somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্তন্দ্রিমা(রূপকথা নয়)

২০ শে মে, ২০২০ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে বাসায় ফিরেই সুমন ল্যাপটপ ব্যাগটা রেখে, ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পড়লো বিছানায়। খুবই ক্লান্ত লাগছে, ইদানিং অফিসে ভীষন কাজের চাপ, মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে ইচ্ছে করে চাকরীটা ছেড়েই দিবে। কিন্তু নতুন চাকরীর ব্যবস্থা না করে ছাড়তেও পারছে না আবার অনেক দিনের চাকরী মায়া জমে আছে অসিফের সব কলিগ ও বন্ধুদের প্রতি, সেই মায়াও ছাড়তে পারে না এই চাকরী। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অফিসের এইসব কথাই চিন্তা করছিল সুমন। হঠাৎ ফাল্গুনী আওয়াজ শুনতে পেল সুমন। রান্নাঘর থেকেই সুমনকে জিজ্ঞাসা করলো চা খাবে কি না। সুমন হা সূচক উত্তর দিয়ে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সুমন দেখলো ফাল্গুনী চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফাল্গুনীকে বললো পত্রিকা নিয়ে আসতে। সুমন প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই পত্রিকা পড়ে, দিনে কাজের চাপ থাকে তাই পড়া হয় না। ফাল্গুনী পত্রিকা দিয়ে আবারও রান্নাঘরে চলে গেল। সুমন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকায় চোঁখ বুলাতে লাগলো। পত্রিকার পাতা উল্টানোর সময় ভেতরে একটা খাম দেখতে পেয়ে সুমন, ফাল্গুনীকে জিজ্ঞাসা করে কিসের খাম ফাল্গুনী খুলে দেখতে বলে। খুলে দেখতেই সুমন অনন্দে গড়াগড়ি দেওয়ার মত অবস্থা, দৌড়ে ফাল্গুনীর কাছে গিয়ে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিতে থাকে।
.
-তুমি আমাকে আগে বলনি কেন?
-বললে তুমি এতো খুশি হতে না তাই।
-অবশ্যই হতাম, কেন হব না।
-আমি জানি হতে না।
-হতাম হতাম হতাম, বল তুমি কি চাও।
-কিছু না।
-না আজ তুমি যা চাইবে তাই দিব।
-আমার কিছু লাগবে না।
-না চাইলেও দিব। আচ্ছা মা জানে?
-হুম জানে রিপোর্ট নিয়ে এসেই মাকে জানিয়েছি।
-আমি যাই মিষ্টি নিয়ে আসি।
-মিষ্টি লাগবে না।
-লাগবে আমি যাই।
.
আলতো করে ঠোটে চুমু দিয়ে সুমন মিষ্টির দোকানের দিকে পা বাড়ালো, যাওয়ার আগে মায়ের রুমে গিয়ে সালাম দিল। সুমন অনেক খুশি সে বাবা হতে যাচ্ছে আর মাত্র কয়েকমাস তাদের ঘর আলোকিত করবে নতুন সদস্য। সুমন এখনই মনে মনে স্থির করে নিয়েছে মেয়ে হলে নাম দিবে তন্দ্রিমা আর ছেলে হলে তুর্য। মিষ্টির দোকানের সব চেয়ে ভাল ও দামী মিষ্টি নিয়ে বাসায় যায় সুমন। সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে সবাই একসাথে রাতের খাবার খেয়ে শুতে গেল, ফাল্গুনী হাতের কাজ শেষ করে রুমে আসে দুজনে গল্পগুজব করে শুয়ে পড়ে।
.
পরদিন সকালে সুমন অফিস গিয়ে কলিগদের মিষ্টি খাওয়ায়, সবাই সুমনকে শুভকামনা জানায়, কিছুক্ষন পর সুমনের নিকটতম বন্ধু ও কলিগ তৈমুর সাহেব রুমে এসে নক দিল..
