আব্বার করোনা ধরা পড়েছে।
এখন সে মুগদা হাসপাতালে আইসিইউতে আছে। বারডেম হাসপাতালে আব্বা ভর্তি ছিলো আগে থেকেই। গতরাতে রাতে মুগদা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বারডেমে আইসিইউ খালি নেই। নানান শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা চলছিলো বারডেমে। প্রচন্ড মাত্রায় ডায়বেটিকস। এর মধ্যে দুইবার পায়ের ইনফেকশন হয়েছিলো। সেখানে অপারেশন হয়েছে। স্ট্রোক করেছে। কাউকে চিনতে পারছিলো না। এখন শুরু হয়েছে করোনা। জানি না ভাগ্যে কি আছে! আব্বা প্রচুর সিগারেট খেতো। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই ডাক্তার আব্বাকে বলেছিলো- যদি বেঁচে থাকতে চান তাহলে সিগারেট ছাড়ুন। আব্বা সিগারেট ছাড়ে নি। আমি এখনও বারডেম বা মুগদা হাসপাতালে যাই নি। যাওয়া দরকার।
শ্বশুর মশাইয়ের করোনা হয়েছিলো।
তিনি এখন কিছুটা সুস্থ। হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে এসেছেন। তেরো দিন হাসপাতালে ছিলেন। তেরো দিনে হাসপাতালের বিল এসেছে তিন লাখ পচাত্তর হাজার। সুরভির বড় ভাই এবং তার স্ত্রীও সুস্থের দিকে। সুরভির বাবা এবং ভাই সুরভির রান্না খুব পছন্দ করে। গত পরশু সুরভি তাদের জন্য রান্না করে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে উবার দিয়ে। মেন্যু ছিলো- খিচুড়ি, গরুর মাংস, দেশী মূরগী ঝাল ফ্রাই, চিংড়ি মাছ আর ইলিশ মাছ ভাজা। তারা খেয়ে আরাম পেয়ছেন। আগামী সপ্তাহে আবার খাবার পাঠাবো।
এদিকে মা'র শরীর ভালো নেই।
গত ত্রিশ বছর ধরেই মাকে দেখছি, প্রতি মাসে দুইবার ডাক্তার দেখাচ্ছে এবং নিয়মিত তিনবেলা ওষুধ খাচ্ছে। আজ শুনলাম মার চোখে ছানি পড়েছে। মার সাথে দীর্ঘদিন ধরে আমার কথাবার্তা বন্ধ। মার খবর পাই বুয়ার কাছ থেকে। আমার মার তেজ বেশী। এই তেজ দিয়ে সে ভালো কিছু করতে পারেনি। সব ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তবে সে ভালো আছে। সারাদিন শুয়ে বসে শুধু ইউটিউবে নাচ, গান আর সিনেমা দেখে। মা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে।
গতকাল রাতে সুরভির শরীর খুব খারাপ করেছিলো।
সুরভি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো না। তখন আমি মুভি দেখছিলাম- 'The Dark Knight'। সিনেমা দেখা বন্ধ করলাম। আমি তো অমানবিক না। স্ত্রীর এই অবস্থায় মুভি দেখা যায় না। ভোর পর্যন্ত সুরভি বেশ কষ্ট করেছে। আমি চুপ করে পাশে বসে ছিলাম। নানান কথা বার্তা বলে সুরভির শ্বাস কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়ার হাস্যকর চেষ্টা করেছিলাম। অবশ্য আমি সুরভিকে বলেছি, তোমার শরীর বেশী খারাপ লাগলে চলো হাসপাতালে যাই। সুরভি বলেছে, হাসপাতালে যেতে হবে না। এটা সাময়িক সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
আজ ফুলকপি, সিম আর নতুন আলু কিনেছি।
এসব দিয়ে দুপুরে রান্না হয়েছে শিংমাছ। বেশ ভালো লাগলো খেতে। শীতের নতুন সবজি। সাথে ছিলো পালং শাক। বাধাকপি ভাজি আর ডাল। আজ রান্নাও খুব ভালো হয়েছে। ভাবী রান্না করেছেন। কিছুদিন পর অবশ্য ফুলকপি আর ভালো লাগবে না। কম্বল টম্বল বের করেছি। জোরে ফ্যান ছেড়ে কম্বল গায় দিয়ে ঘুমাতে ভালো লাগে। যত ভালোই লাগুক আমার মন ভীষন খারাপ। আব্বা হাসপাতালে। আমার আব্বাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৪