মেয়েটার নাম নোভা।
বিদেশে থাকে। নোভা বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার আগ্রহ নিয়ে এসেছে। কিন্তু তিন মাসের জন্য এলেও, অল্প কয়েকদিন থেকে চলে গেছে। এই দেশ তার ভালো লাগে না। কারন, গরম এবং ধুলোবালি। এই গরম এবং ধুলোবালি নোভা সহ্যই করতে পারে না। কিন্তু একবার এসে তিন মাস পার করে দিলো। তখন আমার সাথে বেশ ভালো খাতির হয়ে গেলো। আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। কিন্তু মেয়েটা ফিরে যাবার দুই দিন আগে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। নোভার মৃত্যুতে ভীষণ কষ্ট পেলাম। এত কষ্ট জীবনে আর পাই নাই। নোভাকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
নোভার মামা আমাদের এলাকায় থাকেন।
তাকে ছোটবেলা থেকেই দেখছি। মামা খুব ভালো মানুষ। পেট্রো বাংলায় চাকরি করতেন। অনেকদিন হলো অবসর নিয়েছেন। মামা আমাকে খুবই পছন্দ করেন। রাস্তায় দেখা হলেই চিৎকার করে বলেন, আরেহ রাজীব কি খবর? জোর করে ধরে তার বাসায় নিয়ে যান। উনার স্ত্রী দারুন রান্না করেন। খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে খাওয়ান। এরকম আদর ভালোবাসা আর আন্তরিকতা নিয়ে আমাকে খুব বেশী লোক খাওয়ায় নি। মামার এক ছেলে ছিলো। কলেজ থেকে পিকনিকে গিয়ে নদীতে নেমে মারা যায়। মামা আমার মধ্যে তার ছেলেকে খুঁজে নেন। আমার সাথে নাকি তার ছেলের অনেক মিল আছে।
একদিন মামা আমাকে খবর দিলেন।
খুব জরুরী। গেলাম মামার বাসায়। গিয়ে দেখি তারা মাত্র খেতে বসেছেন। টেবিল ভরতি নানান রকম খাবার। একটা মেয়ে ঘর আলো করে টেবিলে খেতে বসেছে। মামা বললেন ভালো সময় এসেছো। আমি মেয়েটার পাশে বসলাম। মামা পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেয়েটার নাম নোভা। তার বড় বোনের মেয়ে। নিউ জার্সিতে থাকে। কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কসম খেয়ে বলতে পারি, এত সুন্দর মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। মেয়েটার বয়স আমার মতোই হবে। বিশ/বাইশ। যাই হোক, নোভা বলছে সে কিচ্ছু খাবে না। সে শুধু একটা কলা খাবে। এদিকে আমি পাগলের মতো খেয়ে যাচ্ছি। কথা বলে সময় নষ্ট করছি না। নোভা একটা প্লেটে এক পিস কলা নিলো। কাটা চামুচ দিয়ে কলা খাচ্ছে। এরকম আমি আমার জীবনে দেখি নাই।
আমি সারাদিন নোভার সাথেই থাকি।
আমার মনে হচ্ছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করছি নোভার সাথে। মেয়েটা বড় অদ্ভুত! একদিন কি কারনে যেন নোভার খুব মন খারাপ হয়েছে। নোভা বলল, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, প্লীজ। কমপক্ষে এক মিনিট আমি নোভাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। খুশিতে আর অজানা এক আনন্দে আমার মনটা খুশীতে ভরে গেলো। নোভার শরীরে কি মিষ্টি গন্ধ! একদিন নোভা বলল, মদ খাবো। আমি মদের ব্যবস্থা করলাম। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা ছাদে মদ খেলাম। সেদিন নোভার খুব নেশা হয়েছিলো। আরেকদিন নোভা বলল, পর্ন মুভি দেখবে। ব্যবস্থা করলাম। দুজন মিলে দেখলাম। নোভা না থাকলে আমি বুঝতেই পারতাম না- জীবন এত সুন্দর!
একদিন নোভাকে নিয়ে গ্রামে গেলাম।
আমার ছোট চাচার শ্বশুর বাড়ি। লক্ষ্মীপুরের রামগতি। চর রমিজ এলাকায়। সেখানে গিয়ে নোভা অসুস্থ হয়ে পড়লো। গ্রামের মানুষ বলছে, খারাপ বাতাস লেগেছে। দ্রুত নোভাকে ঢাকা নিয়ে এলাম। হাসপাতালে ভরতি করা হলো। নোভার ডান হাত,পা অবশ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। নোভা কোনো কথা বলে না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে উঠে একা দাড়াতে পারে না। এই খবর শুনে নিউজার্সি থেকে নোভার বাবা মা ছুটে এলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে নোভা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে এলো। কিন্তু সে ভয় পায়। একা থাকতে পারে না। একদিন আমি নোভাকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাবলাম তার ভালো লাগবে। কিন্তু নোভা বিরক্ত হলো। আমি ভেবে পাচ্ছি না কি করলে নোভা খুশী হবে। কি করলে তার ভালো লাগবে।
আমি নোভার সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিলাম।
আমার মন মেজাজ ভালো নেই। সারাক্ষণ নোভার কথা মনে পড়ে। ইচ্ছা করে নোভাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি। সম্ভবত ইচ্ছাটা অন্যায় ইচ্ছা। কিন্তু অল্প বয়সে অন্যায় ইচ্ছা গুলোই বেশি করতে ইচ্ছা করে। আমি কিছুক্ষন নোভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে নিশ্চয়ই নোভার কোনো ক্ষতি হবে। নোভা প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে না। নোভার ঠোঁটে ঠোঁট রাখি। যে দিন ছাদে মদ খেয়েছিলাম, সেদিন নোভা আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট রেখেছিলো। সেদিন রাতেই বাসায় ফোন এলো, নোভা আত্মহত্যা করেছে। কেন আত্মহত্যা করেছে সে একটা কাগজে লিখেছে। অবশ্য সেই কাগজে কি কি লেখা তা আমি জানতে পারি নি। নোভার মৃত্যু আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিলো। নোভার কথা আমার খুব মনে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৩