চলছে শীতকাল।
চলছে বাংলা 'মাঘ' মাস। তারিখ হচ্ছে নয়। এ বছর আমি শীতের জামা পড়ি নাই। প্রতিদিন ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছি। সকালের দিকে ঠান্ডা থাকে, তবু শীতের জামা পড়ি নাই। আবার মাঝে মাঝে অনেক রাতে বাসায় ফিরি, তখনও শীতের জামা পড়ি নাই। গতকাল রাতে বাসায় ফিরেছি দেড় টায়। বেশ ঠান্ডা ছিলো। সিএনজি'তে বসে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করলাম। কাওরান বাজারের কাছে কিছুটা জ্যাম ছিলো। সারারাত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় বড় ট্রাকে করে সবজি আসে। রাতে বাসায় ফিরতে আমাকে সমস্যা করে কয়েকটা কুকুর। ঠিক আমাদের বাসার কাছে ৫/৭ টা কুকুর শুয়ে বসে থাকে। গলিতে ঢুকলেই আমার কলিজা কাঁপে। মনে মনে ভাবি কুকুর গুলো যদি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে! কিছুদিন আগেও আমাদের বাসার সামনে কোনো কুকুর ছিলো না। আমাদের পাশের বাসার এক মেয়ে প্রতিদিন কুকুর গুলোকে খাবার দেয়। এখন কুকুর গুলো গলিতে আস্থানা গেড়েছে।
গতকাল রাতে বাসায় ফিরে দেখি সুরভি গভীর ঘুমে।
এদিকে আমার ক্ষুধা পেয়েছে। বেচারি আরাম করে ঘুমাচ্ছে, তাই ডাক দিতে ইচ্ছা করছে না। এখন খাবার গরম করে খাওয়ার ইচ্ছা আমার নাই। কে করে ঝামেলা। আমি ফারাজার পাশে শুয়ে পড়লাম। তখন রাত দুইটা। আমার ঘরে একটা জিরো পাওয়ারের নীল বাতি আছে। রাত যত বাড়ে ডিমলাইটের আলো তত বাড়ে। ঘুমের মধ্যে হঠাত দেখলাম ছোট কন্যা ফারাজা হাসছে। ঘরের নীল আলোতে আমার মনে হলো এত সুন্দর দৃশ্য আমি আমার জীবনে দেখি নাই। আমার মনে হলো- লাইফ ইজ বিউটিফুল। আমি ঘুমন্ত কন্যার কপালে চুমু খেলাম। কন্যা ঘুমের মধ্যেই দুবার 'বাবা' 'বাবা' বলে ডান পাশ ফিরলো। আমার মনে হলো- আমার দীর্ঘদিন বেচে থাকা দরকার। অন্ততপক্ষে মেয়েটা অনার্স-মাস্টার্স না করা পর্যন্ত। আমি মরে গেলে কন্যা আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারবে না। শুনেছি, জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আল্লাহ কি আমাকে বেচে থাকতে দিবেন? দুনিয়াতে যা ভালো হয়, সেটা আল্লাহর জন্য। আবার দুনিয়াতে যেটা খারাপ হয় সেটাও নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ভালোর ভাগ নিলে, খারাপের ভাগ কেন নিবেন না?
