পাবনা শহরের একটি রাস্তায় এই ঘটনাটি ঘটে।
আমি এক জরুরী কাজে পাবনা গিয়েছিলাম। পাঁচ দিনের জন্য। একটা সিএনজি ছিলো- আমার সার্বক্ষনের সঙ্গী। সিএনজি চালক হাবীব ভালো মানুষ। দেখতে সুন্দর। বয়স আনুমানিক ত্রিশ হবে। হাবীব বললো, সারাদিন যেখানেই যেতে বলবেন যাবো কিন্তু সন্ধ্যার পর কোথাও যাবো না। আমি বললাম, ওকে। হাবীবের কাছ থেকেই এই ঘটনাটি জেনেছি। এই ঘটনা হাবীবের জীবনের।
তখন রাত প্রায় ২ টা বাজে।
হাবিব তখন তার সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরছিল। সে হঠাৎ দেখলো দুইজন মধ্যবয়সী হুজুর তাকে সিএনজি থামানোর জন্য অনুরোধ করছে। হাবীব থামল এবং একজন হুজুর তার সাথে কথা বললো।
হুজুরঃ ভাই আমরা খুব বিপদে পড়েছি।
হাবিবঃ আপনাদের কি হয়েছে জানতে পারি?
হুজুরঃ সামনে আমাদের এক বন্ধু একটি লাশ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওই লাশটাকে নিয়ে আমাদের সামনের গ্রামে যেতে হবে। তুমি কি আমাদের পৌঁছে দিতে পারবে?
হাবিব কিছুক্ষণ ভাবলো।
দুই হুজুরের জন্য তার মায়া হলো। হাবিব বলল, আমি আপনাদের পৌঁছে দিব।
হুজুরঃ ধন্যবাদ তোমাকে। এটা বলে দুই হুজুর সিএনজি'তে উঠে বসলো।
কিছু দূরে যেতেই হাবিব দেখলো-
আরেকজন হুজুর লাশ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। লাশটি সাদা কাপড় দিয়ে প্যাচানো। হাবিব উনার সামনে এসে সিএনজি থামালো। এরপর দুই হুজুর নামলো এবং তিন হুজুর লাশটি নিয়ে সিএনজি'তে উঠলো। তারপর তারা হাবিবকে সিএনজি চালাতে বললো। আর একজন হুজুর হাবীবের সাথে কথা বলতে থাকলো।
হুজুরঃ সামনের গ্রামে যেতে কতক্ষন লাগবে?
হাবিবঃ প্রায় ৪০ মিনিট।
হুজুরঃ তুমি পেছনের দিকে চাইবে না। লাশের অবস্থা বেশি ভালো না। দেখলে ভয় পাবে।
হাবিবঃ আচ্ছা হুজুর।
তারপর হাবিব সিএনজি চালাতে শুরু করলো।
কিন্তু হাবীব দেখার আকর্ষণ অনুভব করলো কিন্তু সে সাহস পেলো না। এর ৫ থেকে ৭ মিনিট পর হাবীব এক অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলো। এক অজানা ভয় হাবীবকে গ্রাস করলো। হাবীব তার মনের ভয় দূর করার জন্য সামনের লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনের দিকে চাইলো। চেয়ে যা দেখতে পেলো, তা আমরা কেউ কোনোদিন ভাবতে পারি না। সে দেখলো ওই তিন হুজুর লাশটিকে ছিড়ে ছিড়ে শকুনের মত খাচ্ছে। কেউ কলিজা খাচ্ছে, তো কেউ বুকের রক্তপান করছে। তা দেখে হাবীব চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
যখন হাবীবের জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে ভর্তি।
তার সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। তাকে সকালে রাস্তার পাশে একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। এখন হাবীব সুস্থ আছে। কিন্তু ওই দিনের ঘটনার পর থেকে আজও সে সন্ধ্যার পর আর সিএনজি নিয়ে বের হয় না। তাকে আজও ওই দিনের ঘটনা তাড়া দিয়ে বেড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০১