somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত না চাইলে বাংলাদেশ আগ্রহী হবে না বন্ধুত্বে

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত না চাইলে বাংলাদেশ আগ্রহী হবে না বন্ধুত্বে

মুনতাসীর মামুন

সাইবার ওয়ার শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের হ্যাকারদের মধ্যে। থি"এক্সপায়ারথি" সাইবার আর্মি নামের একটি বাংলাদেশী হ্যাকারগোষ্ঠী ভারতের সাত শতাধিক ওয়বেসাইট হ্যাক করেছে বলে খবরে দাবি করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, ‘ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস লিখেছে, তারা এই হ্যাকিং উৎসব উদযাপন করছে। ভারতীয় হ্যাকারগোষ্ঠীর সদস্য অ্যাসেল ইন্ডিয়া ভয়ে সাইবার বিশ্ব ছেড়ে গেছে। তাই আমরা বলতে পারি, এই সাইবার-যুদ্ধে ভারতের পরাজয় হয়েছে।’ বাংলাদেশী হ্যাকার পরিচয় দানকারীরা বলছেন, বিএসএফ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও অত্যাচার বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশী হ্যাকাররা এই সাইবার-যুদ্ধ শুরু করেছেন। টিপাইমুখ বাঁধসহ অন্যান্য বিষয়ের কথাও তারা বলছেন। (যায়যায়দিন ১৫ ফেব্রæয়ারী ২০১২)
আপাতদৃষ্টিতে খবরটি আমোদজনক বা কৌতূহলোদ্দীপক। আমার কাছে বিষয়টি আমোদজনক মনে হয়নি। এর ভিত্তি ভারত সরকারের প্রতি অনাস্থা। তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু তা ঘৃণায় পরিণত হলে বিপদ। একইভাবে লক্ষ্য করছি যারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী ছিলেন তারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন আবার অবনতির দিকে যাচ্ছে। সরকারে সরকারে অবনতি হলেও তেমন কিছু আসে যেত না, কিন্তু এখন তা মানুষে মানুষে অবনতি হতে যাচ্ছে। এবং এ জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত সরকার। ভারতের নীতিনির্ধারক, আমলাকুল এবং এলিট সমাজের মাঝে একটা ধারণা জন্মেছে, ভারত এখন একটা শক্তি, সে যা খুশি তাই করতে পারে। ভারত একটা শক্তি বটে তবে যা খুশি তাই করার ক্ষমতা ভারতের নেই। এটি এখনও একমাত্র আমেরিকার আছে। এ বিশ্ব পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের চারপাশের রাষ্ট্রগুলো নীতিগতভাবে কোন কিছু করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হলে ভারতকে হাঁটু গেঁড়ে বসতে হবে।
১৯৭১ সালের আগে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ছিল শত্রæতাপূর্ণ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ছিল ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্বর্ণযুগ। ১৯৭৫ থেকে পরবর্তী ২৫ বছর দু’দেশের সম্পর্ক কখনও উষ্ণ ছিল না। এর একটি কারণ ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চরম ভারতবিরোধী [প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে আঁতাতে আগ্রহী] সরকার ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত বিষয়গুলো ১৯৭৫ সালের পর কোন সরকারই নিষ্পত্তি করতে পারেনি।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও ভারতে কংগ্রেস সরকার এলে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়। ১৯৭১ সালের পর ২০০৯ সালে সে সুযোগ আবার ফিরে এসেছিল। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ প্রবল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেটসম্যানের মতোই এগিয়ে এসেছিলেন। ভারতও সাড়া দিয়েছিল এবং অনেক অমীমাংসিত বিষয়ে স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
আমরা আশাবাদী ছিলাম এ ভেবে যে, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নত হলে উপমহাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, মানুষ উপকৃত হবে। তবে আশঙ্কাও ছিল। কারণ, ভারতে কেন্দ্রের সরকার দুর্বল এবং ভারতে আধিপত্য বিস্তারকারী আমলাতন্ত্র পাকিস্তানীপন্থী বা প্রো-পাকিস্তানী। এখন দেখা যাচ্ছে আশঙ্কাটাই সত্যি হচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য সমঝোতা হয়েছিল। এক বছর পার হওয়ার পরও দেখা গেল কোন বিষয়েরই নিষ্পত্তি হচ্ছে না বরং সদিচ্ছার নিদর্শন¯^রূপ বাংলাদেশই সমঝোতার বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে। যেমন, পালাটানায় বিদ্যুত জেনারেটর পাঠাবার বন্দোবস্ত করা, নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও। এ নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলো তখন মনমোহন সিং ঘোষণা করলেন, বাংলাদেশে আসবেন এবং সাতরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে। তখন আশাবাদ আবার জেগেছিল কিন্তু সেই সফর নিয়ে যে নাটক হলো তা কূটনৈতিক ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকবে অভব্যতার উদাহরণ হিসেবে।
