
বর্তমানে, অতীতে এবং ভবিষ্যতে যত ডিভোর্স হয়, হচ্ছে এবং হবে সবই তুচ্ছ কারনেই।
আমার পাশের বাসায় একজনের ডিভোর্স হয়েছে। ডিভোর্সের কারণ স্বামী খুব নাক ডাকে। স্ত্রী স্বামীর নাক ডাকা মেনে নিতে পারেনি, তাই ডিভোর্স। আমাদের গ্রামে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে, মেয়ে কোরানে হাফেজ। খুবই ধার্মিক। এই স্বামী পর্ন ভিডিও দেখে। স্ত্রীকে উলঙ্গ করে লাফাতে বলে। স্ত্রী স্বামীর পর্ন ভিডিও দেখা পছন্দ করে না, ফলাফল ডিভোর্স। এ-যুগে একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের সম্পর্ক দীর্ঘদিন থাকে না। বন্ধুর সাথে বন্ধুর। আত্মীয়র সাথে আত্মীয়র। অফিস কলিগ। ভাই ভাই। মায়ের পেটের ভাই, তবু সম্পর্ক থাকে না। স্বামী স্ত্রীরও সম্পর্ক থাকে না। মেয়েরা যত শিক্ষিত হবে, স্বনির্ভর হবে, ডিভোর্স তত বাড়বে। মেয়েরা আর কত মুখ বুঝে অপমান অবহেলা সহ্য করবে?
আমার এক বন্ধুর বড় ভাই সাতটা বিয়ে করেছে এবং সাতটাই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
সাতটা বিয়েতে আমি ছিলাম। বন্ধুর ভাই সৌদি থাকে। সৌদি থেকে দুই বছর পরপির দেশে এসে বিয়ে করে। এক দুই বছর সংসার টিকে, তারপর ডিভোর্স। এখানে সুমন ভাইয়ের কোনো দোষ নেই। দোষ সুমন ভাইয়ের মার। সুমন ভাই আবার মায়ের অন্ধ ভক্ত। সুমন ভাইয়ের ডিভোর্স হওয়ার কারন, তার মা বলতো তুই বিদেশ থাকিস, তুই কিছুই জানিস না। তোর বউ ভালো না। অনেক দোষ আছে। ফলাফল ডিভোর্স। অথচ আমি জানি মেয়ে গুলোর কোনো দোষ নেই। গরীব ঘরের মেয়ে, বয়স অল্প। গ্রাম থেকে এসেছে। সুমন ভাইয়ের মা বাংলা সিনেমার মতো ভয়ংকর শ্বাশুড়ি। ছেলের বউকে অনেক অত্যাচার করতো। মানসিক যন্ত্রণা দিতো।
আমার আপন চাচার ডিভোর্স হয়ে গেলো।
চাচী ভালো ছিলেন। আমি চাচীকে লাল চাচী বলে ডাকতাম। চাচী চাচাকে ডিভোর্স দিলেন। কারণ আমার চাচা কামকাজ কিছুই করতেন না। যারা কাজকাম করে না, তাদের আমাদের গ্রামের ভাষায় বাদাইম্মা বলে। অথচ আমার চাচা খুব ভালো মানুষ। মানবিক এবং হৃদয়বান মানুষ। আমার আপন ফুপু তার স্বামীকে ছেড়ে দিলেন এবং এক ব্যাংকের কর্মকর্তাকে বিয়ে করলেন। অথচ ফুপুর দুটা বড় বড় ছেলে। ফুপু যাকে বিয়ে করলেন তারও এক ছেলে এক মেয়ে। ফুপু ফুপাকে ডিভোর্স দিলেন কারন, ফুপার ইনকাম কম। ইনকাম কম কথা সত্য, কিন্তু ফুপা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। ফুপার সাথে আমার আজও যোগাযোগ আছে। সংসার মানে শুধু সেক্স নয়। অনেক দায়দায়িত্ব। অনেক সহ্য ও ধৈর্য।
মেয়েরা যত সচেতন হবে ডিভোর্সের সংখ্যা তত বাড়বে এই সমাজে।
একজন শিক্ষিত মেয়ে মুখ বুঝে অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবে না। ডিভোর্স কোনো সমাধান নয়। মূলত আমাদের সমাজে প্রেম ভালোবাসার বিয়ে গুলো টিকে না। গভীর প্রেম ভালোবাসা থাকার পর বিয়ে করে। ছয় মাস একবছর পর ডিভোর্স। এখন প্রতিদিন এক হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়। ছেলে মেয়ে উভয়ই মেনে ও মানিয়ে নিতে জানে না। সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই ছাড় দিতে হয়। ছাড় দিতে না জানলে সংসারে শান্তি থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা যোগ্য ও দক্ষ হবার আগেই যারা বিয়ে করে, তাদের সংসার টিকে না। বিয়ের বয়স হয়েছে বলেই কেন বিয়ে করতে হবে? আগে টাকা পয়সা ইনকাম করা শিখতে হবে। সংসারে অভাব। আর্থিক সমস্যার কারনে আমাদের দেশে ডির্ভোস বেশি হয়।
বিশ ত্রিশ বছর সংসার করার পরও সংসার ভেঙে যায়।
এমন উদাহরণও আছে অনেক। আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ এবং প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। এজন্য বিয়ে করার আগে অনেক চিন্তা ভাবনা করে বিয়ে করা উচিৎ। আবেগের বশে বিয়ে করলে কপাল পুড়বে। আবেগের বশে বিয়ে করা, বিরাট বোকামি। আমাদের নবীজি অনেক গুলো বিয়ে করেছেন। কিন্তু নবীজি তার কোনো স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন নাই। নবীজি ধনী ডিভোর্সি মহিলাদের বিয়ে করতেন। হোক বয়স্কা। তাতে কোনো সমস্যা নেই। স্ত্রীর সম্পদ থাকলেই হলো। নবীজি দরিদ্র ছিলেন। এরমধ্যে নবীজি কামকাজ কিছুই ছিলো না। এজন্য নবীজি স্ত্রীর সম্পদ নিজের করে নিতেন।
আমি নিজের চোখে দেখেছি, স্বামী স্ত্রীকে মারছে।
খুব মারছে।এরপর চিৎকার করে বলছে- আমি তোরে তালাক দিলাম। তালাক তালাক তালাক। তিন তালাক। বাইন তালাক। স্ত্রী খুব কান্না করছে। মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্না। বাংলা সিনেমাতেও এরকমটা দেখেছি। এই রকম বিশ্রী ভাবে তালাক যে শুধু দরিদ্র শ্রেনীর মধ্যেই হয়, সেটা না ধনী শ্রেনীতেও এইভাবে তালাক হয়। তালাক যদি নিতেই হয়, ভদ্রভাবে নেওয়া যেতে পারে। অযথা হাউকাউ, মারামারি আর গালাগালির প্রয়োজন কি? সবচেয়ে দু:খ লাগে স্বামী স্ত্রী দুজনের দুজনের জন্য ভালোবাসা আছে, তবু তালাক হয়ে যাচ্ছে। তালাক না হোক, দুজন মিলে সুখে শান্তিতে সহবাস করুক, বসবাস করুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



