
ছেলেবেলার চারটা জিনিস আমি খুব মিস করি।
পূজোর সময়। আমার দাদা আমাকে নিয়ে বের হতেন। বহরমপুরের সব গুলো পূজা মন্ডপে যেতাম। কত না আনন্দ হতো। অবশ্য এখনকার মতো আগে এত লাইটিং ছিলো না। স্পিকারে তীব্র ভাবে গান বাজনা হতো না। ধাক্কাধাক্কি ছিলো না। সবাই ভদ্র ও মানবিক ছিলো। পূজা মণ্ডপে ঢাকঢোল বাজাতো। এটা আমি খুব উপভোগ করতাম। আর উপভোগ করতাম প্রসাদ। আমি দারুণ আগ্রহ নিয়ে প্রসাদ খেতাম। প্রতিটা পূজা মণ্ডপে কত রকমের দোকান বসতো। কত অদ্ভুত রকমের অদ্ভুত খেলনা যে পাওয়া যেতো! একটা খেলনার নাম আমার এখনো মনে আছে, ঢুগঢুগি।
তখন আমি স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলে পড়ি।
আমার দাদা ছিলো স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। বৈঠকখানা রোডে আমাদের বাড়ি। দোতলা বাড়ি। অনেক পুরাতন বাড়ি। দেখলে মনে হবে বাড়িটা যে কোনো সময় ভেঙে যাবে। অবশ্য বাড়িটা আজও ভেঙে যায়নি। মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। আমার দাদার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন মহিম কাকা। কাকা আর দাদা প্রতিদিন ভোরে হাওড়া ব্রীজে হাটতেন। এক মাথা থেকে আরেক মাথা। হাওড়া ব্রীজ আমার দারুণ পছন্দ। নীচ দিয়ে পানি যাচ্ছে, উপরে ঝুলন্ত একটা সেতু! দাদার কাছে শুনেছি এই ব্রীজের আগে নাম ছিলো রবীন্দ্র সেতু। বড় অদ্ভুত লাগতো। মহিম কাকা আর দাদা হাটতেন। আমি তাদের সাথে হেটে পারতাম না। রীতিমতো আমাকে দৌড়াতে হতো। সেই সময় ভোরবেলা ব্রীজের কাছে এক লোক মাঠা বিক্রি করতো। দাদা আমাকে মাঠা খাওয়াতেন। সেই মাঠার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।
তখন আমরা বিক্রমপুর থাকি।
ভাগ্যকুল নামে একটা গ্রাম ছিল। পদ্মা নদীর কাছেই গ্রামটা। ভাগ্যকুল ছিলো মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। কত রকমের যে মিষ্টি পাওয়া যেত! আমি দাদার সাথে যেতাম। নৌকায় করে। দাদা ছিলেন জমিদার টাইপ মানুষ। কলকাতা থেকে জামা আয়রন করে আনাতেন। দাদা খুব পান খেতেন। জর্দা আনাতেন কলকাতা থেকে। যাইহোক, ভাগ্যকুলে 'বাগাট' নামে এক ধরনের মিষ্টি পাওয়া যেতো। দারুণ মজা। অত্যন্ত সুস্বাদু। এই মিষ্টি আমি আর কোথাও পাইনি। সেই মিষ্টি আমার আজও খেতে ইচ্ছা করে। একজন বলল, ফরিদপুরে এই মিষ্টি পাওয়া যায়। গেলাম ফরিদপুর। না পাইনি। আরেকজন বলল, পুরান ঢাকার মরনচাদ এই মিষ্টি বানায়। সেখানে গিয়েও পাইনি।
আমি আজও সবচেয়ে বেশি মিস করি, নীলাকে।
নীলা আর আমি একই স্কুল পড়তাম। মিথ্যা বলে লাভ নাই, আমি নীলাকে ভালোবাসতাম। নীলা রাস্তা দিয়ে হাটলে আমার ইচ্ছে করতো বুক পেতে দেই। রাস্তার ধুলো ময়লা নীলার পায়ে লেগে যেতে পারে। নীলা আমার বুকে এসে দাড়াক। কত চিঠি যে নীলাকে লিখেছি, তার হিসাব নেই। অবশ্য চিঠিতে আমি নিজের নাম লিখিতাম না। চিঠিতে শেষে লিখতাম যুবরাজ। তাই বলে কি নীলা বুঝতে পারেনি! ঠিকই বুঝেছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, হৃদয়ের গভীর থেকে যা উঠে আসে, অন্য হৃদয়ে ঠিকই পৌছায়। আমার ভাগ্য মন্দ নীলা প্রেসিডেন্সিতে ভরতি হয়ে বদলে গেলো। এক চাপা ভাংগা কবির প্রেমে পড়ে গেলো। আরেহ নীলা আমি কি কবিতা লিখতে পারি না? কত কবিতা চাই তোমার? তুমি চাইলে সারা কলকাতা শহরের দেয়াল কবিতা লিখে ভরে ফেলতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



