somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডি এইচ তুহিন
নিজের সম্পর্কে বলার মত তেমন কিছুই এখনও অর্জন করতে পারি নি। যে দিন নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু একটা অর্জন করতে পারবো সেই দিন বলবো আমিও কিছু একটা

অসমাপ্ত গল্প

১৮ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ছিল ২০০৮ সালের ১৮শে জানুয়ারি সকাল ৭টা যাচ্ছিলাম ইংরেজির শিক্ষকের কাছে ইংরেজি দীক্ষা নিতে যদিও ইংরেজির এ টু জেট আমার মুখুস্ত I mean to say A2Z only মুখুস্থ আর কিছুই না। কোন রকম টেনেটুনে পাশ করা ছাত্রদের যতটুকু ইংরেজি জানা দরকার ততটুকুই পারি আর কিহ এক কথায় ইংরেজিতে ব ল দ যাকে বলে। যাই হোক নিজের মুখে নিজের গুনোগান আর কত করবো বাদ দিন। যা বলছিলাম সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোন রকম ফ্রেশ হয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে রওনা দিলাম মাস্টার্স সাহেবের বাসার দিকে মাঝ পথে দেখা হলো নিজুমের সাথে। নিজুম আমাদের ক্লাসেই পড়ে যদিও এক বছরের জুনিয়র ছিল এখন সে আমার লেভেলে চলে আসছে। পুরো ক্লাসে নিজুমই ছিল এক মাত্র বন্ধু। তাই সে আমার সাথে তুই তোকারি করেই কথা বলে। ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছি। আবার নিজুম হচ্ছে আমাদের স্কুলের লাভ গুরু। প্রেম বিষয়ক সমস্যার সমাধানের জন্য সবাই নিজুমকে নাড়া দেয়। খুবই ভাল ছেলে যথেষ্ট হেল্পফুল ট্রিট ছাড়া কিছুই নেয় না। মূল কথায় আসা যাক। নিজুমের সাথে হালকা আলাপচারিতা অর্থাৎ কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞাসা করলাম আমার প্রাণ প্রেয়সির সারাহ-র কথা। বললাম আমি সারাহকে প্রোপোজ করবো ব্যবস্থা করে দিতে। আমি একটু অবাক হলাম নিজুমকে কথা বলার সাথে সাথে নিজুম হেল্প করার জন্য রাজি হয়ে গেল। রাজি শুনেই আমি ডুক গিললাম আজ বুঝি সত্যি সত্যি প্রোপোজ করতেই হবে? নিজুম আমাকে বললো- "কোচিং শেষ করে স্কুলে আয় এক্সাম(সেদিন আমাদের এক্সাম ছিল) শেষ হওয়ার পর তুই স্কুলের পেছনে চলে আসিস আমি সারাহকে নিয়ে ঐখানে থাকবো। তুই এসে তোর দিল কি বাত বাতা দে না মেরে দোস্ত"। আমি মাথা নেড়ে কোচিং-এর দিকে পা বাড়ালাম।

সারাহকে প্রথম দেখেছিলাম আমাদের স্কুলে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে টেস্টে খারাপ করার পর আবারও দশম শ্রেণিতে এডমিশন নিলাম। জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করার মোটেও ইচ্ছে ছিল না আমার তাই প্রায় দুইমাস স্কুলের নাম দিয়ে বের হয়ে এদিক সেদিক আড্ডা দিতাম বেড়াতাম। পাড়ার দোকানে জ্বলন্ত অক্সিজেনের পেছনে টাকা পোড়াতাম। একদি যেই জ্বলন্ত অক্সিজেনে টানটা দিলাম সামনে চলে এলো আব্বুর বন্ধু দেখেই দিলাম দৌড়। সেদিন সন্ধ্যার পর গিয়েছিলাম বাসায়। বাসার দরজায় কড়া দিয়েই দরজা খুলে দিল আব্বু। দেখলাম সব স্বাভাবিক আছে কেউ কিছুই বলছে না। টিনের চালে কাক আমি তো অবাক। তাহলে নিশ্চয়ই আব্বুর বন্ধু অর্থাৎ আংকেল কিছুই বলে নি। উনাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।
পরদিন সকালে স্কুলের যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে বের হচ্ছিলাম আব্বু পেছন থেকে ডাক দিলো,
-এই দাঁড়া, একা যাস নে আমিও যাব তোর সাথে।
-কেন আব্বু? তুমি কেন যাবা?
-তোর স্কুলের বেতন দিবো আর তোর স্কুল হেড মাস্টারের সাথে একটু কথা আছে।
-কি কথা?
-কিছু ফার্নিচারের অর্ডার দিবেন।
-আচ্ছা চল।
সেদিনই প্রথম টেস্টের পর স্কুলে পদার্পণ আমার। আব্বু আমাকে ক্লাস রুমের সামনে দিয়ে উনি হেড মার্স্টারের রুমে ডুকলেন। আমি ক্লাস রুমে ডুকে সবার পেছনে গিয়ে একটা খালি সিটে বসে পড়লাম। মাথাটা ব্যাগের উপর রেখে চিন্তা করছিলাম আব্বু হেড মাস্টার সাহেবকে কি নিয়ে কথা হচ্ছে মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছিলাম আজ বোধ হয় পিঠের চামড়া একটাও থাকবে না। স্যার তো নিশ্চিত বলে দিবেন আমি এতো স্কুলেরি আসি নি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম চলে এসেছে বুঝতেই পারি নি। ঘুম ভাংলো একটি মিষ্টি কণ্ঠে। কণ্ঠ শুনে উঠে সামনে তাকাতেই দেখলাম একটি মেয়ে তার বান্ধবিদের সাথে দুষ্টুমি করছে। ঐ মেয়েটিকে দেখার পর চারদিক সাদাকালো হয়ে গেল মেয়েটিই শুধু রঙ্গিন।( গল্প বা সিনেমায় এরকম হয় এটা স্বাভাবিক) আমি মেয়েটিকে দেখে হারিয়ে গেলাম। মেয়েটিকে নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্নে চলে গেলাম। স্বপ্ন থেকে ফিরে এলাম নিজুমের ডাকে।
-ঐ কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি? জেগে জেগে -ঘুমাচ্ছিস নাকি?
-আরেহ না ঘুমাচ্ছি না, আচ্ছা দোস্ত ঐ মেয়েটা কে রে?
-কোনটা?
-ঐ যে ফাস্ট ব্যঞ্চের ডান দিকে বসা মেয়েটা...
-ও ঐটা?
-হুম
-ও তো সারাহ। কেন?
-মনে লাগছে। ঐ মেয়ের সাথে প্রেম করমু দোস্ত ব্যবস্থা কর।
-কি কস তুই সিরিয়াস নাকি?
-একদম সিরিয়াস।
-আচ্ছা করিস।
-তুই ব্যবস্থা করবি।
-ওকে করে দিবো।
সেদিনই সারাহকে প্রথম দেখি সেই দেখায় প্রেমে পড়ি। তারপর থেকে প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর তাকে দেখার জন্য স্কুলের পেছনে অপেক্ষা করতাম। সে যেখানে যেতো আমি সেখানে যেতাম। তাকে এক নজর দেখার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম এভাবে এক বছর কেটে গেল।

