somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ভালো মানুষ

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেশ ভাগের আগের কথা।
মোয়াজ্জেম হোসেন মাসের অর্ধেকের বেশি সময় থাকেন কলকাতায়। কলকাতায় তার বিরাট ব্যবসা। নিউজ প্রিন্ট কাগজের ব্যবসা। নিজের তিনতলা বাড়ির নীচ তলা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেন। তিনি থাকেন দোতলায়। তিন তলাটা পুরোটাই খালি থাকে সারা বছর। ইচ্ছা করলে তিনি ভাড়া দিতে পারেন। কিন্তু সেই ঝামেলায় তিনি যান না। তার টাকার অভাব নেই। তিনি কলকাতায় ব্যবসা করলেও তার বাড়ী বিক্রমপুর। বিক্রমপুরের জমিদার তারা। যদিও এখন জমিদার প্রথা নেই। তবু তাকে তার গ্রামের মানুষ জমিদার বলেই মানে। জানে। মোয়াজ্জেম হোসেন, মাসে একদিন তার বৈঠক খানায় বসেন। তখন গ্রামের সমস্ত দরিদ্র মানুষেরা তার কাছে আসে। তিনি সবার অভাবের কথা মন দিয়ে শুনেন। এবং সাহায্য সহযোগিতা করেন। কলকাতা থেকে গ্রামের মানুষের জন্য শাড়ি লুঙ্গি নিয়ে যান। দুই হাতে বিলান। গ্রামের মানুষ মোয়াজ্জেম সাহেবের উপর খুশি।

গ্রামের অর্ধেক জমিই মোয়াজ্জেম হোসেনের।
যদিও সব বর্গা দেওয়া। এসব জমি তার বাপ দাদার আমলের। এসব জমি চাষবাস করে গ্রামের দরিদ্র পরিবার গুলো খেয়েপরে বেঁচে আছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা পাশের গ্রামে স্কুলে পড়তে যায়। দুঃখের বিষয় তার গ্রামে কোনো স্কুল নেই, মাদ্রাসা নেই। তবে একটা মসজিদ আছে। একটা মন্দির আছে। মসজিদ এবং মন্দিরের অবস্থা ভালো না। যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়বে- এমন অবস্থা। গ্রামের হিন্দু আর মুসলমানেরা ঠিক করেছে এবার মোয়াজ্জেম সাহেব গ্রামে এলে তাকে অনুরোধ করবে যেন মসজিদ আর মন্দিরটা মেরামত করে দেন। মোয়াজ্জেম সাহেব ভালো মানুষ তাকে বললেই তিনি করে দিবেন- এটা গ্রামবাসী জানেন। শোনা যাচ্ছে, মোয়াজ্জেম সাহেব কলকাতায় আরেকটা বাড়ি কিনেছেন। ব্যবসায় তিনি যে সাফল্য পাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে- তিনি তার বাপ দাদার সম্পত্তি থেকেও অনেক বেশি করে ফেলবেন। তার মন মানসিকতা উন্নত।

মোয়াজ্জেম সাহেবের বন্ধু নরত্তম চক্রবর্তী।
লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কলকাতায় ডাক্তারি পড়ছেন নরত্তম। বন্ধুর লেখাপড়ার সমস্ত খরচ দিচ্ছেন মোয়াজ্জেম সাহেব। এমনকি নরত্তম মোয়াজ্জেম সাহবের কলকাতার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। লেখাপড়ার ফাঁকে সময় পেলে বন্ধুর ব্যবসার হিসাব দেখাশানা করেন। একদিন সত্যি সত্যি নরত্তম ডাক্তারি পাশ করে ফেলল। খুশিতে বন্ধু মোয়াজ্জেমকে জড়িয়ে ধরলো এবং কিছুক্ষন কান্না করলো। নরত্তম চক্রবর্তীর দুনিয়ায়তে কেউ নেই। নরত্তম বলল, বন্ধু আমি কলিকাতায় বা ঢাক্কাতে চেম্বার করিব না। আমি আমাদের গ্রামে চেম্বার করিব। আমাদের গ্রামে কোনো ডাক্তার নাই। গ্রামের মানুষ চিকিৎসার জন্য কবিরাজ দেখায়, লতাপাতা খায়। আমি তাদের চিকিৎসা করবো। মোয়াজ্জেম বললেন, গ্রামের মানুষ তো তোমাকে ভিজিট দিতে পারবে না। ডাক্তার নরত্তম বলল, ভিজিট আমার দরকার নেই। মানুষের সেবা করতে পারলেই আমি খুশি। এরচেয়ে ভালো কাজ দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই।

মোয়াজ্জেম হোসেন এবং নরত্তম চক্রবর্তী গ্রামে ফিরলেন।
মোয়াজ্জেম গ্রামে একটা স্কুল করলেন, কলকাতা আর ঢাকা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিলেন। মসজিদ, মন্দির মেরামত করলেন। মাদ্রাসা করলেন। ডাক্তার নরত্তমকে একটা চেম্বার করে দিলেন। এত এত রোগী গ্রামে ছিলো তা ধারনা করতে পারেন নি নরত্তম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী আসতেই থাকলো। এমন কি আশে পাশের গ্রাম থেকেও রোগী আসতে থাকলো। দীর্ঘদিন নানান রকম রোগে ভূগতে থাকা রোগীরা অবাক! তাদের রোগ এই হিন্দু ডাক্তার ভালো করে দিচ্ছেন। কোনো টাকা পয়সা নিচ্ছেন না। এমনকি ওষধ পর্যন্ত ফ্রি দিচ্ছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন একদিন তার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বন্ধু তুমি একজন খাটি মানুষ। তুমি আসলেই একজন ভালো ডাক্তার। ডাক্তারি পাশ করে মানুষের সেবা করে যাচ্ছো! নরত্তম বললেন, বন্ধু তুমিও কম না।

কামারগাও গ্রাম হয়ে উঠলো আদর্শ গ্রাম।
আশে পাশের সমস্ত মানুষ কামারগাও গ্রামকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। সত্যি সত্যি গ্রামটা আনন্দময় একটা গ্রাম হয়ে গেছে দুইজনের চেষ্টায়। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখছে। সবাই চাষবাস করছে। গ্রামে একটি পরিবারও না খেয়ে থাকে না। সবাই ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। মোয়াজ্জেম সাহেব দূর্গা পূজার সময় কলকাতা থেকে মূর্তি গড়ার কারিগর নিয়ে আসেন। বিরাট বড় করে দূর্গা পূজা করেন। অনেক খানাপিনার ব্যবস্থা করা হয়। বেশ ধূমধাম করে পূজা উৎসব করা হয়।
আবার ঈদের সময় সমস্ত গ্রামবাসীকে নতুন জামা দেওয়া হয়। এই গ্রামে ঝগড়া হয় না। এঁকে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে। গ্রামের ছেলেরা ফুটবল খেলে। হাডুডু খেলে। সব মিলিয়ে গ্রামের মানুষ গুলো ভালো আছে। সহজ সরল ভাবে সুন্দর জীবন পার করছিলো। কিন্তু মানুষের কপালে মনে হয় সুখ বেশি দিন সয় না। দেশভাগের কারনে পুরো গ্রাম ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো। মোয়াজ্জেম সাহেব তার কলকাতার বাড়ি আর ব্যবসা হারালেন। ডাক্তার নরত্তম চক্রবর্তীকে গ্রামে ফিরে যেতে হলো।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×