানির বার্লিন শহরে। কিন্তু সে বছর শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। জার্মানরা তাকে প্যারিস ছেড়ে হল্যান্ডে ফিরে যেতে বললে সে জার্মান বাহিনীর নির্দেশ অমান্য করে প্যারিসেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জার্মানরা মাতা হারির সকল টাকা পয়সা, গহণা সব সিজ করে নেয়।
মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর কেউ তার দেহ নিতে আসেনি।
কাজেই দেহটা দিয়ে দেয়া হলো প্যারিসের মেডিক্যাল স্কুলে- যাতে সেটা ছাত্রদের কাটাছেঁড়ার প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা যায়। তার মাথাটা এ্যানাটমি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে প্রায় ২০ বছর আগে দেখা যায়, সেটা নিখোঁজ। সম্ভবত কেউ মাথাটা চুরি করে নিয়ে গেছে। মাতা হারির সব কিছু নিয়েই রয়েছে রহস্য। হয়তো তাকে মিথ্যা দোষারোপ করেই হত্যা করা হয়েছে।
মাতাহারির জীবন বিশ্লেষণ করলে মনে হয় মাতাহারি আসলে একজন প্রকৃত শিল্পীই ছিলেন। তার জীবন পুরুষতন্ত্রের কাছে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। মারা যাওয়ার পরেই মাতামাতি শুরু হয় মাতাহারিকে নিয়ে। অবাক হওয়ার মতো হলেও সত্য, তাঁকে নিয়ে লেখা উপন্যাস আর জীবনকাহিনির সংখ্যা ২৫০। মঞ্চনাটক হয়েছে, টিভি সিরিজও হয়েছে। বেশ কয়েকটা মুভি হয়েছে। ১৯৩১ মাতাহারি নামের চলচ্চিত্রের নামভূমিকায় অভিনয় করেন গ্রেটা গার্বো।
(তথ্যসুত্র ইন্টারনেট)