মনমোহন সিংহের সফরের আগে ভারত জানিয়েছিল, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হবেই হবে, টিপাইমুখের মীমাংসা হবে, সীমান্তে গুলি বন্ধ হবে ইত্যাদি। আমরা সবিস্ময়ে দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আস্ফালন! ভারতের মতো ব্যবস্থায় এ রকমটি হতে পারে তা ছিল আমাদের ধারণার বাইরে। ভারতের একজন রাজনীতিবিদ তাদের প্রধানমন্ত্রীর গালে চড় মারলে আমাদের তাতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু ভারতের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণ্ণ হয় তা বলাইবাহুল্য। সীমান্তবর্তী বাকি ছয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শুধু ভব্যতার নয় তারা যে পড়শির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষভাবে আগ্রহী তাও প্রকাশ্যে বলেছেন এবং পরবর্তীকালে দেখা যাচ্ছে সে অনুযায়ী কাজও করে যাচ্ছেন।
মনমোহন সিং দেশে ফিরে গেলে যখন সবাই অপেক্ষা করছেন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তখন পত্র-পত্রিকায় জানা গেল টিপাইমুখ বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের উপকারে আসবে না অপকারে আসবে তা পরের বিষয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কিছু হলে আগে বাংলাদেশকে জানানো হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে জানতে পারল পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে। ওয়েবসাইট থেকে এবং বেশ কিছুদিন পর ভারত জানাল, বাঁধের কাজ হবে। তাহলে প্রশ্ন জাগে মনমোহন সিং কি আদৌ কিছু করার ক্ষমতা রাখেন?
ইতোমধ্যে বার বার খবর ছাপা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে বলেছেন, কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশকে ২৫ ভাগের বেশি পানি দেয়া হবে না। শুধু তাই নয় ছিটমহল বিনিময়ও হবে না। এই যদি মনোভাব হয় তা হলে ধরে নিতে হবে কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে স্বাধীন কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আলোচনারও বা কী দরকার?
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। আমাদের ধারণা ছিল, ভারতে দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে ফলে সেখানে আমলাদের ভূমিকা গৌণ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আসা-যাওয়া করে, সেখানে আমলা প্রাধান্য হ্রাস সময়ের ব্যাপার। পাকিস্তান আজীবন বিশেষ করে সামরিক আমলাদের অধীন। সে কারণে এর ভবিষ্যত অন্ধকার। কিন্তু, বিভিন্ন ঘটনায় আমরা এখন ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছি। পাকিস্তান বর্তমান সিভিল শাসনকে রাজনীতিবিদরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণে চেষ্টা করছেন। আমলাতন্ত্রের বিশেষ করে সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য খর্বে তারা যথেষ্ট সক্রিয় এবং দানব হিসেবে পরিচিত সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য যথেষ্ট খর্ব শুধু নয় তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলাম কারণ সত্যিকার অর্থে আমরা তাঁকে নিরন্নদের প্রতিনিধি মনে করি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম তিনি ১/১১ এর আমলাতন্ত্র দ্বারা ঘেরাও, সামরিক আমলারা আইয়ুব আমলের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মেট্টো রেলের স্টেশন এবং পথ বদলানো এর প্রধান উদাহরণ। ক্ষেপে ক্ষেপে আমলাদের সন্তুষ্ট করার জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ। একটি উদাহরণ দিই। বিএনপি-জামায়াত আমলে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী সমর্থকদের ওপর দমনের যে স্টিমরোলার চালু হয়েছিল। