
একজন মানুষের মধ্যে খারাপ দিক থাকে, ভালো দিক থাকে।
কোনো মানুষই পুরোপুরি শুদ্ধ নয়। এই সমাজে সুখী মানুষ যেমন খুজে পাওয়া যাবে না। শুদ্ধ মানুষও খুজে পাওয়া যাবে না। এই আমার নিজের মধ্যেই খারাপ দিকের অভাব নেই। অবশ্য আমি চেস্টা করি ভালো দিক গুলো দেখাতে আর মন্দ দিক গুলো লুকাতে। মানুষ সব সময় চেস্টা করে তার মন্দ দিক গুলো লুকাতে। কিন্তু পারে না। বিভিন্ন পরিবেশে মানুষের খারাপ দিক গুলো ঠিকই প্রকাশ পেয়ে যায়। ঠিক সেভাবে মানুষ তার ভালো দিক গুলোও লুকিয়ে রাখতে পারে না।
আমি কিছু মানুষের ভালো দিকের কথা বলি,
একবার দুপুরবেলা আমি কাকরাইল মসজিদের সামনে দাড়িয়ে আছি। এক রিকশাওয়ালা আর একজন যাত্রী তুমুল ঝগড়া করছে। মাত্র বিশ টাকার জন্য এই ঝগড়া। চারিদিকে মানুষ জমে গেছে। একদল রিকশাওয়ালা পক্ষে, আরেক দল যাত্রীর পক্ষে। ঝগড়া যখন মারামারি পর্যায় যাবে, ঠিক এই মুহুর্তে এক ভদ্রলোক এসে মুহুর্তের মধ্যে ঝগড়া মিটমাট করে দিলো। ভদ্রলোক রিকশা চালককে একশ টাকার একটা নোট দিলো। ঝামেলা মিটমাট হয়ে গেল। ভদ্রলোক অবশ্যই ভালো মানুষ। এই কাজটা তো আমিও করতে পারতাম। কিন্তু করি নাই। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
মানুষ বড় অদ্ভুত প্রানী।
আমার নিজের চোখে দেখা একটা ঘটনা বলি, ভোরবেলা এক ভিক্ষুক রাস্তায় দাড়িয়ে খুব কান্না করছে। ভিক্ষুকের ব্যক্তব্য তার কাছে পাচ হাজার টাকা ছিলো। কে বা কারা যেন সেই টাকা নিয়ে গেছে। এজন্য ভিক্ষুক খুব কাদছে। অভিনয় কান্না নয়। একদম বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা কান্না। নিবির নামের এক ভদ্রলোককে দেখলাম ভিক্ষুক মহিলাকে পাচ হাজার টাকা দিয়ে দিলো। আমি বেশ অবাক হলাম পাচ হাজার টাকা! নিবির ভাই ভালো মানুষ আমি জানি। ছোটবেলা থেকেই তাকে দেখছি। এই নিবির ভাই একদিন রাস্তার মধ্যে তার স্ত্রীর গলা টিপে ধরলো। স্ত্রীর অপরাধ সে কেন চটপটি খেতে চাইলো। একটু আগেই তো তাকে সতের হাজার টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনে দেওয়া হয়েছে। মানুষ বড় অদ্ভুত প্রানী।
আমার নিজের একটা ঘটনা বলি, বেশ কয়েক বছর আগের কথা।
আমি পরীবাগ রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। শীতকাল। প্রচন্ড শীত। হঠাৎ দেখি ব্রীজের নিচে এক বুড়ি মহিলা কাপছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুড়িকে দেখে ভীষণ মায়া লাগলো। বুড়িকে বললাম, আপনার অবস্থা তো গুরুতর। বুড়ি কোনো রকমে বলল, তার ইনহেলার শেষ। তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। আমি শাহবাগ থেকে একটা ইনহেলার কিনে এনে বুড়িকে দিলাম। বুড়ি খুব খুশি হলো। মাঝে মাঝে দুই একটা ভালো কাজ করে ফেলি। বিপুল আনন্দ পাই। আসলে মানুষকে খুশি করতে খুব বেশি কিছু লাগে না।
আমার বাবার একটা কথা বলি, আমাদের বাসায় এক চোর ধরা পড়লো। ভয়াবহ অবস্থা। আশেপাশের লোকজনরা বলল, মারুন মারুন। ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আব্বা চোরকে মারলো না। ভাত খেতে দিলো। চোরকে জামা কাপড় দিলো। হাতে কিছু নগদ টাকাও দিলো। বলল, চুরীটা ছেড়ে দাও। ভালো করে খুজে দেখো একটা কাজ ঠিকই পাবে। সেই চোর মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো। আব্বার সাথে দেখা করতো। আব্বার মৃত্যুর পর একবার এসেছিল। আব্বার মৃত্যুর কথা শুনে খুব কাদলো। ছেলেটা চোর হয়ে জন্ম নেয়নি। এই সমাজ তাকে চোর বানিয়েছে।
মেয়েটার নাম লাবন্য। আমরা একসাথেই পড়তাম।
এমনকি একই এলাকায় থাকতাম। লাবন্য সহজ সরল মেয়ে। প্রানবন্ত, হাসি খুশি। লাবন্য কখনো খুব সাজতো না। তার সাজ বলতে চোখে মোটা করে কাজল দিতো। আর কপালে একটা টিপ। তাতেই লাবন্যকে একদম দেবী স্বরসতীর মতো লাগতো। তার মতো দরদী ও মায়াবতী মেয়ে আমি আর দেখি নাই। আমার মন খারাপ হলেই আমি লাবন্যর কাছে ছুটে যাই। লাবন্যর সাথে কিছুক্ষণ থাকলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। লাবন্য কে বিষয় করলে নিশ্চয়ই আমার জীবন টা অন্য রকম হতো! বড় ভুল করে ফেলেছি।
আমার মুখ দেখেই লাবন্য বুঝে যায়, আমি দুপুরে খেয়েছি কিনা।
আমাকে খুব যত্ন নিয়ে খেতে দেয়। যতক্ষণ আমি খাই, আমার পাশে বসে থাকে। যেন আমার স্ত্রী। স্ত্রীদের মতো আচরণ করে। ধমক দেয়। বিনা দ্বিধায় জড়িয়ে ধরে। মাঝে মাঝে আমি আর লাবন্য ফুলার রোড থেকে হাটতে হাটতে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাই। লাবন্যর সঙ্গ আমার ভালো লাগে। লাবন্য বেশ ধনী মেয়ে। তাছাড়া ভালো চাকরি করছে। লাবন্য শুধু মাত্র আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমার সাথে সিগারেট খেতো। লাবন্য গতকাল ফোন করেছিল। সে তিব্বত বেড়াতে যাবে। আমাকে সাথে নিতে চায়। সব খরচ তার।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



