
একবার সুন্দরবন গিয়েছি।
অতি দুর্গম এলাকা। লঞ্চ থেকে নেমেই দেখি একদম কাঁদা। কাঁদায় পা রাখা মাত্র পা ঢেবে যাচ্ছে। সেই পা উঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এভাবে টানা পাঁচ সাত মিনিট কাঁদা মাটিতে চলতে হয়েছে। প্যাঁক কাঁদায় জামা কাপড়ে মাখামাখি। আপনি যদি সুন্দরবন যান তাহলে কেমন জামা পড়ে যাবেন? কেমন জুতো পড়বেন? আমি হাফ প্যান্ট পড়েছিলাম। জুতো খুলে হাতে নিয়েছি। এক নব দম্পতি কে দেখলাম। তাঁরা আমাদের সাথে সুন্দরবন বেড়াতে এসেছেন। নতুন বউ মনে হয় তার বিয়ের শাড়ি পড়ে এসেছেন। গায়ে অলঙ্কার। উঁচু হিল জুতো পরা। স্বামী পড়েছেন পাঞ্জাবী পায়জামা। আমার কথা হলো- সুন্দরবনের মতো একটা জায়গায় কেন বিয়ের শাড়ি পড়ে আসতে হবে? সেই নতুন বউ কাঁদার মধ্যে পড়ে যায়। স্বামী লাফ দিয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে লোকজন ব্যাপক বিনোদন পেয়েছে।
কিছু কিছু মানুষ একেবারেই বোকা হয়।
তাঁরা বুঝে না কোন জায়গায় কোন জামা পড়তে হবে। সুন্দরবনে কেউ বিয়ের শাড়ি পড়ে যায়? যাইহোক, আমি প্যাঁক কাঁদা মাড়িয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার এক চাচা কোটপ্যান্ট আর টাই পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। চোখে আবার সান গ্লাস। যে সান গ্লাসে তাকে একটুও মানায় নি। সবচেয়ে বড় কথা তার জুতোতে একটুও কাঁদা লেগে নেই। তার মুখ হাসি হাসি। কাকা বললেন, বুদ্ধি থাকলে আর কিছু লাগে না। লঞ্চের বাবুর্চির সহযোগী এক শ' টাকার বিনিময়ে কাকা কে কাঁধে করে কাঁদা পার করে দিয়েছে। এখন কথা হচ্ছে সুন্দরবনে কেন কোটপ্যান্ট আর টাই পড়ে যেতে হবে? এই সব উজবুক কারা? কোথা থেকে আসে? যেখানেই বেড়াতে যাই, সেখানেই এরকম নির্বোধ চোখে পড়ে। এদের উপর আমার অনেক রাগ হয়। অথচ এরা আমার কোনো ক্ষতি করছে না।
কয়েক বছর আগে বান্দরবান গিয়েছি।
দেবতাখুম নামে এক জায়গায়। অতি দুর্গম এলাকা। অনেকখানি পথ হেঁটে দেবতাখুম যেতে হয়। যাওয়ার পথ মসৃন নয়। মাটির রাস্তা। খানা খন্দে ভরা। কোনো রকম যানবাহন নেই। পুরো পথ হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। কখনও কাঁদা মাটি, কখনও পানি, পানিতে পাথর, পাথরে শ্যাওলা, কখনও বাঁশের সাঁকো- এক কথায় নানান রকম দিকদারির পথ। এই পথ দিয়ে যাওয়ার আগে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। এই পথ দিয়ে কাউকে একা যেতে দেওয়া হয় না। সঙ্গে গাইড নিতে হয়। যাইহোক, অনেক পথ কষ্ট করে যেতে পারলে, শেষে মিলবে 'দেবতামুখ'। খুব সুন্দর জায়গা। সুন্দর পরিবেশ। এখানে এসে মনে হবে কষ্টটা সার্থক হলো। এরকম পথে এক মেয়েকে দেখলাম লাল শাড়ি পড়েছে। শাড়িতে আবার জরি, পূতি দিয়ে নানান রকম হিজাইন করা। এই মেয়েকে আনতে বেচারা স্বামী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে- এরকম জায়গায় কেন শাড়ি পড়ে আসতে হবে?
আমি জানি মানুষ তো আর আমার পছন্দ মতো জামা কাপড় পড়বে না।
কিন্তু যারা বিয়ের শাড়ি পড়ে সুন্দরবন যাবে, পাহাড়ে উঠবে তাদের দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই শ্রেণীর নূন্যতম কমসেন্স থাকবে না? শাড়ি পড়ে কাঁদায় হাঁটা যায়? পাহাড়ে উঠা যায়? আমাদের পাশের বাসায় একলোক ত্রিশ বছর ধরে আমেরিকা থাকে। সে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসে। একবার সে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে হাফপ্যান্ট পড়ে চলে এসেছে। বিষয়টা আমাকে অনেক ভাবিয়েছিলো। শেষে আমি একবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার হাফ প্যান্ট পড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি খেয়াল করে দেখেছি, বিয়ে করার পর সংসারে বাচ্চাকাচ্চা আসার পর, বিশেষ করে পিতা নিজের দিকে আর তাকায় না। নিজেকে নিয়ে আর ভাবে না। তার মন তখন ছেলেমেয়ে আরা স্ত্রীর দিকে। অনেক বিবাহিত পুরুষরা নিজের জামা কাপড় নিয়ে সচেতন হয় না। অথচ বিয়ের আগে সেই পুরুষ কত না ফ্যাশন করেছে জামা কাপড় নিয়ে।
শেরাটন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে গিয়েছি।
খাবার সাজানো আছে। সবাই নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। আমি প্লেটে খাবার নিয়ে একে টেবিলে বসে খাচ্ছি। হঠাত দেখি আমার সামনে এক মেয়ে। মেয়েটা অদ্ভুত একটা জামা পড়েছে। আমি এই জামার নাম জানি না। আমার কোনো বোন নেই। বোন থাকলে নিশ্চয়ই এসব জামার নাম জানতে পারতাম। দেখলাম, মেয়েটার জামার পেছনে লম্বা চেন লাগানো। সেই চেইন খোলা। চেইন খুলতে খুলতে একদম নিচে নেমে এসেছে। লাল ব্রা দেখা যাচ্ছে। আমি মেয়েটাকে বললাম, আপনার জামার চেইন খুলে গেছে। দয়া করে ঠিক করে নিন। মেয়েটা আমার উপর রেগে উঠলো। আমায় অসভ্য বললো। আমি বুঝলাম না মেয়েটার এত রেগে যাওয়ার কি আছে? মেয়েটা যদি আমার বোন হতো, আমি কি আমার বোনকে বলতাম না, চেইন টা লাগিয়ে নাও। এটা বলা কি অন্যায়?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