-সুমন সাহেব আসতে পারি?
আরে তৈমুর সাহেব এ আবার নক নিতে হয় নাকি আসেন আসেন।
-হা হা হা, সুমন সাহেব অনেক অনন্দ হচ্ছে আপনার খুশির সংবাদ শুনে। বলে বোঝাতে পারবো না।
-ধন্যবাদ তৈমুর সাহেব।
- আপনাকে কিছু কথা বলতে এলাম সবার সামনে তো সবকিছু বলা যায় না।
-sure বলেন।
- সুমন সাহেব আসলে কথা না, আমার প্রতিবেশীর কথা আপনার সাথে শেয়ার করবো।
-হুম বলেন শুনি।
- মাসখানেক আগে আপনার মত আমার প্রতিবেশি ফারুক সাহেবের ঘরেও একই রকম খুশির বন্যা ভাসছিল, কারন ফারুক সাহেবের ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট ছিলেন, ফ্যামেলির সবাই অনেক খুশি ছিল, কিন্তু হঠাৎ একদিন মাঝ রাতে ভাবির পেইন উঠে তারা সবাই হতভম্ভ হয়ে পরে, কি করবে বুঝতে পারছিল না। দ্রূত এম্বুলেন্স কল দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন, ডাক্তার বললেন সিজার করাতে হবে যতদ্রুত সম্ভব রক্তের ব্যবস্থা করেন।
.
সুমন সাহেব পুরো না শুনেই জিজ্ঞাসা করে....
.
-কি বলেন, তারপর কি হল? ব্লাড গ্রুপ কি ছিল?
- ব্লাড গ্রুপ ছিল ও নেগেটিভ।
-ওহ এটা তো খুবই রেয়ার গ্রুপ?
-হুম অনেক।
-তারপর কি হল?
-রাত তখন প্রায় দুই কি আড়াইটা বাজে। ফারুক সাহেব পাগলের মত ব্লাড ব্যাংকের দিকে ছুটতে শুরু করলেন। কিন্তু ইদানিং কি আর ব্লাড ব্যাংকে রক্ত পাওয়া যায় ভাই বলেন?
-ঠিক আইডিয়া নেই, আমার কখনও রক্তের প্রয়োজন পরেনি তো, পাওয়া যায় না মনে হয়, পুরোনো বাংলা সিনেমায় দেখেছিলাম। কখনই পাওয়া যেত না।
-হুম..
-তারপর কি হল বলেন না তৈমুর সাহেব।
-উনি কোথাও ব্লাড খুজে না পেয়ে আমাকে কল দিলেন তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। আমার ব্লাড গ্রুপের সাথে যদিও মিল ছিল না, তাও আমি উনাকে ভরসা দিলাম ব্লাড ম্যানেজ হবে চিন্তা না করতে, আমি আমার ছোট ভাই মাসফিকে কল দিলাম, ঘুম ছিল মনে হয় বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পর কল রিসিভ করে, সে জানায় তার একটা ফ্রেন্ড আছে, তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।
-যাক তাহলে রক্ত পাওয়া গেল।
-হুম পাওয়া গেল কিন্তু..
-কিন্তু কি?
-কিন্তু তারা আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
-কেন? আপনার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ড ব্লাড দেয়নি?
-হুম সেই ছেলেও ঘুম ছিল তাই মাসফিক ওর বাসায় গিয়ে নিয়ে আসছিল, ওরা যখন আসছিল তখন ঘড়ির সময় প্রায় পাঁচটা। ডাক্তার রক্ত ছাড়া অপারেশন করতে পারছিল না, তারা যাওয়ার সাথে সাথে OTতে নেওয়া হয় অপারেশন শেষ ডাক্তার বলেন শুধু মাকেই বাঁচাতে পারছেন কিন্তু বাচ্চাকে বাঁচানো গেল না। প্রচুর রক্তক্ষরন হচ্ছে তাই আরও দুইব্যাগ ব্লাড লাগবে, মাসফিকরা আরও দুইজন ডোনার ম্যানেজ করে, অবশেষে মায়ের জীবন বাঁচাতে পারে কিন্তু ফারুক সাহেবের অনাগত সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ইহলোক ত্যাগ করে।
-ওহ গড...
