somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

দুষ্ট জ্বীন

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুনতে পেলাম চৌধুরী বাড়ির নতুন বউকে নাকি ভূতে ধরেছে।
একথাটা দিনে দিনে মহি্লাদের কানে মুখে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। সারা গ্রামের মানুষ সকাল বিকাল চৌধুরী বাড়িতে আনাগোনা শুরু করল। আর সন্ধ্যায় হাজার মানুষের ভীড়। নতুন বউ এর উপর জ্বীন আছড় করেছে। নতুন বউ চোখ মুখ খিচিয়ে চিৎকার করে কথা বলে। নোংরা নোংরা কথা বলছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে ভেঙ্গে ফেলছে। কেউ নতুন বউকে ধরে রাখতে পারে না। হঠাত করে তার শরীরে শক্তি বেড়ে গেছে। সামনে যাকে পায় তাকেই মারতে যায়। অশ্লীল গালা-গাল সস্মানে দিয়ে যাচ্ছে। কখনো হাসে। কখনো গুনগুন করে লালনের গান গায়। দৌড়-ঝাপের কারনে তার শাড়ির আঁচল এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজের মনে একাএকা কথা বলে। তার স্বামী কাছে এলে রাগ যেন হাজার গুন বেড়ে যায়। তেড়ে স্বামীকে মারতে আসে।

বাধ্য হয়ে এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাকে ডাকা হলো।
গর্ব করি না কিন্তু খুব অল্প সময়ে জ্বীন ভূত তাড়ানোয় আমার খুব নামডাক আছে। চৌধুরী বাড়ির নতুন বউ আমাকে দেখেই রাগে চোখ বড় হয়ে গেলো। চোখ মুখ খিচিয়ে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে লাগল। তবুও আমি কোনো ভয় পেলাম না, এরকম অনেক দেখেছি। সারা দেশে আমার অনেক খ্যাতি আছে। যাইহোক, মধ্যরাত্রে আমি উঠানে শীতল পাটি বিছিয়ে বসলাম। আমার সামনে আগরবাতি জ্বলছে, চারিদিকে সৌরভে ভরে গেছে। চৌধুরী বাড়ির নতুন বউকে আমার সামনে ধরে আনা হলো। এখন নতুন বউ এর ঘাড়ে ভূত নেই। বউ এখন শান্ত, হাসিখুশি। একজন বলল- আমাকে দেখে নাকি ভূত পালিয়ে গেছে। আমি ভীড় পাতলা করতে বললাম। নতুন বউ অজানা এক লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। এখন সে খুব শান্ত, আমি তার ঘাড়ে জ্বীন আনার ব্যবস্থা করলাম। যেনো আর কখনো নতুন বউকে জ্বালাতন না করে। মানুষকে যন্ত্রনা না দেয়, তার একটা উত্তম ব্যবস্থা আমি করবই।

আমি বিড়বিড় করে আমার সব বিখ্যাত মন্ত্রগুলো পড়তে লাগলাম।
তারপর ডাকলাম আয়...আয়... আয়রে....। তাড়াতাড়ি আয়, দেরী করিস না, তাহলে আমার খুব রাগ লাগবে। চারপাশে পিনপতন নিরবতা। আমি আবার ডাকলাম- কিরে এত দেরী কেন? তাড়াতাড়ি আয়, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে- তোর ঝামেলা শেষ করে আবার আমাকে উত্তরবঙ্গ যেতে হবে। হঠাৎ নতুন বউ এর পেছনের বেলগাছটা নড়ে উঠল। মনে হলো কেউ একজন বেলগাছ থেকে নেমে এলো। চারিদিকে নিরবতা, শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া।
নতুন বউ মুখ তুলে কথা বলে উঠল। আমায় ডেকেছেন কেন? যেন সে খুব বিরক্ত।
আমি বললাম- তোর নাম কী?
জ্বীন বলল আমার নাম জেনে আপনার দরকার কী?
আমি বললাম- সে কথা পরে, আগে তোর নাম বল। বেয়াদবি করবি না। আমি বেয়াদবি লাইক করি না।
জ্বীন বলল আমার কোনো নাম নেই।
আমি বললাম- ফাজলামো বাদ দে।
জ্বীন বলল আমি ফাজলামো করছি না।
আমি বললাম- তাহলে তুই নাম কইবি না? তুই নাম ছাড়া?
জ্বীন বলল- হুম।
আমি বললাম- তোর বাপের নামও বুঝি নাই?
জ্বীন বলল আছে।
আমি বললাম বল, তোর বাবার নাম বল।
জ্বীন বলল- আমার বাপের নাম হামবুড়া।
আমি বললাম- ভূতের বাপের নাম হামবুড়া। এ কথা প্রথম শুনলাম। আর তোর কোনো নাম নাই, না?
জ্বীন বলল- আমার নাম আছে, আমার নাম হলো- চ্যাংড়া, এই বলেই ফিকফিক করে হেসে উঠল নতুন বউ।
আমি রেগে গিয়ে বললাম- তয় তুই যে এতক্ষন বললি তোর নাম নেই। এখন কচ্ছিস চ্যাংড়া। তুই হলি একটা মস্ত বড় ফাজিল। বড় শয়তান। চ্যাংড়া তুই আমার সাথে ফাজলামো কচ্ছিস। এখন আমি তোর নামও জানি, তোর বাপের নামও জানি। আমার সাথে বাঘ-বন্দী খেলতে চাস? তোর বাপের নাম হলো রাম। আর তোর নাম কবো? না থাক।