এসব ভাবছিলাম আবার এক্সাম দিচ্ছিলাম। সেদিন ছিল ম্যাথ এক্সাম। আমি মোটামুটি ম্যাথম্যাটিকস এ খুবই ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম তাই ম্যাথ এক্সাম দিতে আমার বেশি ভাল লাগতো ব্রোরিং ইংরেজির চেয়ে ম্যাথ আমার কাছে হাজারগুনে ভাল ছিল। মোটামুটি পাশ মার্কের আনসার করে বেরিয়ে গেলাম। ভয়ে ছিলাম নিজুম আমার আগে না বের হয়ে যায়। আমি ওর আগে এক্সাম শেষ করে বের হয়ে পালাতে চাইছিলাম কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমি যেইই স্কুল গেইট দিয়ে বের হবো ঠিক তখনই পেছন থেকে আমার শার্টের কলার টান দিয়ে ধরে আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড নিহাল,
-কি রে কই যাস?
-না কোথাও না আছি
-শুনলাম আজ তুই সারাহকে প্রপোজ করবি?
-তোরে কে বলছে?
-আর কে বলবে, তোর উকিপ বাপ বলছে।
-সালার
-চল স্কুলের পেছনে যাই।
-না রে দোস্ত আমি খুব নার্ভাস দোস্ত। আমি যাবো না। চল বাসায় চল। প্রপোজ অন্য একদিন করবো।
-শালা পুরা একবছর ঐ মেয়ের পেছনে ঘুরছিস এখনও নার্ভাস? চল আজকেই করবি। নিজুম সেজন্য আমাকে আসতে বলছে তুই যেন পালাতে না পারিস।
- ভাই না আমার লক্ষী প্লিজ এমন করিস না।
-কোন কথা নাই চল।
আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল স্কুলের পেছনে। কিছুক্ষন পর নিজুম কল দিল। দেখলাম মেয়েটিকে নিয়ে নিজুম আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে কাট হয়ে আছে। নিজুম আর মেয়েটি সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর নিজুম আর নিহাল আমাদের দাঁড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-সারাহ আমার নাম নিশ্চয়ই জানো?
-নাহ
-সত্যি জানো না?
-নাহ আজকেই তোমাকে প্রথম দেখলাম।
-আমি রবিন তোমাদের সাথেই পড়ি।
-তাই নাকি? কোন স্কুলে পড়?
-ওমা আমরা একি স্কুলে একি ক্লাসে পড়ি তুমি আমাকে দেখো নি কোন দিন?
-স্কুলে আসলেই তো দেখবো। জীবনে কোনদিন ক্লাসে আসছ বলে তো মনে হয় না।
-অবশ্য তাও ঠিক, আচ্ছা বাদ দাও। তোমাকে নিজুম কিছু বলছে?
-কি ব্যপারে?
-নাহ
-এখানে কেন আসছ তাহলে?
-আমাকে নিজুম নিয়ে আসছে। কেন কি কারনে কিছুই বলে নি।
-ও আচ্ছা।
-আর কিছু বলবে?আমি বাসায় যাবো।
-হা বলবো।
-কি বলবা বল?
-আমি তোমাকে পছন্দ করি।
-মানে?
-মানে তুমি তোমাকে পছন্দ করি।
-সরি এটা সম্ভব না।
-কেন?
-আমি তোমাকে চিনি না জানি না আন্দাজি এসে বলবা আর আমি রাজি হয়ে যাবো?
-তুমি সময় নাও।
-সরি ভাই সময় নেওয়ার কিছু নাই। আমি পারবো না।
-ভাই বলবা না।
-কি বলবো?
-বাপ-মা গরু জবাই দিয়ে আকিকা করে নাম রাখছে রবিন ইউ ক্যান কল মি রবিন।
-শোন আমার কিছু বলার দরকার নাই। তুনি পছন্দ করলে কর আমি এসব জানি না। আমার পক্ষে কোন রিলেশনে যাওয়া পসিবল না। তুমি ভাল থাক সুস্থ থাকো আল্লাহ হাফেজ।
এটা বলে মেয়েটা দৌড়ে চলে গেল। আমি সেখানে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলাম...
(চলবে)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×