-সুমন সাহেব শুধুমাত্র রক্তের কারনে ফারুক সাহেব তার সন্তানহারা হয়। যদি উনি আগে থেকেই অন্তত দুইজন রক্তদাতার ব্যবস্থা করে রাখতেন তাহলে উনার ভবিষৎটা অন্যরকম হতে পারতো। অবশ্য পরে জানা গেছে উনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই দুইজন ও নেগেটিভ।
-সেদিন রাতে তারা ব্লাড দিল না কেন?
-কিভাবে দিবে উনাদের কেউই তো জানতো না। ফারুক সাহেবের আরও একটা বোকামি ছিল উনি নিজের আত্বীয়দের ব্লাডগ্রুপই টেষ্ট না করেই শুধু ব্লাড ব্যাংকে দৌড়েছেন।
-হুম বুঝলাম।
-একটু সচেতনতার অভাবে উনাদের এমন দিন পার করতে হচ্ছে, এখনও তারা সেই শোক থেকে বের হতে পারেনি।
-হুম তৈমুর সাহেব আপনার প্রতিবেশির গল্প শুনে আমার অনেক কিছুই শিখা হল, আজই আমি আমার সকল ফ্রেন্ডের বলে রাখবো এবং অবশ্যই রক্তের ব্যবস্থা করে রাখবো...
-জ্বী কমপক্ষে দুইজন।
-দুইজন তো অবশ্যই। কার জীবনে কখন কেমন ঝড় বয়ে যায় তার তো কোন ঠিক নেই।
-জ্বী, সুমন সাহেব তাহলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আগে থেকেই নিয়ে রাখবেন ভাবির জন্য। আর একটা কথা, আমি কোন ভাবেই কামনা করবো না আপনার জীবনে কোন প্রকার দূর্ঘটনা ঘটুক। আচ্ছা সুমন সাহেব আমি তাহলে আসি। রুমে যাই অনেক কাজ জমে আছে...
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি কিছুক্ষন পর আসছি আপনার রুমে একসাথে চা খাব।
-আচ্ছা আচ্ছা।
.
তৈমুর সাহেবকে হাসিমুখে বিদায় দিলেও সুমন এখন মহা চিন্তায় পড়ে গেল, ফাল্গুনীর ব্লাড গ্রুপ এবি নেগেটিভ, সে কোথায় পাবে। পরিচিত কারও আছে বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু সে ফারুক সাহেবের মত ভূল করবে না। ফাল্গুনী তার অনেক কষ্টে অর্জিত ভালবাসা, তার চোঁখে সে কখনই অশ্রুজল দেখতে পারবে না। চিন্তা করতে করতে সে তার বন্ধু মানে আমাকে কল দিয়ে রক্তেরগ্রুপ জানতে চায়। আমি তাকে বলি আমার রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ, আমি রক্ত দিব এবং আমার একটা পরিচিত বড় ভাই আছে উনার রক্তের গ্রুপও এবি নেগেটিভ , উনিও দিবেন যদি প্রয়োজনে। সুমন এখন অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়।
.
কয়েকমাস পর সুমন ও ফাল্গুনীর ঘরে ফুটফুটে একটা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহন করে। মা ও বাচ্চা সুস্থ আছে আর রক্তের প্রয়োজন হয়নি নরমাল ডেলিভারি হয়। বাবুর নাম রাখে তন্দ্রীমা। তন্দ্রীমা আসার পর তাদের সংসার আরও সুখের হয়ে উঠে।
(রিপোষ্ট)
--------------------- সমাপ্ত----------------------
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২০ রাত ১২:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×