একবার কিছু মানুষ এলাকার এক জ্ঞানী মানুষের কাছে কিছু শিখতে চাইলো। উপস্থিত মানুষদের কাছে জ্ঞানী মানুষটি জানতে চাইল, আমি তোমাদের আজ কি শেখাবো তোমরা কি জানো? উপস্থিত জনতা বলল, না। তখন জ্ঞানী মানুষটি বলল কিছু জানোনা যেহেতু আর জেনে লাভ নাই সবাই চলে যাও।
পরের দিন সবাই আবার জ্ঞানী মানুষটির বাড়িতে এলো। যথারীতি আজো জ্ঞানী মানুষটি একি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। আজ আমি তোমাদেরকে কি বলব তোমরা কি জানো? এবার আর তারা ফিরে যেতে চায় না। তারা সবাই বলল হ্যা জানি। তখন জ্ঞানী বলল জানো যেহেতু তাহলে আমার থেকে আর কি জানবে সবাই ফিরে যাও।
পরেরদিন তারা আবারও এলো কিন্তু এবার আর কিছু না শিখে ফিরে যেতে চায় না। যথারীতি জ্ঞানী আবারও সেই একি কথা জিজ্ঞেস করল। আজ আমি তোমাদেরকে কি বলব তোমরা কি জানো? এবার লোকগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে গেল, এক দল বলল, জানি তো আরেকদল বলল আমরা জানি না। এবারও জ্ঞানী বলল যারা জান তারা যারা জানেনা তদেরকে জানিয়ে দাও।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা যার পূর্ণ নাম 'নাসির উদ্দীন মাহমুদ আল খায়ী'। গোপাল ভাড়ের গল্পটাও তার নামে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায়, আবার তার গল্পও গুলিয়ে যায় গোপাল ভাড়ের সাথে। আজও তার গল্প গুলো মানুষের মুখে মুখে। মধ্য প্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশই নাসিরুদ্দিনকে তাদের দেশের নাগরিক বলে দাবী করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং উজবেকিস্তান। আসলে তার জন্ম হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুরস্কের খোর্তো গ্রামে। নাসিরুদ্দিন খুব জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। ধর্ম বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল অত্যান্ত প্রখর। নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একজন বেঁটে মানুষ ছিলেন। মাথায় পাগড়ি আর গায়ে জোব্বা পরে একটা গাধার ওপর চড়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন। তুরস্কের আকসেইর শহরেই প্রতিবছর জুলাইয়ের ৫ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক নাসির উদ্দীন হোজ্জা উৎসব’ পালন করা হয়ে থাকে।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী।
বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। বাদি মামলার আসামির সম্পর্কে যেসব অভিযোগ করছেন হোজ্জা তা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, হুম, তোমার কথাই ঠিক। এ কথা শুনে আসামি বলে উঠল, হুজুর, আমার কিছু কথা ছিল। হোজ্জা বললেন, ঠিকাছে, বলো তুমি কী বলতে চাও? আসামির বক্তব্যও মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন- হুম, তোমার কথাও ঠিক।
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, দুইজনের কথাই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক, না হয় বাদির কথা ঠিক।
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে হাসি দিয়ে বললেন, হুম, তোমার কথাই ঠিক।
তখন শীতকাল চলছিল।
একদিন মোল্লা নাসির উদ্দিন হোজ্জার কাছে এক লোক এসে বলল: মোল্লা সাহেব! শুনেছি আপনি অনেক জ্ঞানী মানুষ তাই আমি এলাম আপনার কাছে কিছু শিখব বলে। নাসির উদ্দিন বললেন: ঠিক আছে শিখতে চাইলে এখানে বসো। লোকটি বসল। কিছুক্ষণ পর মোল্লার স্ত্রী একটি বাটিতে করে জ্বালানো কয়লা দিয়ে গেলেন ঘর গরম করার জন্য। কয়লা যখন নিবু নিবু তখন নাসিরউদ্দিন তাতে ফুঁ দিতে লাগলেন আগুনের তাপ বাড়ানোর জন্য। এ কথা শুনে লোকটি বলল: হুজুর! কয়লাতে ফুঁ দিচ্ছেন কেন? উত্তরে মোল্লা বললেন: এতে আগুন বাড়ে আর ঘর গরম হয়। তখন লোকটি বলল: যাক একটা নতুন জিনিস শিখলাম। ফুঁ দিলে গরম হয়।
এর কিছুক্ষণ পর মোল্লার স্ত্রী দু'কাপ চা দিয়ে গেলেন।
মোল্লা চা খাওয়ার সময় আবার ফুঁ দিতে লাগলেন। লোকটি জিজ্ঞেস করল: এখন ফুঁ দিচ্ছেন কেন? জবাবে মোল্লা বললেন: এতে চা ঠাণ্ডা হবে। তখন লোকটি বলল: এটা কেমন কথা? ফুঁ দিলে গরম হয় আবার ঠাণ্ডাও হয়?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৫