somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- (চল্লিশ)

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ কালের কন্ঠ।

আগামীকাল পহেলা বৈশাখ।
মেয়েটা সকালে চারুকলায় আসবে। প্রথম দেখা হবে আমাদের। গত এক বছর শুধু আমাদের মোবাইলে কথা হয়েছে। ঢাকায় বৈশাখ বলতে রমনা পার্ক, টিএসসি আর রবীন্দ্র সরোবর। বেশ জমজমাট এলাকা। বৈশাখের দিনে সবাই এসব এলাকাতে এসে জড়ো হয়। চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। সবার মুখ হাসি হাসি। মানুষের মুখের হাসি আমার ভালো লাগে। বিশেষ বিশেষ দিনে ঢাকা শহরের গজব অবস্থা হয়। রেস্টুরেন্ট গুলোতে পর্যন্ত বসার জায়গা পাওয়া যায় না। যাই হোক, আগের দিন রাত থেকেই আমি অস্থির হয়ে আছি। নীলা আসবে। নীলার সাথে দেখা হবে। নীলা। আমার নীলা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমাদের দেখা হবে। কি যে শান্তির ব্যাপার। কি যে আনন্দের! সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

টেনশনে সারারাত আর ঘুম হলো না।
খুব ভোরে উঠে স্নান করে নিলাম। সুন্দর একটা পাঞ্জাবী পরে নিলাম। মিথ্যা বলব না, আমি দেখতে মাশাল্লা সুন্দর। সব রকম জামাতেই আমাকে ভালো মানায়। এই দিনে মানুষের খুব বেশী ভিড় হয় বলে, অনেক রাস্তা পুলিশ বন্ধ রাখে। তাই মৎস ভবন থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হয় শাহবাগ মোড় পর্যন্ত। হাঁটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি প্রচুর হাঁটতে পারি। যেন তুফানের মতো চলে গেলাম চারুকলায়। অসংখ্য মেয়ে। সবাই সুন্দর সুন্দর শাড়ি পড়েছে। চোখে কাজল দিয়েছে। কপালে টিপ। এত এত মেয়েদের মধ্যে নীলাকে খুঁজে নিতে আমার বেগ পেতে হয়নি। আশে পাশে প্রচুর মানুষ। অথচ আমরা দুজন দুনজের দিকে মুগ্ধ চোখে চাকিয়ে আছি। কত সময় পার হয়েছে কে জানে!

নীলা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।
দেখি, তার চোখে পানি। বললাম, কাঁদে না। কাঁদে না বোকা মেয়ে। হাসো। সেদিন নীলা একদম বাঙ্গালী মেয়েদের মতো করে সেজেছে। নীলাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে বললাম, একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কি করে! নীলা আমার জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে এসেছে। এত ভোরে উঠে সে আমার জন্য নিজ হাতে রান্ন করেছে। নীলার হাতের রান্না ভালো। আমি বেশ আরাম করে খেলাম। নীলা বলল, এত তাড়াহুড়া করে খাচ্ছো কেন? তোমার কি ট্রেন ধরতে হবে? উত্তরে আমি একটু হাসলাম। খাওয়া শেষে নীলা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুছিয়ে দিলো। দুনিয়াতে এত শত নারী অথচ মাত্র দুইজন নারী আমার জন্য তাদের শাড়ির আচল এগিয়ে দিয়েছিলো। একজন নীলা। একজন আমার মা। মা এখন অনেক অসুস্থ। বছরের বেশির ভাগ সময় তাকে সরকারী হাসপাতালে থাকতে হয়।

যাই হোক, তারপর নীলা আর আমি বৈশাখের সারাদিন একসাথে ছিলাম।
প্রায় সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ালাম আমরা। আমার চিৎকার করে শহরের মানুষদের বলতে ইচ্ছা করলো। দেখো আমাকে। আমার দিকে তাকিয়ে দেখো। দেখো আমার পাশে কে? এই শহরের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে আমার পাশে। নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হচ্ছিলো আমার। সেদিন আমি নীলার হাত প্রথম ধরি। আহ কি সুন্দর হাত! মসৃন, নরম। আর কি ফর্সা! সেদিন আমি নীলাকে তার বাসায় দিয়ে আসি। তখন রাত আট টা। নীলা বলল, অনেক দেরী হয়ে গেছে। মা চিল্লাচিল্লি করবে। আমি বলেছিলাম, বেশি চিল্লাচিল্লি করলে তুমি বের হয়ে আসবে। আজই তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে আসবো। নীলা চলে যাওয়ার আগে একবার আমাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো। বলল, ভালোবাসি। ভালোবাসসি। আমিও বললাম, ভালোবাসি। ভালোবাসি।

নীলার সাথে আমার বিয়ে হয়নি।
আজ নীলার দুই ছেলে। ফুটফুটে দুই ছেলে যেন দেবশিশু। নীলার স্বামী বড় চাকরী করে। আর আমি বেকার। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই খালি পকেটে। ক্ষুধা পেলে কোনো বন্ধুর অফিসে যাই। বন্ধু চা আর কেক খেতে দেয় দুপুরবেলা। চা আর কেক হাসি মুখে খেয়ে নিই। অনেক রাতে বাসায় ফিরি। ততক্ষনে বাসার সবাই গভীর ঘুমে। চুপি চুপি ভাত খেয়ে নিই। পারতপক্ষে বাসার কারো সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ব্যর্থ মানুষ আমি। প্রেম ভালোবাসায় ব্যর্থ, লেখাপড়ায় ব্যর্থ। চাকরীতে ব্যর্থ। ব্যর্থ মানুষেরা সমাজের প্রতিটা স্তরে অবহেলিত হয়। তবে আমি খুশি। নীলা ভালো আছে। একদিন দেখেছি, নিউ মার্কেটে। স্বামী সন্তান নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলো। নীলা এখন আমেরিকা থাকে স্বামী সন্তান নিয়ে। দুই বছর আগে একবার গ্রীন রোড দেখা হয়েছিলো নীলার সাথে। একদম চোখাচোখি। অথচ নীলা আমাকে না চেনার ভান করে আমার পাশ দিয়ে চলে গেলো। আমি বিড়বিড় করে শুধু বললাম- ভালোবাসসি। ভালোবাসি।

(শাহেদ জামালের মৃত্যুর পর, তার একখানা ডায়েরী আমার হাতে আসে। সেই ডায়েরী থেকেই আজকের পোষ্ট।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×