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে তা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন যথাযথভাবে কাজ করতে পারেনি ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে। সেই রিপোর্ট শুনেছি জমা দেয়া হয়েছিল কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কারণ তাতে বিএনপি-জামায়াতের অনেকের এবং ঐ আমলের অনেক আমলার ক্ষতি হতে পারে এই ভেবে। না হলে, রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? হয়নি দেখেই জামায়াতীরা আবার হাটহাজারীর মতো ঘটনা ঘটাতে সাহস পায়। এবার ভারতীয় আমলাদের কথা শুনুন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বহুল আলোচিত বিষয়। আমরা বিষয়টিকে একদিক থেকে বিচার করি। প্রশ্ন হচ্ছে, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়া অন্যায়। সেটি কি অ¯^ীকার করা যাবে? সুতরাং, এই অন্যায় কাজে বাধা দেয়া হবেই। আসলে মূল বিষয়টা হলো অর্থ। প্রধানত গরু পাচারের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করা হয়। এবং চোরাচালানীদের দু’পক্ষকেই অর্থ দিতে হয়। অর্থ নিয়ে ঝামেলা হলে রক্ষীরাও ঝামেলা করে। ধরে নিলাম এ অনুমান মিথ্যা। ভারতীয়দের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি আছে যা দিয়ে তারা অন্ধকারে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়াটা দেখতে পারে, বাংলাদেশ রক্ষীদের কাছে সে উপায় আছে কিনা জানি না। তবে আলোচনার মূল বিষয় হলো গুলি না চালানো। অন্য উপায় আছে। রাবার বুলেট আছে। গ্রেফতার করা যেতে পারে। এটি কী নাৎসি জগত যে মানুষ মাত্রই গুলি করতে হবে। গরু স্মাগলার তো টেররিস্ট নয়। নিরস্ত্রের ওপর গুলি চালায় তো পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশ রক্ষীরা তো গুলি করে না। এ নিয়ে তিক্ততা বহুদিনের। ভারতীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম বললেন, কোন অবস্থাতেই গুলি করা হবে না। হবে না, হবে না। এর কয়েকদিন পর বিএসএফের প্রধান ইউকে বনসাল বিবিসিকে বললেন, “সীমান্তে গুলি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধমূলক কাজ হতে থাকবে, ততক্ষণ সেই অপরাধ আটকাতেই হবে বিএসএফকে। সেটাই এই বাহিনীর দায়িত্ব।”
ভারতের মতো দেশে জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিপরীতে যিনি তার প্রধান এ কথা বলতে পারেন তা অচিন্ত্যনীয়। অনেক আগে, নীতিগত মতভেদের জন্য ভারতীয় সেনাপ্রধান কারিয়াপ্পা যখন পদত্যাগ করতে চাইলেন, তখন নেহেরু বলেছিলেন, এ ব্যবস্থায় পদত্যাগ নয় তাকে বরখাস্ত করা হবে। বনশালের এই উক্তির পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ্য নেয়া হয়নি। এতে বোঝা যায়, সরকারী নির্দেশেই বনশাল এ কথা বলেছেন অথবা আমলাতন্ত্র ভারতে এখন এতই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে, রাজনীতিবিদদের কথার কোন মূল্য নেই।
এখানেই গল্পের শেষ নয়। দুই প্রধানমন্ত্রী সে সব বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন তার একটিও কার্যকর হয়নি, শুধু একটি ছিটমহলে দরজা খোলা রাখার বন্দোবস্ত ছাড়া। হয়ত আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীরা এখন এত শক্তিশালী যে, রাজনীতিবিদরা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। অথবা কেন্দ্র এত দুর্বল যে তার ¯^াধীন কোন সত্তা নেই।
বাংলাদেশে স্পষ্টতই ভারতের প্রতি আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীরা ভারতের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার। যারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছিল তারাও দেখছে সব কিছু একতরফা হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তারাও নিষ্ক্রিয়। প্রথমে যে সাইবার যুদ্ধের কথা তুলেছিলাম এর কারণও এই ক্ষোভ। ইতোমধ্যে যারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাচ্ছিলেন তারাও ক্ষুব্ধ। ভিসা থেকে স্থলপথে সীমান্ত পাড়ি দেয়া দুটোই অকারণ হ্যারাসমেন্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে যাবেন ভারত। এক সপ্তাহ হন্যে হয়ে অনলাইনে ভিসার তারিখ যোগাড় করতে পারলেন না। অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে মন্ত্রণালয়ের চেষ্টাই ভিসা পাওয়া গেল। দুঃখ করে তিনি লিখেছেন ‘পুরো বিষয়টি থেকে আমি নিশ্চিত হলাম যে, ভারত এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের তাদের দেশে ভ্রমণকারী