
বাঘ নিয়ে একটা ঘটনা শুনুন।
এই ঘটনা আমার নিজস্ব ঘটনা। তখন সবে মাত্র কলেজে ভরতি হয়েছি। স্কুল থেকে কলেজে ভরতি হওয়ার পরই মনে হয়, অনেক বড় হয়ে গেছি। কঠিন এক ভাব আপনাতেই চলে আসে। হাটা চলার নতুন স্টাইল রপ্ত করেছি। চুল গুলোও স্টাইল করে রেখেছি। সিগারেট খাই। মুরুব্বীদের দেখলে হাতের ফাকে সিগারেট লুকিয়ে ফেলার কৌশল পারি। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম সুন্দরবন যাবো।
তখন অল্প বয়স। সব কিছুই ভালো লাগার বয়স।
অবশ্য তখন মোবাইল ফোন ছিলো না। সদরঘাট থেকে মাছরাঙা নামের এক জাহাজে উঠে পড়লাম। বিশাল জাহাজ। তিন তলা। আমরা মোট চার জন বন্ধু। আমরা নিজেরা খুব আমোদ ফুর্তি করছি। গান গাচ্ছি। সিগারেট টানছি। জাহাজের ছাদে উঠে বুক ভরে নি:শ্বাস নিচ্ছি। নতুন একটা জার্নি, নতুন এক অভিজ্ঞতা। দুখজনক কথা হলো, টানা ৩/৪ দিন জাহাজে থাকা বিরক্তিকর। আশেপাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই চারিদিকে পানি আর পানি।
আমরা মূলত দেখব দুবলার চর, কটকা আর হিরন পয়েণ্ট।
যাইহোক, সুন্দরবন নামলাম। কাদামাটিতে পা ডেবে যাচ্ছে। আমাদের জাহাজের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে আলাদা হয়ে গেল। আমরা চার বন্ধু আলাদা হলাম না। একসাথেই থাকলাম। এবং আমাদের সাথে কোনো গার্ড নেই। তখন আমাদের অল্প বয়স। সাহস বেশি। যাইহোক, চার বন্ধু হাটতে হাটতে বনের অনেক গভীরে চলে গেলাম। দারুণ আনন্দময় সময় পার করছি। জাস্ট গ্রেট।
এতক্ষণ ঘটনার সূচনা বললাম। এবার ঘটনার উপসংহারে চলে আসছি।
সময় তখন দুপুর। চারিদিকে বেশ অন্ধকার। কারণ চারিদিকে প্রচুর গাছপালা। আকাশ দেখা যায় না। গাছের পাতার ফাক দিয়ে হুটহাট একটু আলো দেখা যাচ্ছে। কেমন গা ঝিম ঝিম করা পরিবেশ। হঠাৎ হঠাৎ নাম না জানা পাখির ডাক ভেসে আসে। অবচেতন মনে চলে আসে বাঘের ভয়। হঠাৎ যদি বাঘ আসে, তাহলে কি হবে! আমাদের সাথে গার্ড নেই। বন্ধুক নেই। আমি সাপ, কুমির, শিয়াল ভয় পাই। অবশ্য আমি সাতার জানি না। সাতার না জেনেও আমি নদী ভ্রমণে যাই।
হঠাৎ দেখি আমার বন্ধুরা আমাকে রেখেই পেছনের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
আমার খুব রাগ হলো। একসাথে এসেছি। আর আমার বন্ধুরা আমাকে রেখেই দৌড় দিলো! আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা বাঘ। অর্থাৎ আমার বন্ধুরা বাঘ দেখে দৌড় দিয়েছে অথচ একবার আমাকে বলল না। খুব রাগ হলো, খুব কষ্ট! শেষমেশ সব রাগ গিয়ে পড়লো গিয়ে বাঘের উপর। আমি রাগী চোখে বাঘের দিকে তাকিয়ে আছি। বাঘও আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আজ বাঘের খবর আছে। বাঘের কপালে দুখ আছে।
আমি চোখ মুখ খিচিয়ে বাঘের দিকে দিলাম দৌড়।
আমার চোখ মুখ খিচিয়ে দৌড় দেখে বাঘ পেয়ে গেলো ভয়। ভয়ের চোটে বাঘ দিলো দৌড়। আমি দৌড়াচ্ছি। দৌড়ে আমি ভালো। স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সব সময় দৌড়ে প্রথম হয়েছি। একটা পিরিচ পেতাম। যাইহোক, আমি দৌড়ে বাঘটাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম। কামড় দিয়ে বাঘের লেজ ধরে রেখেছিলাম। কিছু পশম আমার মুখে লেগে ছিলো। পুরো ঘটনা টা আমার বন্ধুরা দূর থেকে দেখেছে। এরপর আমার বন্ধুরা আমার নাম দেয় টাইগার। আজও ওদের মোবাইলে টাইগার লিখে আমার নম্বর সেভ করে রেখেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