শীতের এই সময়টায় সবজি বেশ সস্তা যায়।
২০ টাকা দিয়ে একটা বড় ফুলকপি পাওয়া যায়। চল্লিশ টাকা দিয়ে এক কেজি টোমেটো পাওয়া যায়। ৩০/৪০ টাকা কেজিতে আলু পাওয়া যাচ্ছে। শীতের শুরুতে আমি এই বিশ টাকার ফুলকপি কিনেছি ৮০ টাকা দিয়ে। টোমেটো কিনেছি ৩শ' টাকা কেজি'তে এবং আলু কিনেছি ১৪০ টাকা কেজি। তবে দেশী বিদেশী ফলের দাম বেড়েই চলেছে। দুটা বড় সাইজের সোনালী মূরগী এক হাজার টাকার কমে পাওয়া যায় না। গরুর মাংস এখন ৭৫০ টাকা। খাসীর মাংস ১২শ' টাকা কেজি। একটা আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছ ১৫/১৬ শ' টাকা। চাউলের দাম বেড়েছে। আমি খাই হাস্কি নাজির। সুন্দর ঝরঝরে ভাত হয়। হাস্কি নাজির এখন ৯০/৯৫ টাকা কেজি। কিছুদিন আগেও ৮০ টাকা করে কিনেছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও কিছু করার নাই। খেতে হবেই। এজন্য ২২০ টাকার আপেল ৩৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। এই আপেলের যদি এক হাজার টাকাও কেজি হয়, তবুও আমাকে কিনতে হবে। কারন আমার কন্যার আপেল খুবই পছন্দ।
অনেক বছর আগে সুরভিকে একটা প্রেমপত্র লিখেছিলাম।
কি লিখেছিলাম আজ আর তা মনে নেই। তবে দারুন আবেগ দিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। সেই চিঠি সুরভি কোথা থেকে খুজে বের করেছে। আবার নতুন করে পড়েছে। হেসেছে, কেঁদেছে। সংসারের চাপে পড়ে সুরভি আর আমার যে কত শত গল্প আর সৃতি সেসব ভুলতে বসেছিলাম। সুরভি আর আমি গত পরশু সারারাত ছাদে ছিলাম। সুরভি এক ফ্লাক্স চা বানিয়েছে। সাথে চানাচুর আর বিস্কুট। এই শীতের রাতে আমি আর সুরভি আমাদের অতীত দিনের গল্প বলেছি, হেসেছি আবেগে আপ্লুত হয়েছি। সারারাত গল্প করতে করতে দুজন পার করে দিয়েছি। আমাদের প্রথম দেখা, প্রথম হাতে হাত রাখা। কি দারুন সময়ই না পার করেছি! সুরভিকে বললাম, মনে আছে তোমার- এরকম এক শীতের রাতে তুমি আর আমি সারারাত কীর্তনখোলা নদীতে এমভি মাছরাঙা লঞ্চের ছাদে ছিলাম। দুজন পাশাপাশি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। অথচ মনে মনে কত কথা হয়ে যাচ্ছিলো!
প্রতিদিন দেশে কত কি ঘটে যাচ্ছে!
পত্রিকা পড়লে আমার মেজাজ খারাপ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গাছে ঝুলে আছে একটা লাশ। কে বা কারা করলো এই কাজ? যা কোনোদিন জানা যাবে না। অথচ এই কাজ যারা করেছে তাদের গ্রেফতার করা কঠিন কিছু নয়। ভারতের সিনেমার এক নায়ককে ছুরি দিয়ে মেরেছে। যে মেরেছে সেই লোক নাকি বাংলাদেশের। আজিব! ভারতের পুলিশ নিশ্চয়ই বানোয়াট কোনো কাহিনী তৈরি করেছে। সমন্বয়করা মারামারি করছে! বৈষম্যবিরোধীরা খুব চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছে। এদিকে বরিশালের চরমোনাই সাহেব দাওয়াত দিয়েছেন জামাতের আমিরকে। আওয়ামীলীগ না থাকাতে দুষ্টলোকদের যেন ইদের খুশি। কারাগার থেকে সমস্ত আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারতে আগুনের গুজবে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আরেক ট্রেনের ধাক্কায় ১০ জনের মৃত্যু। সারাদিন কত রকম গুজব- ফেসবুক, টিকটক আর ইউটিউবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুন লেগেছে। সেই ভয়াবহ আগুন কিছুতেই নিভছে না। কি হচ্ছে দেশ বিদেশে বুঝে আসে না। গতকাল থেকে একটা চালু গুজব হলো- নাসা আসমানে জিকির শুনেছে। ফেরেশাতারা আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:০৭