বর্তমান সরকারের নেয়া নানা কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য মাতৃমৃত্যুর হার কমানো। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার হার তাই বেড়েছে তুলনামূলকভাবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে এ হার আরও বেশি। সচ্ছলদের পাশাপাশি দরিদ্র নারীদের মধ্যে এ সেবা নেয়ার হার লক্ষ্যণীয়।
বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১০ থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার এক লাখে ১৯৪ জন। অর্থাৎ এক লাখ জীবিত শিশুর জš§ দিতে গিয়ে ১৯৪ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। ২০০১ সালে এ হার ছিল ৩২২। গত এক দশকে মাতৃমুত্যু ৪০ শতাংশ কমেছে। প্রতিবছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মাতৃমৃত্যু কমছে।
গবেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতের কিছু ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে মাতৃমৃত্যু কমছে। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এবং কম গর্ভধারণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মাতৃমৃত্যু নিয়ে দেশে প্রথম জরিপ হয়েছিল ২০০১ সালে। তখন দেশে মোট টিএফআর ছিল ৩ দশমিক ২। সে তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ২২ শতাংশ। ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে ১৪৩ করার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি-৫) অর্জনে এটি সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত এক দশকে সরকারের কিছু উদ্যোগ মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে আছে ৫৯টি জেলা হাসপাতাল ও ৬০টি মাতৃ ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে জরুরি প্রসূতিসেবা চালু। এছাড়াও ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি, মোবাইল ব্যবহার, শিক্ষা, সচেতনতা ও আয় বৃদ্ধি মাতৃ মৃত্যু কমাতে বিশেষ অবদান রেখেছে। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে কর্মীদের সক্রিয়তাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সরবরাহ করে এসব মাঠকর্মীদেরকে আরও গতিশীল করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু ও প্রশিক্ষিত ধাত্রী তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে মাতৃমৃত্যুর হার অনেকটা কমে আসবে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এটি কিন্তু কম সাফল্য নয়। বর্তমানে এ সচেতনতার হার গ্রামে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং শহরে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের আর্থিক সহায়তায়- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর জরিপ অনুযায়ী টিএফ-আর (প্রজনন হার) বর্তমানে ২ দশমিক ৫। বাংলাদেশের এ সাফল্যে জাতিসংঘ অভিনন্দন জানিয়েছে। এ হার কমানোর জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আরও আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ।
মাতৃমৃত্যু হার কমে যাওয়াতে আমাদের খুশি হওয়ার কথা। এ হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ জন্য সবার মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতাবোধ বাড়াতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