হিসেবে দেখতে চায় না। আমরা ঐ দেশে ব্যবসা করি সেটিও ভারত চায় না। বাংলাদেশের মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করার যে অপচেষ্টা ভারত অব্যাহত রেখেছে তার মাঝে ভিসাও রয়েছে । বিগ ব্রাদার ডিক্টেটরশিপের বদৌলতে আমরা যেমনি পানির হিস্যা পাই না, ছিটমহল পাই না বা সীমান্তে গুলি খাই, বিএসএফের হাতে নির্যাতিত হই তেমনি করে সাধারণ ভিসা পাবার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আমি ঠিক জানি না, এতে ভারত নিজের ক্ষতিটাই বেশি করছে কিনা। একজন ভারতীয় দোকানি মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের মানুষরা না এলে মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট বা নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসাবাণিজ্য এবং পুরো ভারতের হাসপাতালগুলোর কি হবে? ভারতের দূতাবাসকে ভারতীয় সেই দোকানির কথাটি বিবেচনা করতে হবে।’ জনকণ্ঠ ১২.২.১২
এ মনোভাব এখন মোস্তফা জব্বারের নয়, অনেকেরই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর মনে হয়েছিল আমরা জিতেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধে জিতেছি বটে কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ নীতিনির্ধারক ও মানুষের মানসিকতা বদলানো যায়নি। ভারতের আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে প্রধানত উত্তর ও দক্ষিণ ভারত। এদের একটি বড় অংশের ঘরবাড়ি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। এদের টান পাকিস্তানের প্রতি। এছাড়া তারা জানে পাকিস্তান ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং সব মিলে এক ধরনের পাকিস্তান পোষণ নীতি তারা অবলম্বন করে। নাকি বলব, আইএসআই সেখানেও প্রবল। অন্যদিকে বাংলাদেশে দু’জন সামরিক প্রেসিডেন্ট যারা পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে পরিচিত তারাও পাকিস্তানের প্রতি সমব্যথী একটি আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদ সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানই জয়ী।
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে না চাইলে বাংলাদেশের তেমন কিছু আসে যায় না। ভারত বাংলাদেশের বাজারের ওপর নির্ভরশীল, আমরা কিছু খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভরশীল মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের সেবাখাত সম্পূর্ণভাবে এখন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মানুষ যদি একমাস কলকাতা না যায় তা হলে মমতা ব্যানার্জির এত উচ্চকণ্ঠ থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তো আমরা দেখেছি। বাংলাদেশে এত অস্থিরতার পরও প্রবৃদ্ধির হার ৬ ভাগের বেশি, এটা ভারতীয়রা ভুলে যান। বাংলাদেশ চীনের একান্ত মিত্র হতে চাইলে চীন তা লুফে নেবে। ভারত পানি আটকাতে চায়, চীন যদি ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দেয় এবং বাংলাদেশ নেপালসহ অন্যরা যদি তা সমর্থন করে তখন আমেরিকা কী বাঁচাতে আসবে? শেখ হাসিনা না থাকলে, আগের মতো সমস্ত ভারভীয় বিদ্রোহীদের ঘাঁটি করতে দিলে ভারতের সামরিক ব্যয় কত বাড়বে? শুধু তাই নয়, ঐ সব অঞ্চলে এক ধরনের সামরিক শাসন কেন্দ্রের প্রতি রাজ্যগুলোকে বিদ্রোহী করে তুলবে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের ছয়টি রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কে আগ্রহী। বাংলাদেশেরও উচিত সে আগ্রহে সাড়া দেয়া। কেন্দ্র বেশি হস্তক্ষেপ করলে সেটি বুমেরাং হতে পারে। সীমান্তবর্তী একটি রাজ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি মূর্তি স্থাপন করতে চেয়েছিল, কেন্দ্র তাতে বাধা দিয়েছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তাই বলব, যথেষ্ট করেছেন। চুপচাপ থাকুন। আপনার দায় আপনি পালন করেছেন। বাংলাদেশের কোন সমস্যা নেই এতসব বলার পরও বলব, ভারতের নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখুন কোন্ পথে চলবেন। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান কেউ সন্তুষ্ট নয় ভারতীয়দের প্রতি। এটি যদি ভারতীয়রা না বুঝে তাহলে বলতে হবে তারা এখন মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।

লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×