আমি আবার দুইটা মন্ত্র পড়ে, রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে দুষ্ট জ্বীনকে বললাম- তোর বাড়ি কোথায়?
জ্বীন বলল- কোয়েকাফ নগরীতে।
আমি বললাম আচ্ছা, ভালো। ওটা তো ভূতের'ই নগরী। তুই এখানে কোথায় থাকিস?
জ্বীন বলল- নতুন বউ এর সাথে আর বেলগাছে।
আমি বললাম- তুই নতুন বউ এর ঘাড়ে চেপে অশান্তি শুরু করলি ক্যান?
জ্বীন বলল- আমি কোনো অশান্তি করি নাই হুজুর।
আমি বললাম- তুই ওর ঘাড়ে চেপে আসিস ক্যা?
নতুন বউকে আমার ভালো লাগছে।
ভালো লাগলেই বুঝি ঘাড়ে চেপে বসতে হবে? ওর স্বামী সংসার আছে না?
জ্বীন চুপ করে আছে।
আমি আবার ধমক দিতে জ্বীন বলতে শুরু করলো- ও সেদিন সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে পানি আনতে গেলো, মাথায় ছিল না ঘোমটা। বাতাসে চুল উড়ছিল-শাড়ির আঁচল উড়ছিল। তখন আমি স্মার্ট যুবক সেজে ওর চলার পথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ও আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়েছিল। আমার খুব ভালো লেগেছিল।

আমি বললাম- শোন- তুই নতুন বউ এর ঘাড়ে আর থাকবি না। বেলগাছে আর থাকবি না। এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবি। তোর স্বভাব ভালো না। জ্বীন বলল- না, আমি যাবো না। আমি থাকব। দুষ্ট জ্বীনের এই কথা শুনে আমার অনেক রাগ লাগল, আমি দিলাম এক থাপ্পড়। তারপর বললাম- তোর এই এলাকায় কোনো স্থান নেই। আর যদি না যাস, তো আমি অন্য ব্যবস্থা করবো। জ্বীন বলল- কী ব্যবস্থা করবেন জানতে পারি? আমি বললাম- তা পারিস। তোর মুরব্বিদের ডেকে বলে দিব। আর তাতেও যদি কাজ না হয়। তাহলে তোকে বোতলে বন্দী করে রাখব। এখন যা ভাগ। আর বিরক্ত করিস না।

জ্বীন বলল- আমি যাবো না। আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না বস।
আপনার অনেক কাজে লাগব আমি। আমাকে যা বলবেন আমি তাই করবো। তবু আমাকে নতুন বউ এর কাছ থেকে আলাদা করবেন না। আমি বললাম- না। নো নেভার। তোকে শেষ বারের মতন কয়ে দিচ্ছি যা চলে যা। জ্বীন বলল- ঠিক আছে, আপনি মনে রাখবেন, সুযোগ পেলে আমি আপনাকে দেখে নিবো। আমাকে যেমন এলাকা ছাড়া করেছেন, আমিও আপনাকে দুনিয়া ছাড়া করবো। আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম- দাড়া তোকে বোতল বন্দী করছি। দেখি, তুই আমার কী ক্ষতি করতে পারিস। জ্বীন কটমট করে বলল- না বস। তার আর দরকার হবে না। আমি চলে যাচ্ছি। তখন নতুন বউ অজ্ঞান হয়ে গেলো। তারপর জ্ঞান ফেরার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠল।

ভোর বেলা আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম উত্তর বঙ্গের দিকে।
যাবার আগে বলে গেলাম- বউ, ঝি, বেটি- সন্ধ্যার পরে নদীর ঘাটে, পুকুর ঘাটে না যাওয়াই ভালো। তারপর আমি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে হাঁটতে শুরু করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:২৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×